সরকার ও বিরোধী দলের সমঝোতাই আসল কথা-রাষ্ট্রপতির সংলাপ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শেষ হয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ব্যাপারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়াই ছিল রাষ্ট্রপতির সংলাপের মূল উদ্দেশ্য। তবে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কাছে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে গুরুত্ব পেয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গটি। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এ দুটি প্রসঙ্গই বর্তমান রাজনীতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে এ দুটি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এই যে সংলাপ হয়ে গেল, তা একটি সমঝোতার পরিস্থিতি তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে। সামনের মাসেই নির্বাচন কমিশনে নতুন নিয়োগ দিতে হবে। একটি স্বাধীন, শক্তিশালী, দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের ওপরই নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে সাধারণভাবে দুটি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। একটি হচ্ছে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন এবং অপরটি হচ্ছে সার্চ কমিটি গঠন। সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবারের সংলাপের পর আভাস পাওয়া গেল যে রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনে সরকারকে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দিতে পারেন। রাষ্ট্রপতির তরফে এমন প্রস্তাব এলে সরকার তার প্রতি সম্মান জানাবে বলেও সরকারি দল থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
বর্তমানে সংসদ অধিবেশন নেই, তাই অধ্যাদেশ আকারে এই আইন গ্রহণের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। সংসদে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে আইনটি প্রণয়ন করা গেলে ভালো হতো। বর্তমানে সে সুযোগ না থাকায় আইনটির ব্যাপারে বিরোধী দলের মতামত ও সম্মতি নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। রাষ্ট্রপতি যদি নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটি গঠনের সুপারিশ করেন, তাও বিবেচনা করার কথা জানিয়েছে সরকারি দল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পথটির ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি পরামর্শ দেবেন, সেটাই প্রত্যাশিত। সরকারি দল যদি রাষ্ট্রপতির সেই পরামর্শ পালনে সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার পরিচয় দেয়, তবে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে একটি মতৈক্যের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যাবে বলে আমরা মনে করি।
বাংলাদেশের সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত। তবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি ও অভিভাবক হিসেবে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার সুযোগ তাঁর রয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি আইন প্রণয়নের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত হয়ে আসছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের পরিণতিতে যদি এ ধরনের একটি আইন প্রণয়ন করা যায়, তবে এটাকে একটা অর্জন হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে।
আলোচ্যসূচির বাইরে হলেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি রাষ্ট্রপতির কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃস্থাপনের দাবি তুলেছে। আমরা মনে করি, এই বিষয়টিতে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি সমঝোতায় আসতেই হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ও সংস্কৃতিতে এ ধরনের মৌলিক ইস্যুতে দুই পক্ষের মতৈক্যের কোনো বিকল্প নেই। সামনের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রেও এটা জরুরি। রাষ্ট্রপতি এ ক্ষেত্রে কোনো দিকনির্দেশনা দিতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

No comments

Powered by Blogger.