এ সপ্তাহের সাক্ষাৎকার-সংকটের মূলে রয়েছে উচ্চাভিলাষী বাজেট
টাকা ছাপিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আর ঋণ না নিতে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিক আহমদ চৌধূরীত
প্রথম আলো: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন যে একটা সংকট দেখা দিয়েছে, তার কারণটা কী? তৌফিক আহমদ চৌধূরী: সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য যে বাজেট করেছে, সেটাই এই সংকটের মূল।
প্রথম আলো: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন যে একটা সংকট দেখা দিয়েছে, তার কারণটা কী? তৌফিক আহমদ চৌধূরী: সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য যে বাজেট করেছে, সেটাই এই সংকটের মূল।
গত জুন মাসে বাজেট দেওয়ার পরই আমরা এটাকে উচ্চাভিলাষী বলে আখ্যায়িত করেছিলাম। কেননা, এই বাজেটে বড় বড় ব্যয় নির্বাহের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী সরকার ব্যয় শুরু করলেও যে আয়ের প্রয়োজন, তা ঠিকমতো হয়নি। বিশেষ করে বড় প্রকল্পগুলোর জন্য। আর বড় বাজেট ব্যয়ের ক্ষেত্রে আয়ের উৎসগুলোর একটাতে ঘাটতি দেখা দিলেই টানাপোড়েন শুরু হয়। সরকার এখানে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ-অনুদানগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী পায়নি। ফলে, বেশি করে ঋণ নিতে হচ্ছে, যার বড় অংশই আসছে সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে। অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই তো সরকারের ব্যাংকঋণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
প্রথম আলো: সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সরকারকে আর টাকা ছাপিয়ে ব্যয় না মেটানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এটা কি সরকার করতে পারবে?
তৌফিক আহমদ চৌধূরী: টাকা না ছাপানোর মানে হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ গ্রহণ না করা। এটা না করলে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে আবার বেসরকারি খাতের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে যাবে। এখানে একটা সমস্যা হলো, সরকার ট্রেজারি বন্ড দিয়ে ১১টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ ঋণ নিয়েছে। এখন এই ব্যাংকগুলো নিজেদের প্রয়োজনে এই বন্ড বিক্রি করতে পারছে না। কেননা, আমাদের এখানে বন্ড বাজারটি গড়ে ওঠেনি। বন্ডের সেকেন্ডারি মাার্কেট বা নিয়মিত বেচাকেনার বাজার থাকলে প্রাইমারি ডিলাররা এই বাজারে লেনদেন করতে পারত। তাতে একদিকে যেমন তাদের তারল্যের সংকট কমে আসত, অন্যদিকে সুদের হারও বাজারভিত্তিক হতো।
প্রথম আলো: তাহলে বন্ড বাজার গঠনের কোনো চেষ্টা করা হচ্ছে না কেন?
তৌফিক আহমদ চৌধূরী: সরকারের এদিকে তেমন আগ্রহ নেই বলেই হয়তো সেভাবে চেষ্টাটা হচ্ছে না। আবার সরকারের আগ্রহ না থাকারও কারণ আছে। বন্ড বাজার থাকলে তো সরকারকেও সেখানে অংশ নিতে হবে, বাজারভিত্তিতে ঋণ নিতে হবে। এখনকার মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিতভাবে সরকারের ঘাটতি মিটিয়ে দেবে না। আসলে এটা এখন গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা উচিত। অর্থবহ একটি বন্ড বা ঋণবাজার গড়ে তুলতে হবে। ভারত ও পাকিস্তানে যা আছে। সেখানকার মতো এখানেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের আইনি সীমা আরোপ করা উচিত।
প্রথম আলো: রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি তো ভালো। এখানে কি সরকারের আয় বাড়ানোর সুযোগ আছে?
তৌফিক আহমদ চৌধূরী: হ্যাঁ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব আদায়ে ভালো সাফল্য দেখাচ্ছে। তবে রাজস্ব আয় বাড়ানোটা একটা নিরন্তর প্রক্রিয়া। তাৎক্ষণিকভাবে এই আয় বাড়বে না। তবে এখানে সরকারের আয় বাড়ানোর আরও অনেক সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে আয়করের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। বছরে এক কোটি টাকা বা এর বেশি আয়কর দেন মাত্র ৪৬ জন। অথচ এ রকম আয়করদাতার সংখ্যা তো কয়েক হাজার হওয়া উচিত। এখানে বিরাট একটা ফাঁকি আছে। ঢাকা শহরে ডজন খানেক ফ্ল্যাটের মালিক হয়েও মাত্র কয়েক লাখ টাকা আয়কর দেন কেউ কেউ। আয়কর আদায় বাড়াতে হলে সরকারের শক্তিশালী রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।
প্রথম আলো: বিদেশি সহায়তার ক্ষেত্রে এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ এবং সার্বভৌম বন্ড ছেড়ে ঋণ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এগুলো কতখানি ঠিক হবে?
তৌফিক আহমদ চৌধূরী: আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের বিষয়টি অনেক দিন ধরে আলোচিত হচ্ছে। এটা পাওয়া গেলে এখন খানিকটা চাপমুক্ত হওয়া যাবে। আর সার্বভৌম বন্ড ছেড়ে আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজার থেকে ঋণ গ্রহণের কথাটি এসেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যেন হাত দিতে না হয়, সে জন্য। বাংলাদেশের এখন যে ঋণমান (ক্রেডিট রেটিং), তা এই ঋণ পেতে খুব বেশি সুদ গুনতে হয়তো হবে না। তবে একটু সতর্কতা প্রয়োজন।
[সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসজাদুল কিবরিয়া]
প্রথম আলো: সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সরকারকে আর টাকা ছাপিয়ে ব্যয় না মেটানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এটা কি সরকার করতে পারবে?
তৌফিক আহমদ চৌধূরী: টাকা না ছাপানোর মানে হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ গ্রহণ না করা। এটা না করলে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে আবার বেসরকারি খাতের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে যাবে। এখানে একটা সমস্যা হলো, সরকার ট্রেজারি বন্ড দিয়ে ১১টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ ঋণ নিয়েছে। এখন এই ব্যাংকগুলো নিজেদের প্রয়োজনে এই বন্ড বিক্রি করতে পারছে না। কেননা, আমাদের এখানে বন্ড বাজারটি গড়ে ওঠেনি। বন্ডের সেকেন্ডারি মাার্কেট বা নিয়মিত বেচাকেনার বাজার থাকলে প্রাইমারি ডিলাররা এই বাজারে লেনদেন করতে পারত। তাতে একদিকে যেমন তাদের তারল্যের সংকট কমে আসত, অন্যদিকে সুদের হারও বাজারভিত্তিক হতো।
প্রথম আলো: তাহলে বন্ড বাজার গঠনের কোনো চেষ্টা করা হচ্ছে না কেন?
তৌফিক আহমদ চৌধূরী: সরকারের এদিকে তেমন আগ্রহ নেই বলেই হয়তো সেভাবে চেষ্টাটা হচ্ছে না। আবার সরকারের আগ্রহ না থাকারও কারণ আছে। বন্ড বাজার থাকলে তো সরকারকেও সেখানে অংশ নিতে হবে, বাজারভিত্তিতে ঋণ নিতে হবে। এখনকার মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিতভাবে সরকারের ঘাটতি মিটিয়ে দেবে না। আসলে এটা এখন গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা উচিত। অর্থবহ একটি বন্ড বা ঋণবাজার গড়ে তুলতে হবে। ভারত ও পাকিস্তানে যা আছে। সেখানকার মতো এখানেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের আইনি সীমা আরোপ করা উচিত।
প্রথম আলো: রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি তো ভালো। এখানে কি সরকারের আয় বাড়ানোর সুযোগ আছে?
তৌফিক আহমদ চৌধূরী: হ্যাঁ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব আদায়ে ভালো সাফল্য দেখাচ্ছে। তবে রাজস্ব আয় বাড়ানোটা একটা নিরন্তর প্রক্রিয়া। তাৎক্ষণিকভাবে এই আয় বাড়বে না। তবে এখানে সরকারের আয় বাড়ানোর আরও অনেক সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে আয়করের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। বছরে এক কোটি টাকা বা এর বেশি আয়কর দেন মাত্র ৪৬ জন। অথচ এ রকম আয়করদাতার সংখ্যা তো কয়েক হাজার হওয়া উচিত। এখানে বিরাট একটা ফাঁকি আছে। ঢাকা শহরে ডজন খানেক ফ্ল্যাটের মালিক হয়েও মাত্র কয়েক লাখ টাকা আয়কর দেন কেউ কেউ। আয়কর আদায় বাড়াতে হলে সরকারের শক্তিশালী রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।
প্রথম আলো: বিদেশি সহায়তার ক্ষেত্রে এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ এবং সার্বভৌম বন্ড ছেড়ে ঋণ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এগুলো কতখানি ঠিক হবে?
তৌফিক আহমদ চৌধূরী: আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের বিষয়টি অনেক দিন ধরে আলোচিত হচ্ছে। এটা পাওয়া গেলে এখন খানিকটা চাপমুক্ত হওয়া যাবে। আর সার্বভৌম বন্ড ছেড়ে আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজার থেকে ঋণ গ্রহণের কথাটি এসেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যেন হাত দিতে না হয়, সে জন্য। বাংলাদেশের এখন যে ঋণমান (ক্রেডিট রেটিং), তা এই ঋণ পেতে খুব বেশি সুদ গুনতে হয়তো হবে না। তবে একটু সতর্কতা প্রয়োজন।
[সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসজাদুল কিবরিয়া]
No comments