প্রাণের উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না নতুন বই এসেছে ১৬০টি- বই মেলা প্রতিদন
অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে এক বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে আসছে। আবহাওয়াতেও থাকে পরিবর্তনের আভাস। শীতের শেষে বসনত্মের আগমনের নীরব প্রস্তুতি শুরম্ন হয় নিঃসর্গে।
আর এ সময়ই মহান ভাষা আন্দোলনের চিরগৌরবময় স্মৃতি ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ জাতি মনে-মানসে আপন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনুরাগে দীপ্ত হয়ে ওঠে। নানা অনুষ্ঠান আয়োজনেই দেশব্যাপী ফেব্রম্নয়ারি মাসে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। এসব উদ্যোগের মধ্যে একটি বিরাট স্থান দখল করে আছে অমর একুশের বইমেলা। সে মেলাই ষষ্ঠ দিন পার করল শনিবার। এদিন সরকারী ছুটি থাকায় মেলা শুরম্ন হয়েছে বেলা ১১ টায়। শুক্রবারের মতো জোয়ার না থাকলেও প্রাণের উচ্ছ্বাস কম ছিল না এদিন। নতুন বইয়ের আকুল করা গন্ধে মাতোয়ারা হতেই বইপ্রেমীরা ছুটে এসেছিল এদিন। প্রাণের এ মেলায় এখন প্রতিদিনই আসছেন লেখক, কবি, সাহিত্যিকরা। এদিন মেলায় দেখা গেছে কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, ভাষা সৈনিক ও কলামিস্ট বাহাউদ্দীন চৌধুরী, কবি নূরম্নল হুদা, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব) এম শাখাওয়াত হোসেন, লেখক ও উপ-সচিব মোহাম্মদ আমীন এবং অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী যা. আহমেদ শুভ। এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬০টি। আগের দিন শুক্রবার এসেছিল ২৩৫টি।লেখকদের কথা
এদিনই মেলায় প্রথম এসেছেন ব্রিগেডিয়ার (অব) শাখাওয়াত হোসেন। এখান থেকে বের হয়েছে তাঁর 'জনপদ ও ইতিহাস কথা' বইটি। তাঁর লেখা বইয়ের ক্রেতা-পাঠকদের অটোগ্রাফ দিতে দিতে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, সিরিয়াস বইয়ের পাঠক এখনও গড়ে ওঠেনি। আমরা যাঁরা গবেষণা বা তথ্য ও বিশেস্নষণধর্মী বই লিখে থাকি, সেগুলোর চাহিদা কম। এর পরিবর্তন ঘটাতে মিডিয়াকে বড় ভূমিকা নিতে হবে, এসব বইয়ের কথা পাঠকদের কাছে পেঁৗছে দিতে হবে। কবি নূরম্নল হুদা বলেন, যেভাবে মেলায় পাঠক-দর্শনার্থী বাড়ছে, মেলাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে না নিয়ে উপায় নেই। আর যে হারে পাঠকরা স্টলের সামনে ভির করছে, সে হিসাবে প্রকাশকদের স্টল নয়, প্যাভিলিয়ন দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সাহিত্যের মধ্যে শিশু সাহিত্য এগিয়ে। গত ৫/৬ বছর যাবতই এ বিষয়টি লৰ্য করছি। বিষয়, উপস্থাপনায় ও এনিমেটেড চরিত্র নিয়ে বেশ মানসম্মত সাহিত্যই নির্মিত হচ্ছে। এ বছর মেলায় তাঁর ৪টি বই এসেছে, তার মধ্যে ঝাউ দুনিয়ার ডানা ও শিশু-কিশোর সমগ্র উলেস্নখযোগ্য। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ আমীন বলেন, ভিৰুকদের জীবনযাপন নিয়ে 'নন্দিত কান্না নিন্দিত হাসি' বইটি লেখার জন্য তিনি দু'মাস ভিৰাবৃত্তি করেছেন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, ভিৰুক সমিতির সভাপতি ছিলেন জুরাইনের নিহত ব্যবসায়ী আলম মার্কেটের আলম। ভিৰুকদের ভিৰার বড় অংশ তিনিই পেতেন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভিৰা করতে পাঠানো হয় সবচেয়ে চতুর ভিৰুকদের। তাঁর এই বইটি প্রকাশ করেছে আগামী। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ডা. আহমেদ শুভ বলেন, ২২ বছর পর মেলায় এসেছি। প্রতি বছরই আসার ইচ্ছা হয়, কিন্তু পারি না। আগামী থেকে এবার এসেছে তাঁর বিহঙ্গ উড়িয়ে দাও বইটি।
প্রকাশকদের কথা
পালক পাবলিশার্সের প্রকাশক ফোরকান আহমদ বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় এবার মেলা বেশ প্রাণবনত্ম। স্থিতিশীলতা যত থাকবে প্রকাশনার সংখ্যাও তত বাড়বে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ থাকলে প্রকাশকরা নতুন বই প্রকাশে ঝুঁকি নিতে চায় না। তিনি আরও বলেন, আমি সব সময়ই গবেষণাধর্মী বই প্রকাশ করি। শুধু প্রকাশ করার জন্য বই প্রকাশ করি না। দেশ ও জাতির যেন উন্নয়ন হয় এ জন্য গবেষণাধর্মী বই প্রকাশ করি আমি। আগামীর ওসমান গনি বলেন, এবার ৫ তরম্নণের বই প্রকাশ করেছি। তবে বই লিখতে অভিজ্ঞতা দরকার। যেমন হুমায়ুন আজাদ অনেক পড়তেন তারপর লিখতেন। এই অভ্যাসটি অনেকেরই নেই।
নতুন বই
এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১৬০টি। এদিন সবচেয়ে বেশি এসেছে কবিতার বই, ৩৬টি। উপন্যাস ২৭টি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ২২টি, প্রবন্ধ ২১টি, জীবনী গ্রন্থ ১১টি উলেস্নখযোগ্য। এর মধ্যে যুক্ত এনেছে মিলা মাহফুজার জীবনানন্দ দাশ ও ইলা মিত্র, শাহনাজ মুন্নীর প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং মহসীন হোসাইনের রমেশ শীল। বিভাস এনেছে কবি রফিক আজাদের চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া, শোভা এনেছে ওয়াকিল আহমেদের বাংলার মুসলিম বুদ্ধিজীবী, কবীর চৌধুরীর অনুবাদ গ্রন্থ নোবেল বিজয়ীদের সেরা কথাসাহিত্য সমগ্র প্রথম ও দ্বিতীয় খ-, যতীন সরকারের প্রাকৃতজনের জীবন দর্শন, সনৎকামার সাহার এই বাংলায়। সুবর্ণ এনেছে শায়লা পারভীনের ঢাকার হারিয়ে যাওয়া ক্বাশিদা। আলেয়া বুকডিপো এনেছে নিশীত কুমার পালের মাশরম্নমের সাতকাহন। বাতিঘর এনেছে আহমেদ ফিরোজের শূন্যদর্শন। মিজান এনেছে জনকণ্ঠ সাংবাদিক জিয়াউদ্দিন খোকার গল্পের বই হিজল বনে শিকারি শহর, সমীর আহমেদের এই বিষ এই অমৃত উলেস্নখযোগ্য।
No comments