নতুন বছরের পোশাক ভাবনা
সবেমাত্র নতুন বর্ষ আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে। নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলো আরেকটি নতুন বছরের। পথচলা এই নয়া বছরের অগ্রগতি যেন সঠিকভাবে সামনে এগিয়ে যায় তার জন্যও ছিল আকর্ষণীয় সব আয়োজন।
মনে হয় নতুনকে নতুনরূপে বরণ করলে বা সাদর সম্ভাষণ না জানালে পুরোনটাই আঁকডে থাকবে। তাই তো উৎসমুখর পরিবেশে গোটা দুনিয়ার মানুষের পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষও একত্মতা ঘোষণা করে, বর্ষবরণ করে নিয়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তরুণদের আবেশী বা আনন্দঘন চিন্তা-ভাবনা। তারা ২০১৩-কে বরণ করে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটছে নতুন পোশাক সংগ্রহ করার জন্য। ধরনা দিচ্ছে বিভিন্ন পোশাক হাউসে। প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে, তরুণ ছেলেমেয়েরা তাদের নিজ নিজ চাহিদার পোশাকটি নতুন বছর উপলক্ষে সংগ্রহ করছে। এছাড়াও প্রিয়জনকে উপহার হিসেবে কোন্ পোশাকটি দেয়া যায় সেদিকেও খেয়াল রাখছে। সব কিছ্রু মধ্যে আগ্রহের যে মাত্রা দেখা দিচ্ছে তার প্রধান কারণ নতুন বছরের সূর্র্য পূর্ব আকাশে উদিত হয়েছে। নিষ্পাপ, নিশর্তভাবে দোল খেয়ে পৃথিবীতে রোদের মিষ্টি আবহ তৈরি করে আবার অস্তমিত হচ্ছে। পুনরায় আবির্ভূত হচ্ছে নির্দিষ্ট ঐ জায়গায়। সূর্যের এই সদাসত্য ঘটনাপ্রবাহের মতো আজকের তরুণ প্রজন্মও নতুন বছরকে সদা সত্যকরে রাখতে উদগ্রীব। তারা নতুন পোশাকের আবরণ গায়ে জরিয়ে জানান দিতে চায় আমরাও প্রস্তুত.......!পোশাক হাউস আড়ংয়ের ম্যানেজার আবুল হাসনাত বলেন, ছেলেমেয়েদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে নতুন বছরের শুভ সূচনাকে আরও সমৃদ্ধ করতে বছরের প্রথম থেকেই নতুন কিছু পোশাক তৈরি করা হয়েছে। যা সহজেই ফ্যাশনপ্রিয় ছেলেমেয়েদের নজর কাড়বে। বাহারি ডিজাইন সংযুক্ত করার পাশাপাশি রঙের দিকেও এবারের পোশাকে বাড়তি নজর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কারণ এখন ছেলে বা মেয়ে শুধু তাদের নিজের পছন্দকেই প্রাধান্য দেয় না, তারা চায় যেন অন্য কেউ বা পাশের মানুষটির দৃষ্টি আমার দিকে থাকে। ফ্যাশনেবল তরুণবয়সীরা তাদের শরীরের সঙ্গে মানিয়ে-বেছে নেয় সবচেয়ে আকর্ষণীয় পোশাক, যাতে স্মার্টনেসটা বৃদ্ধি পায়। সঙ্গে দেখতেও যেন লাগে সৃষ্টিশীল বলেন হাসানাত। ছেলেমেয়ের কথা মাথায় রেখে আড়ং নতুন বছরে বাজারে এনেছে শার্ট, যা কটন, সিল্ক ও এনডি-সিল্কের ওপর তৈরি। হাফ বা ফুলহাতা দুই ধরনের মধ্যে ১৫-১৭ টি ডিজাইন এবং ৪০টির বেশি রঙের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। মেয়েদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ও বৈচিত্র্যময় স্যালোয়ার-কামিজ, টপ, থ্রিপিছও আছে। এর প্রত্যেকটিই বিভিন্ন কাজ দ্বারা অত্যন্ত নান্দনিকভাবে তৈরি। স্যালোয়ার-কামিজে কারচুপি করা বিভিন্ন স্বাদে; যা অতি আকর্ষণীয় এবং দৃষ্টি কাড়বে খুব সহজেই। বাড়িয়ে দেবে মনের আনন্দকে বহুগুণ। সঙ্গে নতুন বছরে যুক্ত হবে হাতের ও মেশিনের কাজের কারুকাজ খচিত শরীরে মোড়ানো রঙিন পোশাকটি।
ফ্যাশনহাউস রূপমেলার স্বত্বাধিকারী মোঃ শাহিন বলেন, বর্তমানে যে জিনিসটি বেশি পরিলক্ষিত হয় তা হলো তরুণ-তরুণীদের মধ্যে একটা আয়েশী ভাব। তারা নানান রকম চিন্তাভাবনা করতে থাকে শুধু তাদের পরিধেয় পোশাকটি নিয়ে। কারণ গর্জিয়াস লুক থাকতে হবে নিজের ব্যক্তিসত্তার সঙ্গে। সঙ্গে তারা চিন্তা করে যেন আরামপ্রদ ও অভিজাত পোশাক পরে নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে পারি। সৌন্দর্য বৃদ্ধির উপায়-উপকরণ যেমন পোশাকের ধরন, বৈচিত্র্য, রং, ডিজাইন সবই আজ তাদের জানা। যথারীতি এসব ছেলেমেয়ের কথা ভেবে এবার নতুন বছরে, শীতের আবেশে তৈরি করছে কিছু পোশাক, যা মেয়েদের জন্য বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কারচুপি করা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী স্যালোয়ার-কামিজ। সঙ্গে থাকছে মেশিনে এমব্রয়ডারির কিছু কাজও, যা অনায়াসে ক্রেতার চাহিদা পূরণে যথেষ্ট ভূূমিকা রাখবে। এগুলো কটন ছাড়াও মসলিন কাপড় সংযোজিত। ৭টি ডিজাইন ও ১০-১২টি রঙের সংমিশ্রণ। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রথমত ক্রেতার চাহিদা লক্ষ্য করি। তারপর তাদের মতামত গ্রহণ করি। এমনকি তাদের মতামতের ওপর বেজ করে সংশ্লিষ্ট উপায়ে নিজস্ব কারখানায় ঘরোয়া পরিবেশে এসব পোশাক তৈরি করে থাকি এবং পরবর্তীতে ক্রেতার পরিবেশে এই পোশাক তৈরি করে থাকি এবং সরবরাহ করি। এ বছর আমরা যেসব পোশাক নতুনরূপে সাজিয়েছি তা যেকোন আবহাওয়ায় পরার উপযোগী। একটু পাতলা কিন্তু উলেন কাপড়ের তৈরি হয় ফলে পরতে বেশি সাচ্ছন্দ্য পাওয়া যায়, বলেন শাহিন। এছাড়া বাজারে নতুন পোশাকের নতুন মাত্রা বাড়িয়ে দিতে, নতুন বছরের শুরুতেই আলাদা অথচ ম্যাচিং করে পরার মতো ভিন্ন স্টাইলের পোশাক এসেছে। এই ভিন্নতা শুধু শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই তৈরি। যেমন ব্লেজারের সঙ্গে মানিয়ে পরার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে শার্ট, টি-শার্ট এবং হাফশার্ট যা পুরোপুরিভাবে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতেই বাজারে এসেছে বলে মনে করেন ‘কৃষানীর’ বিক্রয় প্রতিনিধি সেলিম।
যেহেতু শীতকাল চলছে, তাই শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে প্রয়োজন বাড়তি কিছু কাপড়; সেটা হতে পারে জ্যাকট, ব্লেজার বা চাদর। এগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিচে পরার জন্য কিংবা বর্ষবরণের যে কোন ধরনের অনুষ্ঠান, পার্টিতে পরে খুব সহজেই মানিয়ে নেয়া যায়। অর্থাৎ শরীর ও মনের গতিশীলতা বয়ে আনবে শীতের কাপড়ের সঙ্গে ম্যাচিং করে অনায়াসে নিজের পছন্দের হাল্কা, উজ্জ্বল রঙের পোশাকটি অতিদ্রুত তা নিবারণ করবে।
ফ্যাশনেবল রমরমা, রকমারি, বাহারি ধরনের পোশাকের বাইরেও পোশাক হাউস তারা মার্কা একটি ভিন্নধর্মী পোশাক বাজারে এনেছে। সামনে বিশ্বকাপ ক্রিকেট! চলছে চারদিকে নতুন বছরের হইচই। সবকিছু মিলেই তারার এই আয়োজন। তারা মার্কা বাজারে এনেছে বিভিন্ন ধরনের ক্রিকেট জার্সি; যা নিজস্ব হাউসে তৈরি এবং জার্সিগুলোতে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের সকল খেলোয়াড়ের নাম তালিকার ওপর ভিত্তি করে, যা খুব সহজেই ক্রয় করে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আগমনকে স্বাগত জানানো যাবে।
কোথায় পাবেন/দাম: ছেলেমেয়েদের পোশাক আড়ৎয়ের আউটলেটে পাওয়া যাবে। দাম ছেলেদের হাফ-ফুল হাতা শার্ট ৫৯৯-১৫৩৫ টাকা। মেয়েদের ১,৫০০ থেকে ৭,০০০ টাকা।
রূপমেলায় মেয়েদের পোশাকগুলোর দাম ৬০০ থেকে ৪,০০০ টাকা। কৃষানীতে ছেলেদের ব্লেজারের দাম ১২৫০ টাকা। বিশ্বকাপ ক্রিকেট জার্সি শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে তারা মার্কার শোরুম থেকে ক্রয় করা যাবে। দাম ১৬০-১৮০ টাকা।
শেখ মিলন
ছবি : আরিফ আহমেদ
No comments