বিশ্লেষণ-হামলার ঝুঁকিতে ইরানের পরমাণুবিজ্ঞানীরা
সন্ত্রাসী হামলায় আরও একজন পরমাণুবিজ্ঞানী প্রাণ হারালেন ইরানে। বুধবার তাঁর গাড়ির ওপর বোমা নিয়ে আছড়ে পড়ে এক মোটরসাইকেল আরোহী। এ নিয়ে গত দুই বছরে ইরানি বিজ্ঞানীদের ওপর পাঁচটি হামলার ঘটনা ঘটল। ইরান এই ঘটনাগুলোর জন্য ইসরায়েল ও পাশ্চাত্যকে দায়ী করেছে। নিরপেক্ষ বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ইরানের এ সন্দেহ সত্যি হওয়া অসম্ভব নয়। তবে ইরানের স্থানীয় উপদল বা আঞ্চলিক কোনো শক্তির অন্তর্ঘাতমূলক আঘাত হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
হামলায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন চারজন ইরানি বিজ্ঞানী। প্রতিটি হামলার ধরন ছিল প্রায় একই রকম। প্রতিবারই গাড়িবোমা বিস্ফোরণের শিকার হন তাঁরা। নিহত চারজনের মধ্যে কমপক্ষে দুজন পরমাণুবিজ্ঞানী।
২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বিজ্ঞানী মাসউদ আলি মোহাম্মদি। এর ঠিক এক বছর পূর্তির দিনে প্রাণ হারালেন ৩২ বছর বয়সী কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আহমাদি রোশান। ইরানের আণবিক সংস্থার বর্তমান প্রধান ফিরাইদাউন আব্বাসিও ২০১০ সালের নভেম্বরে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। আব্বাসি তাঁর গাড়িতে সংযুক্ত বোমাটি বিস্ফোরিত হওয়ার আগমুহূর্তে স্ত্রীসহ বেরিয়ে এসেছিলেন বলে বেঁচে যান।
ইরানের বিতর্কিত ইউরেনিয়াম কর্মসূচি সমৃদ্ধ করার পেছনে ভূমিকা রাখছেন এই পরমাণুবিজ্ঞানীরা। প্রতিটি হামলার পরই ইসরায়েল এবং ওয়াশিংটনের দিকে আঙুল তুলেছে ইরান। সর্বশেষ ঘটনায়ও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন অবশ্য বুধবারই পরমাণুবিজ্ঞানী নিহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন। ইসরায়েল সর্বশেষ হামলাটির বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে ঘটনার আগের দিন ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল বেনি গান্টজ বলেছিলেন, ইরানের জন্য আরও বেশি রহস্যময় দুর্ঘটনা অপেক্ষা করছে।
ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে ২০১০ সাল থেকে আপত্তি জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। চলতি বছরের শুরুতে এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন অবরোধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তার ইউরোপীয় মিত্ররাও অবরোধ কঠোর করার উদ্যোগ নিচ্ছে। এরই প্রেক্ষাপটে ইরান সম্প্রতি তার দেশসংলগ্ন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালিতে সামরিক মহড়া চালালে উত্তেজনার পারদ চরমে ওঠে।
বিদেশে সুদক্ষভাবে গুপ্তহত্যাকাণ্ড ঘটানোর ব্যাপারে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সে দেশের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ইয়ভ মোরদেকাই সম্প্রতি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি জানি না ইরানি বিজ্ঞানীর হত্যাকাণ্ড কে ঘটিয়েছে, কিন্তু এ জন্য আমি মোটেও চোখের পানি ফেলিনি।’ রয়টার্স ও এএফপি।
No comments