পবিত্র কোরআনের আলো-কাফির ও মুসলিম পরস্পরের ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী হতে পারে না

০. ইয়া-আইয়্যুহান্ নাবিয়্যু ক্বুল্ লিমান ফী আইদীকুম্ মিনাল আছরা- ইইঁয়্যা'লামিল্লা-হু ফী ক্বুলূবিকুম খাইরান ইউ'তিকুম খাইরাম্ মিম্মা- উখিযা মিনকুম ওয়া ইয়াগ্ফির্ লাকুম্; ওয়াল্লাহু গাফূরুর রাহীম। ৭১. ওয়া ইন ইয়্যুরীদূ খিইয়া-নাতাকা ফাক্বাদ খানূল্লাহা মিন্ ক্বাবলু ফাআমকানা মিনহুম; ওয়াল্লাহু আ'লীমুন হাকীম।


৭২. ইন্নাল্লাযীনা আমানূ ওয়া হাজারূ ওয়া জাহাদূ বিআমওয়ালিহিম ওয়া আনফুছিহিম ফী ছাবীলিল্লাহি ওয়াল্লাযীনা আ-ওয়াওঁ ওয়া নাসারূ উলায়িকা বা'দ্বুহুম আওলিইয়া-উ বা'দ্ব্; ওয়াল্লাযীনা আ-মানূ ওয়ালাম ইউহা-জিরূ মা- লাকুম্ মিন ওয়া লা-ইয়াতিহিম্ মিন শাইয়িন হাত্তা- ইউহা-জিরূ; ওয়া ইনিছ্তানসুরূকুম্ ফিদ্ দ্বীনি ফাআ'লাইকুমুন্ নাসরু ইল্লা- আ'লা- ক্বাওমিম্ বাইনাকুম ওয়া বাইনাহুম্ মীছা-ক্ব্; ওয়াল্লাহু বিমা- তা'মালূনা বাসীর। [সুরা : আল-আনফাল, আয়াত : ৭০-৭২]

অনুবাদ
৭০. হে নবী! আপনাদের হাতে যে যুদ্ধবন্দিরা আছে, তাদের বলে দিন আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালো কিছু দেখলে তোমাদের থেকে যে সম্পদ (মুক্তিপণ হিসেবে) নেওয়া হয়েছে, এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
৭১. (হে নবী!) তারা যদি আপনার সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গের ইচ্ছা করে থাকে (তবে তা সত্যই হতে পারে), তারা তো ইতিপূর্বে আল্লাহর সঙ্গেও বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। যার পরিণামে আল্লাহ তাদের তোমাদের করায়ত্ত করে দিয়েছেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞাত ও মহাকুশলী।
৭২. যারা ইমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজেদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, আর যারা মুহাজিরদের আশ্রয় দিয়েছে ও সাহায্য করেছে, তারা পরস্পরের অংশীদার হয়ে গেল। আর যারা ইমান এনেছে, কিন্তু হিজরত করেনি। হিজরত না করা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে তোমাদের উত্তরাধিকারের কোনো সম্পর্ক নেই। ধর্মের কারণে যদি তারা তোমাদের সাহায্য চায়, তবে অবশ্যই তাদের সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য। তবে সে সাহায্য যেন এমন কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে না হয়, যাদের সঙ্গে তোমাদের সন্ধিচুক্তি রয়েছে। তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা ভালোভাবে দেখেন।

ব্যাখ্যা
৭০ নম্বর আয়াতে যুদ্ধবন্দিদের কয়েকজনের ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। ভালো কিছু দেখার অর্থ, যারা ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে তারা আসলেই নিজেদের বিশ্বাস থেকে এ কথা বলছে নাকি এটা কোনো দুরভিসন্ধিমূলক কৌশল, তা প্রমাণিত হওয়ার পরই বোঝা যাবে। যারা মন থেকেই ইসলাম গ্রহণের কথা বলছে, তাদের এখানে সান্ত্বতা দেওয়া হচ্ছে। নবী (সা.)-এর চাচা আব্বাস, যিনি তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি, বদরের যুদ্ধে বন্দি হয়ে মক্কায় এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, গোত্রের লোকেরা আমাকে যুদ্ধে আসতে বাধ্য করে। নবী (সা.) বললেন, মুক্তিপণ দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা আপনাকেও দিতে হবে। সেই সঙ্গে আপনার ভাতিজা আদিল ও নওফেলের মুক্তিপণের অর্থও আপনাকেই দিতে হবে।
আব্বাস বললেন, এত অর্থ আমি কোথায় পাব? নবী (সা.) বললেন, আপনি আপনার স্ত্রী উম্মুল ফজলের কাছে গোপনে যে অর্থ রেখে এসেছেন, তার কী হলো! এ কথা শুনে আব্বাস স্তম্ভিত হলেন। তিনি লাফিয়ে উঠে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি আল্লাহর রাসুল।
৭২ নম্বর আয়াতে মিরাস ও উত্তরাধিকার-সংক্রান্ত কিছু বিধান বর্ণিত হয়েছে। মিরাস-সংক্রান্ত এসব ব্যতিক্রম সমস্যা তৈরি হয়েছিল মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের কারণে। মুসলিম ও কাফির একে অন্যের ওয়ারিশ হতে পারে না, এটা ইসলামের গোড়া থেকেই প্রতিষ্ঠিত নিয়ম। হিজরতের পর অবস্থা হয়েছিল এই যে যেসব সাহাবি মদিনায় হিজরত করেছিলেন, তাঁদের অনেকের আত্মীয়-স্বজন মক্কায় রয়ে গিয়েছিল। তাঁদের অনেকে জন্মগতভাবে ওয়ারিশ হওয়ার যোগ্যও ছিলেন। কিন্তু তারা যেহেতু ইসলাম গ্রহণ করেনি, তাই ওয়ারিশ হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছিল। অপরদিকে মুহাজিরদের এমন কিছু আত্মীয় ছিল, যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে বটে, তবে হিজরত করেনি। এই আয়াতে বিধান দেওয়া হয়েছে যে এরাও পরস্পরের ওয়ারিশ হতে পারবে না। এর বাস্তব কারণ হলো, মদিনা ও মক্কা তখন যুদ্ধরত দুটি ভিন্ন রাষ্ট্র এবং এ দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে স্থায়ীভাবে কোনো নিরাপত্তা চুক্তি নেই। এই আয়াতের শেষাংশে আবার মক্কায় অবস্থানরত মুসলিমদের ধর্ম-সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যদি তারা চায়। তবে এ কাজে পূর্বঘোষিত কোনো চুক্তি লঙ্ঘন করা যাবে না।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.