পাইরেটেড বইয়ের পাঁচ স্টল বাতিল, ৩০টিকে সতর্ক- বইমেলা ॥ প্রতিদিন

বেলা গড়ালেই এখন বাংলা একাডেমীর দিকে যাবার ইচ্ছা জাগে নগরবাসীর মনে। বই কেনার বিষয় তো আছেই, হাল্কা শীতের বিকেলে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দেয়ার আকর্ষণও কম নয়।
দল বেঁধে তরম্নণ-তরম্নণীরা আসছে, অফিসের কাজ সেরে সনত্মানাদি নিয়ে সপরিবারে আসছেন চাকুরে দম্পতিরা। বরাবরের মতো এবারও মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রম্নয়ারি মাসের এ মেলা জমে উঠেছে শুরম্ন থেকেই। প্রথম দিন থেকেই প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে, আসছে নতুন নতুন বই, বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। সব মিলিয়ে মেলার পরিবেশ বেশ জমজমাট। তারপরও প্রকাশকদের একটি অংশ মেলার ঐতিহ্য ও অহঙ্কারকে বিনষ্ট করতে নেট, পাইরেটেড ও বিদেশী লেখকদের অনুমতিবিহীন অনুবাদ গ্রন্থ বিক্রি করে চলেছে। তবে বরাবরের সেই ধারায় এবার ছেদ পড়েছে। রবিবার টাস্কফোর্সের নিয়মিত অভিযানের সময়ে এ ধরনের বই পাওয়ায় ৫টি স্টলের বরাদ্দ বাতিল করে দিয়েছে টাস্কফোর্স। এতে মূলধারার প্রকাশকরা বেশ খুশি হয়েছে। এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ৯৫টি। এ নিয়ে প্রথম সপ্তাহে মোট বই এসেছে ৭৯১টি। গত বছর প্রথম সপ্তাহে বই এসেছিল ৬০৬টি। আর ২০০৭ সালে এ সময় বই এসেছিল ৫২২টি । এতে বোঝা যাচ্ছে প্রতি বছরই নতুন নতুন বইয়ের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

স্টল বাতিল
বাংলা একাডেমী তার বইমেলা আয়োজনের ইতিহাসে এবারই প্রথম হার্ডলাইনে গেল। নোট ও পাইরেটেড বই বিক্রি করার অপরাধে ৫টি স্টলকে বন্ধ করে দিয়েছে। এ স্টলগুলো হলো তৃপ্তি প্রকাশ, উপজাতি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সেভ দ্য উইমেন, লিপিকা প্রকাশ ও বাঙালী ফাউন্ডেশন। আর অনুমতি না নিয়েই বিদেশী লেখকদের বাংলা বই ও অনুবাদ গ্রন্থ বিক্রি করার জন্য ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে কঠোরভাবে সর্তক করে দিয়েছে। আজ সোমবারও যদি সেসব স্টলে এ বইগুলো দেখা যায়, তাহলে আজ তাদের বরাদ্দও বাতিল করে স্টল বন্ধ করে দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বললেন টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব মনজুরম্নর রহমান। এ সময় আরও বক্তৃতা করেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি সুভাস সিংহ রায় ও প্রকাশক প্রতিনিধি ওসমান গনি। মনজুরম্নর রহমান আরও বলেন, অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশে অনিয়মের জন্য যাদের সতর্ক করে দিলাম, আজ সোমবার থেকে তাদের স্টলে সেই অনিয়ম যদি ধরা পরে তাহলে কপিরাইট আইনের ৫২ ধারা অনুযায়ী তাদের বিরম্নদ্ধে মামলা হবে। যার সাজা ৫ বছর জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা। শামসুজ্জামান খান বলেন, এ মেলা আমাদের অহঙ্কারের মেলা, এখানে আর কোন অনিয়ম হতে দেয়া যাবে না। টাস্কফোর্স নিয়ে এখন আমরা নিয়মিতই মেলা পরিদর্শনে বের হব। তাই প্রকাশকদের সতর্ক করে দিচ্ছি বইমেলার নীতিমালা পরিপন্থী কোন অনিয়ম ধরা পড়লে রেহাই নেই ।

লেখকদের কথা
নীতিমালা কঠোরভাবে মানায় শিৰাবিদ ও লেখক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, এ অভিযানকে স্বাগত জানাই। একাডেমী কতর্ৃপৰ ঠিকই করেছে। এতে এখন এবং ভবিষ্যতে যারা স্টল নেবে তারা সতর্ক হয়ে যাবে। নেট পাইরেটেড এবং অনুমতিবিহীন অনুবাদ গ্রন্থ যদি সম্পূর্ণ বন্ধ করা যায়, তাহলে পাঠকের সঙ্গে সঙ্গে লেখকরাও বেশ উপকৃত হবে। মেলায় অনেক অনুবাদ গ্রন্থ আছে, যা ঠিকভাবে অনুবাদও হয়নি, যা হয়েছে তা ভাবানুবাদ। এসব বই পড়ে পাঠকরা প্রতারিত হচ্ছে এবং ভুল তথ্য পাচ্ছে।

নতুন বই
মেলা এক সপ্তাহ পূর্ণ করল রবিবার। এদিন নতুন বই এসেছে ৯৫টি। শনিবারের মতো এদিনও কবিতার বই সবচেয়ে বেশি এসেছে, এর সে সংখ্যা ২৯টি। এর পরেই আছে উপন্যাস ১৬টি, গল্প ও প্রবন্ধ ৭টি করে এবং ভ্রমণকাহিনী ৪টি উলেস্নখযোগ্য। আর প্রকাশনার দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি ৪টি বই এসেছে আগামী প্রকাশনীর। বইমেলায় আসা এদিনের নতুন বইগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হাসনাত আব্দুল হাইয়ের ভ্রমণকাহিনী সাত দিনের আমেরিকা, মিথুন আহমেদের পকেটভর্তি পদ্য ও মোহাম্মদ ইমদাদুল ইসলামের ১/১১-এর একজন বন্দির কথা বই তিনটি এনেছে আগামী। চারম্নলিপি এনেছে হায়াৎ মামুদের বাঙালীর বাংলা ভাষা ইদানীং। মুহম্মদ জাফর ইকবালের আরও একটুখানি বিজ্ঞান এনেছে কাকলী। হাসান হাফিজের জ্বলে নেভে জোনাকী এনেছে সিঁিড়। অন্বেষা এনেছে ডা. নাজমুল ইসলামের বয়ঃসন্ধি পাঠ। পার্ল এনেছে খন্দকার মাহমুদুল হাসানের প্রাচীন বাংলার লুপ্ত নারী। ভাষা আন্দোলন নিয়ে এমআর মাহবুবের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও একুশের ইতিহাসে প্রথম এনেছে সূচীপত্র। শ্রাবণ এনেছে অমল সাহার ইমর্টাল ২১ ফেব্রম্নয়ারি এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব ল্যাঙ্গুয়েজ মুভমেন্ট। বিজয় এনেছে মোশারফ হোসেনের কেলস্না ঔরঙ্গবাদ থেকে লালবাগ দুর্গ। আলেয়া এনেছে আনু মাহমুদের নবযুগের সার্থক কবি মাইকেল মধুসূদন। মিজান এনেছে লে. কর্নেল (অব) এমএ হামিদের তিনটি সেনা অভু্যত্থান ও কিছু না বলা কথা এবং অনুপম এনেছে একেএম মাহফুজুল হকের লাইবেরিয়ার ১৪ দিন বইটি।

No comments

Powered by Blogger.