বন্ধ হোক সর্বনাশা মানবপাচার-শুধু কঠোর আইন করা নয়, বাস্তবায়নও প্রয়োজন
গত সপ্তাহে পুলিশ নৌকাযোগে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করার আগে ৩০ জনকে আটক করেছে। গত মাসের প্রথম দিকে সেন্ট মার্টিনের কাছে বঙ্গোপসাগরে ১৩০ জন যাত্রী নিয়ে একটি ফিশিং ট্রলার ডুবে গেলে কমপক্ষে ৩০ জন প্রাণ হারায়। অন্যদিকে মানবপাচারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত মাসেই মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১১-এর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।
কক্সবাজারের কিছু চিহ্নিত অপরাধী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে মানবপাচার করে আসছে। ইতিপূর্বে আন্দামান দ্বীপের কাছে অনুরূপভাবে একটি ট্রলার ডুবে গেলে ভারতীয় নৌবাহিনী প্রায় ২০০ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছিল, যাদের একটি বড় অংশই ছিল মিয়ানমারের নাগরিক তথা রোহিঙ্গা। থাইল্যান্ডের কোস্টগার্ড তাদের উপকূলে বাংলাদেশি ট্রলারে গুলিও চালিয়েছে। অবৈধ যাত্রীদের হাত-পা বেঁধে সাগরে ট্রলার ভাসিয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু কক্সবাজারের এই দুর্বৃত্তদের কোনোভাবেই দমন করা যাচ্ছে না কেন? এই দুর্বৃত্তরা বেকার যুবকদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আবার মৃত্যুকে পাশ কাটিয়ে কোনো রকমে মালয়েশিয়া গিয়ে পৌঁছালেও এদের নিষ্কৃতি নেই। সে দেশের পুলিশের ভয়ে তাদের বন-জঙ্গলে পালিয়ে থাকতে হয়। নামমাত্র মূল্যে তাদের শ্রম কিনে নেয় সে দেশের একটি অসাধু চক্র এবং বন-জঙ্গলের মধ্যে তাদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। প্রায়ই পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলের খবরে দেখা যায়, মালয়েশিয়ার জঙ্গলে বহু বাংলাদেশি শ্রমিক দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে। অনেকের স্থান হয় সে দেশের বন্দিশালায়। এসব খবরে আমরা পীড়িত হই। কিন্তু আমরা দেশ থেকে অবৈধভাবে মানবপাচার ঠেকাতে পারি না। কিছু দিন আগে নিবিড় কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে মালয়েশিয়া আড়াই লাখেরও বেশি অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিককে বৈধতা দিয়েছে। এ অবস্থায় যদি আবারও অবৈধ শ্রমিক যেতেই থাকে, তাহলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার ঠিক রাখা যাবে কি?
সম্প্রতি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, জনপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় রফা করে এভাবে যুবকদের এক জায়গায় জড়ো করা হয়। তারপর পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। দ্রুত তদন্ত করে এই সর্বনাশা প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। আমরা চাই, কক্সবাজারসহ সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কেবল আইন করলেই হবে না, আইনের সঠিক বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে।
সম্প্রতি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, জনপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় রফা করে এভাবে যুবকদের এক জায়গায় জড়ো করা হয়। তারপর পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। দ্রুত তদন্ত করে এই সর্বনাশা প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। আমরা চাই, কক্সবাজারসহ সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কেবল আইন করলেই হবে না, আইনের সঠিক বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে।
No comments