নকল দুধ-ভেজালদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
সুদূর অতীত থেকে দুধ এ দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় পানীয়। স্নেহ জাতীয় খাদ্য-উপাদান সরবরাহে দুধের জুড়ি নেই। তাই প্রত্যহ দুধ পান কিংবা দুধজাত খাদ্যে এর ব্যবহার অনেক আগে থেকে চলে আসছে। দুধের ব্যবহার চালু থাকলেও দুধের বাজারজাতকরণ পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আগে গোয়ালা বা গবাদিপশু পালকরা ঘরে উৎপাদিত দুধ নিজেরাই বাজারজাত করতেন। এখন তেমন বিক্রেতার দেখা মেলা ভার।
জনসাধারণের দুধের চাহিদা মেটে প্যাকেটজাত দুধের মাধ্যমে। পাস্তুরিত দুধ প্যাকেটজাত হয়ে পাড়ার দোকানে দোকানে পেঁৗছায়, সে দুধেই ক্রেতারা দুধের স্বাদ মেটায়। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর প্রবাদ আমাদের সমাজে প্রচলিত। ঘোল পর্যন্ত না গেলেও প্যাকেটজাত যে দুধ বাজারে সচরাচর মেলে তাতে কতভাগ দুধ আর কতভাগ অন্য দ্রব্য তা নিয়ে সংশয় আছে। সে সংশয় তুলে রেখেও প্যাকেটজাত দুধই অনেকের কাছে একমাত্র দুধ। এখন খবর মিলেছে, প্যাকেটজাত দুধ বলতে যে দুধ আমরা পান করি তাতেও ভেজাল মিশতে শুরু করেছে। ভেজালের ফলে প্যাকেটের দুধ যে বস্তুতে পরিণত হয়েছে তা দেখতে দুধের মতো হলেও তাতে দুধের অবশেষ মাত্র নেই। ছানার পানিতে ফরমালিনসহ নানা দ্রব্য মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নকল দুধ। আর এই নকল দুধ তৈরি হচ্ছে খোদ দুধ উৎপাদনের কেন্দ্রে অর্থাৎ পাবনার দুগ্ধ খামারগুলোতে। তারও চেয়ে বিস্ময়কর খবর হলো, নকল এ দুধ নামি কোম্পানিগুলোর মোড়কে বাজারজাত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কম নয়, ২৫ হাজার লিটার দুধের ঘাটতি মিটছে এ নকল দুধে। খবরটি উদ্বেগজনক। পুষ্টিকর খাবার হিসেবে কিনে অনেকে প্রতারিত হচ্ছেন, পুষ্টির বদলে গ্রহণ করছেন ক্ষতিকর উপাদান। জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর দুধ তৈরি ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার। এ বিষয়ে সরকারের বিশেষ কর্তব্য আছে। সরকারের উচিত উপযুক্ত তদারকি ও তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু সরকারের বাইরেও দুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব আছে। দেশের বাজারে ভালো মানের দুধ উৎপাদন করে তারা ইতিমধ্যে সুনাম কুড়িয়েছেন। গুটিকয় দুর্বৃত্তের জন্য সে সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়। তাই দুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে। যারা দুধের নামে নকল দ্রব্য বাজারজাত করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
No comments