অনুপস্থিত সংসদ সদস্যদের ভাতা, পারিশ্রমিক কেটে নেয়া প্রয়োজন- টিআইবি প্রতিবেদন
কার্যপ্রণালী বিধি লঙ্গন করে সংসদে অনুপস্থিত থাকলে সংসদ সদস্যদের নির্ধারিত পারিশ্রমিক ও অন্যান্য ভাতা আনুপাতিকহারে কেটে নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন দেশের অধিকাংশ মানুষ।
তাদের মতে, বছর শেষে সংসদ অধিবেশন ও স্থায়ী কমিটির সভায় প্রত্যেক সদস্যের উপস্থিতির হারও প্রকাশ করা দরকার। রবিবার সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত 'সংসদ সদস্য আচরণ আইন ২০১০ : কী এবং কেন' শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠকে সংসদ সদস্যদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বৈঠকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সংসদ সদস্যদের জন্য একটি আচরণ বিধি প্রণয়নের ওপর জোর দেন আলোচকরা। তাঁদের মতে, মানুষের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সংসদ সদস্যদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে হবে।গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, জনগণ সংসদ সদস্যদের নিজ এলাকায় অবস্থান দেখতে চান। তাদের প্রত্যাশা মাসে অনত্মত তিনদিন সংসদ সদস্যরা এলাকায় থাকবেন। সংসদে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি, অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা, দলীয় নেতাদের তোষামোদী, গঠনমূলক নয় এমন নেতিবাচক সমালোচনা, সংসদ বর্জন এবং সংসদের বাইরে হরতাল-ধর্মঘট-অবরোধের মতো সংঘাতের রাজনীতি সংসদ সদস্যদের কাছে একেবারেই প্রত্যাশা করেন না জনসাধারণ। আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা সম্প্রতি জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বিল 'সংসদ সদস্য আচরণ আইন ২০১০' দ্রম্নত পাসের দাবি জানিয়ে বলেন, এ বিল পাস হলে গণতন্ত্র চর্চার পথ সুগম হবে এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ভূমিকা রাখবে। সংসদ সদস্যরা নিজেরাও তাদের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে একটি ধারণা নিতে পারবেন। তাঁরা বলেন, বছর শেষে সংসদ সদস্যদের জনপ্রিয়তা কতখানি আছে তা মিডিয়া পোলের মাধ্যমে যাচাই করা যেতে পারে।
টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মূল আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সংসদে বিলের উত্থাপক সাবের হোসেন চৌধুরী। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারম্নজ্জামানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন টিআইবি ট্রাস্টি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুুুুুুুুুুুজিবুল হক চুন্নু, সংসদের সংরৰিত নারী আসনের সদস্য বিএনপির নিলোফার চৌধুরী মণি, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোসত্মফা চৌধুরী, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ ম-ল, ড. বদিউল আলম মজুমদার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এএসএম শাহজাহান, সাবেক সংসদ সদস্য হুমায়ুন কবির হিরম্ন এবং জাতীয় পার্টির নেতা সাদেক সিদ্দিকী।
টিআইবি জানায়, সংসদ সদস্য ও জনগণের প্রত্যাশা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনে ৩২টি সংসদীয় এলাকার ৩ হাজার ২শ' ভোটারের ওপর জরিপ, ২৪টি এফজিডি, ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ে একটি এবং ১৩টি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মশালা, ৫২ বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের সাৰাতকার নেয়া হয়। সাৰাতকারে জনগণ দুর্নীতিগ্রসত্ম, কালো টাকার মালিক, বিল ও ঋণ খেলাপি, সন্ত্রাসী, যুদ্ধাপরাধী, জনপ্রতিনিধি হিসেবে ৰমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত চরিতার্থকারীদের সংসদ সদস্য হিসাবে অযোগ্য মনে করেন জনগণ। সংসদ সদস্যদের প্রাপ্ত বরাদ্দ, বিশেষ সুবিধা, সংসদে উপস্থিতি ও অংশগ্রহণের ধরন, আইন প্রণয়নে ভূমিকা, সংসদীয় কমিটিতে অংশগ্রহণ, সম্পদ ও আয়করের হিসাব, নির্ভরশীলদের সম্পদের হিসাব, সরকারী সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানে বকেয়া বিল এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের গৃহীত ঋণ ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী দেশের সাধারণ মানুষ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, সংসদে সরকার ও বিরোধী দল হিসাবে সংসদ সদস্যরা শুধু একে অপরের বিষোদগার করবেন এটা মেনে নেয়া যায় না। ভাল কাজের জন্য দল মতের উর্ধে উঠে সংসদ সদস্যদের ঐকবদ্ধ হতে হবে।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুুজিবুল হক চুন্নু বলেন, নির্বাচনের সময় দলগুলো থেকে অনেক সময় অযোগ্য লোককে মনোনয়ন দেয়া হয়। আর দুর্নীতিবাজ অযোগ্য সংসদ সদস্যদের জন্য ভোগানত্মির শিকার হন ভোটাররা। তিনি বলেন, অনেকেই মনত্মব্য করেন যে সংসদ সদস্যরা আইন প্রণেতা হিসাবে শুধু আইন প্রণয়ন করবেন। তাদের বুঝতে হবে শুধু আইন তৈরির জন্য জনগণ আমাদের ভোট দেয়নি। ভোটারদের প্রতি আমাদের নানাভাবে দায়বদ্ধতা আছে।
সংসদ সদস্য আচরণ আইন প্রণয়নকে সময়োপোযোগী মনত্মব্য করে সাবেক সচিব আবদুল লতিফ ম-ল বলেন, চলতি সংসদ অধিবেশনে বেসরকারী সদস্য বিল হিসাবে বিল উত্থাপিত হয়েছে। এখন একমাত্র সরকার আগ্রহ প্রকাশ করলে তা আলোর মুখ দেখবে। বিগত বছরগুলোতে ৩ শ'রও বেশি বেসরকারী বিল উত্থাপিত হলেও আইন হয়েছে মাত্র ৬টি।
তবে বিলের উত্থাপক আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বিলের প্রসত্মাব ইতোমধ্যে অধিবেশনে গৃহীত হওয়ায় তা পাসের সম্ভাবনাই বেশি। তিনি বলেন, এ বিলের উদ্দেশ্য অত্যনত্ম গুরম্নত্বপূণ। সংবিধান জনগণকে সকল ৰমতার উৎস বলছে। সেই জনগণের প্রতিনিধিদের অবশ্যই একটি আচরণবিধি থাকা দরকার। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে এ আচরণবিধি নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিজ্ঞা ছিল। তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্রের কোন সংসদ সদস্যের দায়িত্ব জ্ঞানহীন আচরণের প্রতিফলন ভোগ করতে হয় জনগণকেই। সেই বোধ থেকেই এ আইন হওয়া জরম্নরী।
উলেস্নখ্য, বিলে মোট ১৫টি অনুচ্ছেদ আছে। এ আচরণবিধি বাসত্মবায়ন, পরিবীৰণ ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে সংসদে স্পীকারের নেতৃত্বে নয় সদস্য সমন্বয়ে একটি সংসদীয় নৈতিক আচরণ সম্পকির্ত স্থায়ী কমিটি গঠন করা হবে। এ আইন প্রণয়ন হলে সংসদ সদস্যরা ৫ হাজার টাকার বেশি মূল্যমানের কোন উপঢৌকন বা সেবা গ্রহণ করলে তা নৈতিকতা কমিটিকে অবহিত করবেন। প্রযোজ্য ৰেত্রে প্রাপ্ত উপঢৌকন রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেবেন। কোন সংসদ সদস্য আইন লঙ্ঘন করলে নৈতিকতা কমিটি তাদের বিবেচনা অনুযায়ী শাসত্মি সম্পকির্ত রিপোর্ট সংসদে উপস্থাপন করবেন।
No comments