আইনের শাসন ছাড়া দেশ চলতে পারে না ॥ প্রধান বিচারপতি- ১৮তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন

 আইনের শাসন ছাড়া দেশে গণতন্ত্র চলতে পারে না। যারা বিচার প্রার্থী অথচ গরিব মাসে অন্তত: দু'একদিন আইনী সহায়তা দেয়ার জন্য তিনি আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান। দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
বঙ্গভবনে দেশের ১৮তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়ে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন নব নিযুক্ত প্রধান বিচারপতি ফজলুল করিম। সংবর্ধনা অুষ্ঠান শেষে খাস কামরায় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গেও খোলামেলা কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি দেশবাসীর দোয়া চাই। যাতে দেশে আইনের শাসন বজায় রাখতে সমর্থ হই। এর পর প্রধান বিচারপতি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সাংবাদিকদের কাজটি সৎ ও মহৎ। আমার অনুরোধ থাকবে রায় হওয়ার পর লিখবেন। বিচারাধীন মামলার বিষয়ে লিখলে জজ ও বিচারপ্রাথর্ীদের অসুবিধা হয়। তাই মামলার রায়ের পর লিখবেন, মামলা চলাকালীন ফিচারও লিখবেন না। ভাল কাজের জন্য সাংবাদিকরা বড় ভূমিকা রাখবে। এটা আমাদের (বিচারপতিদের) এবং জনগণের প্রত্যাশা।
বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠন প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের অনেক প্রত্যাশা আছে। কিন্তু নুন আনতে পানত্মা ফুরায়। ২ বছর ২ মাস হলো পৃথকীকরণ হয়েছে। আলাদা সচিবালয়ের ব্যাপারে কাজ করতে পারিনি। নানা চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে এখন এখানে এসেছি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। সকলের দায়িত্ব হবে ভূখ-কে রৰা করা। অভীষ্ট লৰ্যে পেঁৗছতে হলে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও সহায়তা প্রয়োজন।
এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সংবর্ধনা সভায় বলেন, আপনি সাংবাদিকদের কাছে সম্পদ বিবরণী প্রকাশ করার যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তাতে আমরা খুবই উৎসাহ বোধ করছি। গত কয়েক বছর আগেও আমাদের এ প্রাঙ্গণে ধারনা বিচার করত যে, বিচারপতিরা দায়বদ্ধ তার বিবেকের কাছে। এ উক্তিটি আমার কাছে বায়বীয়। আপনি শপথ নিয়েছেন সংবিধানের অধীনে। এ সংবিধানে সপ্তম অনুচ্ছেদ আছে এ প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। ফলে আমার মতে সাংবিধানিক পদে যারাই অধিষ্ঠিত হবেন তাদের দায়বদ্ধতা থাকবে জনগণের কাছে। এবং সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সম্বন্ধে বিশেষ কিছু তথ্য জানার অধিকার জনগণের আছে।
সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএফএম মেজবাহউদ্দিন বলেছেন, আপনার বিচারক জীবনের কর্মকা-ে আপনার সাহসী ভূমিকা এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আপনার মহান অবদানের কথা দেশবাসী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। তিনি বলেন, আপনার বিচারকার্যের উলেস্নখযোগ্য বিষয়ের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার হাইকোর্ট ডিভিশনের তৃতীয় বিচারপতি হিসেবে আপনি যে ১২ জনের আত্মস্বীকৃত খুনীর ফাঁসির আদেশ অনুমোদন করেছিলেন পরবতর্ী সময়ে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ আপনার প্রদত্ত রায়ই বহাল রেখেছে। আপনার এই ন্যায় বিচার জাতি চিরকাল স্মরণ করবে।
সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি সমিতির নির্বাচিত সম্পাদক ছিলেন। তাই আপনার কাছে এই সমিতির দাবিও অনেক। বর্তমানে বারের সদস্য সংখ্যা পাঁচ হাজার। বর্তমান সরকার ৰমতায় আসার পর বারের সম্মানীত সদস্যদের সুবধিার জন্য একটি বারভবন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। সে লৰ্যে ২০ কোটি টাকা অনুমোদন করেন। আমাদের প্রত্যাশা এই বিষয়ে আপনি অতি দ্রম্নত অনাপত্তি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। একই সঙ্গে কোর্ট প্রাঙ্গণে মাজারের সামনের রাসত্মা প্রশসত্ম করে আরও একটি প্রবেশপথ বের করে আইনজীবীদের যাতায়াতের দুর্ভোগ কমাতে আপনার হসত্মৰেপ কামনা করছি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ১নং বিচারকৰে প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
এর আগে সকাল সোয়া ১১টায় প্রধান বিচারপতি হিসেবে মোহাম্মদ ফজলুল করিম শপথ গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ জিলস্নুর রহমান প্রধান বিচারপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করান। শপথবাক্য অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান ও বিচারপতি লতিফুর রহমান, বিদায়ী প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলাম, মন্ত্রীপরিষদের সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, ডেপুটি স্পীকার, সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকগণ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সচিব, সিনিয়র আইনজীবী ও উর্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম আব্দুল আজিজ এ শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

No comments

Powered by Blogger.