শিক্ষাঙ্গন যখন রণক্ষেত্র by মোঃ মাইন উদ্দিন সোহাগ
ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে ছাত্ররা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ দেশে ছাত্ররাজনীতি আজ বিতর্কের সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে। আমাদের আছে একুশের চেতনা, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, সাতচলি্লশের মতো সময়সহ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন এবং একাত্তরের মতো অনেক ইতিহাসখ্যাত স্বর্ণ সময়। সেই সময়ে ছাত্ররা যে ভূমিকা পালন করেছে তা নজির হয়ে আছে এবং থাকবে।
কিন্তু বর্তমানে ছাত্ররাজনীতির যে অবস্থা তা অতীতের সব ইতিহাসকে আমাদের ভুলিয়ে দেয়। ছাত্র সংগঠনগুলো ক্রমেই পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক দলের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠছে। ছাত্রদের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টায় প্রধান রাজনৈতিক দল ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে অছাত্রদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে। নানা ছাত্র সংগঠনের অছাত্র নেতারা নিজ দল ও অন্যান্য দলের সঙ্গে কোন্দলে জড়িয়ে পড়ছে। একজন অভিভাবক তার সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। কিন্তু ছাত্ররাজনীতির ক্যাডাররা তাদের ব্যবহার করছে এবং সেই নতুন ছাত্ররাও জড়িয়ে পড়ছে ছাত্ররাজনীতির মতো কালো অধ্যায়ে। একজন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরবে কেন? আর কত মায়ের বুক ফাঁকা হবে? এটি কোন ধরনের ছাত্ররাজনীতি। শিক্ষাঙ্গন একটি পবিত্র স্থান। কিন্তু শিক্ষাঙ্গন আজ তো শিক্ষাঙ্গন নেই, তা যেন এক সন্ত্রাসাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশ করেছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মারামারি, খুন, কাটাকাটি ইত্যাদি। ছাত্ররাজনীতির এই অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে দেশ ও জাতি তলিয়ে যাবে অতল গহ্বরে। সন্ত্রাসের কারণে প্রতি বছর অনেক ছাত্রের তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে এবং অনেকে বরণ করে নিচ্ছে চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব। সন্ত্রাসের একটি উদাহরণ দেওয়া যায়_ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশের দোকানপাট থেকে ছাত্ররা চাঁদা তুলছে। অকপটে ভয়ে মুখ খুলছে না তারা এবং তারা চাঁদা দিচ্ছে শুধু অস্ত্রের ও জীবনের ভয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোকে পরিণত করেছে মিনি ক্যান্টনমেন্টে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বানিয়েছে রণাঙ্গন। একটি বিষয় লক্ষণীয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছাত্রসমাজকেই তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে ছাত্রসমাজ দেশ গঠনের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে অসুস্থ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। ছাত্রদের যদি রাজনীতি করতেই হয় তাহলে তা হতে পারে টিউশন ফি কমানোর জন্য আন্দোলন, পরীক্ষার ফল দ্রুত প্রকাশের জন্য আন্দোলন, আবাসিক হলের প্রয়োজনীয়তার জন্য আন্দোলন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য যত সব চাহিদাসহ ছাত্রদের আরও যত দাবি-দাওয়া সেগুলোকে কেন্দ্র করে।
সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনৈতিক স্বার্থে ছাত্রদের ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। তবেই শিক্ষার্থীর আসল উদ্দেশ্য অর্জিত হবে, দেশ হবে সুন্দর, ভবিষ্যৎ হবে উজ্জ্বল। নতুবা শিক্ষাঙ্গন হবে লাশ তৈরির কারখানা এবং সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু।
য় শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
No comments