যুদ্ধাপরাধীর বিচার না হলে ষড়যন্ত্র বন্ধ হবে না- রাজশাহীতে নিমরুল কমিটি সম্মেলনে বক্তারা

রাজশাহী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ না হলে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ হবে না। একশ্রেণীর ধর্মব্যবসায়ী সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে ভুল পথে চালিত করছে।
আর এদের মধ্য থেকেই জন্ম নিচ্ছে উগ্র জঙ্গীবাদ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখন জনতার সময়ের দাবি। শনিবার দুপুরে রাজশাহী কাজীহাটাস্থ জেলা পরিষদ মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, রাজশাহীর সম্মেলনে বক্তাগণ এসব কথা বলেন।
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, রাজশাহীর সভাপতি ভাষাসৈনিক আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রম্নজ্জামান লিটন। সম্মেলন উদ্বোধন করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নিমর্ূল কমিটির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বিশিষ্ট লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। আলোচক ছিলেন, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সৈয়দ সাফিকুল আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ নুরম্নলস্নাহ ও রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগারের সভাপতি অধ্য শফিকুর রহমান বাদশা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সুজিত সরকার। যৌথভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অধ্যাপক আলমগীর মালেক ও কামরম্নজ্জামান।
এর আগে 'চাই একাত্তরের ঘাতকমুক্ত স্বদেশ, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় ফিরবে বাংলাদেশ'_এই শেস্নাগানকে সামনে রেখে সকাল সাড়ে ৯টায় আলুপট্টিস্থ বঙ্গবন্ধু চত্ত্বর থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে সম্মেলনের কর্মসূচী শুরম্ন হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন ও উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। বিকেলে সম্মেলনের দ্বিতীয় এবং ওয়ার্কিং অধিবেশনে ৪৭ সদস্যবিশিষ্ট রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন করা হয়। রাজশাহী মহানগর কমিটিতে ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কামরম্নজ্জামান পুর্নিনর্বাচিত হন। এছাড়া মহানগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন শহিদুল ইসলাম ডেভিট। অন্যদিকে রাজশাহী জেলা কমিটিতে মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান সভাপতি, বিশিষ্ট কবি, সাংস্কৃতিক-কর্মী খোকন তালুকদার সাধারণ সম্পাদক ও শাহাদত আলী পিন্টু সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। বিকেল ৫টায় প্রামাণ্য চিত্র 'জিহাদের প্রতিকৃতি' প্রদর্শন করা হয়। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বিশিষ্ট লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, বর্তমানে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আলবদররা গা বাঁচাতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে। তারা দেশের বিরম্নদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এদেশের চিহ্নিত রাজাকার আলবদররা এক সময় বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বাঁচাতেও ব্যাপক তৎপর ছিলেন। কিন্তু সরকার পরিস্থিতি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করায় দেশের মানুষের দীর্ঘ প্রতীতি রায় কার্যকর করতে পেরেছে। এতে দেশের জনগণের দীর্ঘ প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি '৭২-এর সংবিধান সমুন্নত রাখার দাবি জানিয়ে বলেন, এতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পথ রম্নদ্ধ হবে। সরকারের তাই করা উচিত।
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, '৭২-এর সংবিধান পুনপর্্রতিষ্ঠা এবং রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়া এখন সকল মানুষের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। দ্রম্নত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা না গেলে এরাই দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। কাজেই সময় থাকতেই মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদ নির্মূল করতে হবে। সময় গেলে সেটা আর করা সম্ভব হবে না।
বক্তারা বলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দেশে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কারণে বাংলাদেশ জঙ্গীবাদের উর্বরভূমিতে পরিণত হয়েছে তা সকলেই জানে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ হলে জঙ্গীবাদের উত্থান বন্ধ হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী সমৃদ্ধিশালী সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে হলে, রাজাকার আলবদরমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে। বিচার করতে হবে যুদ্ধাপরাধীদের। বক্তারা শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সূচিত একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ৭২-এর সংবিধান পুনর্প্রতিষ্ঠা ও রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে সর্বসত্মরের মানুষকে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.