ট্রলারডুবিতে সলিল-সমাধিঃ এই ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি চাই না
‘এই ট্র্যাজেডি কি চলতেই থাকবে?’— শীর্ষক একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয় গত ২ ডিসেম্বর দৈনিক আমার দেশ-এ। এতে ঈদুল আজহার আগের দিন ভোলায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনা নিয়ে যে সংশয় পোষণ করা হয়েছিল তারই পুনরাবৃত্তি হলো এক সপ্তাহ না পেরুতেই। সংশয় পরিণত হলো সত্যে।
ওই দুর্ঘটনায় স্বভাবতই ভোলা জেলাসহ ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে যায় গোটা দক্ষিণাঞ্চলে। এবার আনন্দ উদযাপনের পর বিভিন্ন গন্তব্যে ফেরার পথে কিশোরগঞ্জ জেলার বাঁওড় অঞ্চলের জনপদের বাতাস ভারি হয়ে উঠল ট্রলারডুবিতে। ক’দিন আগের বেদনা বিধূরস্মৃতি আবছা না হতেই আরেক মৃত্যুর হাহাকার শুধু গভীর ক্ষতই সৃষ্টি করল না, পাশাপাশি সেই প্রশ্নটি আরও প্রবল হয়ে দেখা দিল দেশবাসীর সামনে—এই ট্র্যাজেডি কি চলতেই থাকবে? আপাতত এ প্রশ্নের চটজলদি কোনো জবাব নেই। এ থেকে ধরে নেয়া যায় আগাম সতর্কতা, হুশিয়ারি, চাক্ষুষ দৃষ্টান্ত কোনো কিছুকেই আমরা স্বাভাবিকভাবে গ্রাহ্য করতে চাই না। সব বিয়োগান্তক ঘটনার দায় চাপিয়ে দিই নিয়তির ওপর। ফি-বছর নৌযানডুবি যেন তারই অনিবার্য পরিণাম।
বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর অনুসারে গত ৪ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার দুর্গম হাওর এলাকার দারিয়া নদীতে লঞ্চ ও ট্রলারের সংঘর্ষে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের চেষ্টায় উদ্ধার করা হয়েছে ৪৭ জনের লাশ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভেসে গেছে আরও অনেক লাশ। উদ্ধার করা লাশের মধ্যে রয়েছে ১৭ জন মহিলা ও ২২ শিশু। ট্রলারডুবি তথা লঞ্চের সঙ্গে ট্রলারের সংঘর্ষের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ঘন কুয়াশাকে দায়ী করা হয়েছে। অর্থাত্ চালক বিপরীত দিক থেকে আসা নৌযান দেখতে পাননি। ফলে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সুনামগঞ্জগামী লঞ্চ আল-হেলাল করিমগঞ্জের চামড়া বন্দরগামী ট্রলার এমভি চান মিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ট্রলারে যাত্রী ছিল প্রায় দেড়শ। ছাদের যাত্রীরা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও ভেতরের যাত্রী বিশেষত শিশু ও নারীরা বের হতে পারেননি। তাদের বেশিরভাগেরই সলিল-সমাধি হয়েছে দারিয়ায়। এ ঘটনার ঘণ্টা তিনেক পর ঘটনাস্থলে গেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক, অতঃপর ঢাকা থেকে গেছে ডুবুরি দল। কিন্তু তারা তল্লাশি চালিয়ে কোনো লাশ পায়নি। ট্রলারডুবির ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে লঞ্চ ও ট্রলারের মালিকদের নামধাম ছাড়াই।
নৌ-দুর্ঘটনা সম্পর্কে আমাদের পূর্বাপর অভিজ্ঞতা হচ্ছে—অতিরিক্ত যাত্রী বহন, যান্ত্রিক ত্রুটি, ঝড়ঝঞ্ঝা, ডুবোচরে আটকে যাওয়া ইত্যাদি। আলোচ্য দুর্ঘটনায় এসব কারণ কাজ করেনি। যদ্দূর জানা গেছে, তাতে নিতান্ত খেলো একটি অজুহাত দাঁড় করানো হয়েছে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে। তা হচ্ছে ঘন কুয়াশা। শীতকালে সকাল ৯টার দিকে বিশেষত হাওর এলাকায় নদীপথে কুয়াশা কোনো নতুন ঘটনা নয়। এ কুয়াশার স্তর ভেদ করেই চিরকাল এসব নদীতে নৌযান চলাচল করে। এসব নৌপথের চালকদের কাছে কুয়াশাচ্ছন্ন পথ অজানা-অচেনা কিছু নয়। তার পরও একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ কী করে একটি যাত্রীবাহী ট্রলারকে ধাক্কা দিয়ে উল্টে দিতে পারে তা বিস্ময়কর বৈকি! এ ক্ষেত্রে চালকের অদূরদর্শিতা, অদক্ষতা এবং খামখেয়ালিকে কোনো অজুহাত দাঁড় করিয়ে লাঘব করার অবকাশ নেই। চালক সতর্ক থাকলে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা এড়ানো মোটেই অসম্ভব ছিল না। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গোটা শীতকাল নৌচলাচলের জন্য নিরাপদ মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত। এ সময় অনেকে স্থলপথের বদলে ভ্রমণ উপভোগ করতে নদীপথকে বেছে নেন। সেই আনন্দ ভ্রমণ যদি নিছক কুয়াশার কারণে বা চালকের অসতর্কতার জন্য সলিল-সমাধিতে পরিণত হয় তাহলে মানবিক সুরক্ষার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
উল্লেখ্য, আমাদের নৌপরিবহন সেক্টরে ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি নতুন কিছু নয়। বারবার ভয়াবহ দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও নৌপরিবহনে কোনো সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরে আসেনি। নৌপরিবহনে নজরদারি তথা তদারকির অভাব প্রতিটি দুর্ঘটনার পরই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দুর্ঘটনার পর উদ্ধার কাজে বিলম্ব, অকুস্থলে দিশেহারা যাত্রীদের মালামাল লুটপাট এমনকি লাশের শরীর থেকে গহনাপত্র খুলে নেয়ার মতো নৃশংস ঘটনাও ঘটে। মূল্যবোধের এই ভয়াবহ পতন ঠেকাতে প্রশাসনিক তত্পরতা নিশ্চয়ই যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। সে ক্ষেত্রেও আমাদের কর্তব্যবোধের অভাব প্রকট। আমরা মনে করি, প্রশাসনিক দিক থেকে সুশৃঙ্খল বিহিত ব্যবস্থা চালু না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের বিয়োগান্তক পরিণাম এড়ানো সম্ভব হবে না।
বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর অনুসারে গত ৪ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার দুর্গম হাওর এলাকার দারিয়া নদীতে লঞ্চ ও ট্রলারের সংঘর্ষে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের চেষ্টায় উদ্ধার করা হয়েছে ৪৭ জনের লাশ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভেসে গেছে আরও অনেক লাশ। উদ্ধার করা লাশের মধ্যে রয়েছে ১৭ জন মহিলা ও ২২ শিশু। ট্রলারডুবি তথা লঞ্চের সঙ্গে ট্রলারের সংঘর্ষের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ঘন কুয়াশাকে দায়ী করা হয়েছে। অর্থাত্ চালক বিপরীত দিক থেকে আসা নৌযান দেখতে পাননি। ফলে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সুনামগঞ্জগামী লঞ্চ আল-হেলাল করিমগঞ্জের চামড়া বন্দরগামী ট্রলার এমভি চান মিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ট্রলারে যাত্রী ছিল প্রায় দেড়শ। ছাদের যাত্রীরা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও ভেতরের যাত্রী বিশেষত শিশু ও নারীরা বের হতে পারেননি। তাদের বেশিরভাগেরই সলিল-সমাধি হয়েছে দারিয়ায়। এ ঘটনার ঘণ্টা তিনেক পর ঘটনাস্থলে গেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক, অতঃপর ঢাকা থেকে গেছে ডুবুরি দল। কিন্তু তারা তল্লাশি চালিয়ে কোনো লাশ পায়নি। ট্রলারডুবির ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে লঞ্চ ও ট্রলারের মালিকদের নামধাম ছাড়াই।
নৌ-দুর্ঘটনা সম্পর্কে আমাদের পূর্বাপর অভিজ্ঞতা হচ্ছে—অতিরিক্ত যাত্রী বহন, যান্ত্রিক ত্রুটি, ঝড়ঝঞ্ঝা, ডুবোচরে আটকে যাওয়া ইত্যাদি। আলোচ্য দুর্ঘটনায় এসব কারণ কাজ করেনি। যদ্দূর জানা গেছে, তাতে নিতান্ত খেলো একটি অজুহাত দাঁড় করানো হয়েছে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে। তা হচ্ছে ঘন কুয়াশা। শীতকালে সকাল ৯টার দিকে বিশেষত হাওর এলাকায় নদীপথে কুয়াশা কোনো নতুন ঘটনা নয়। এ কুয়াশার স্তর ভেদ করেই চিরকাল এসব নদীতে নৌযান চলাচল করে। এসব নৌপথের চালকদের কাছে কুয়াশাচ্ছন্ন পথ অজানা-অচেনা কিছু নয়। তার পরও একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ কী করে একটি যাত্রীবাহী ট্রলারকে ধাক্কা দিয়ে উল্টে দিতে পারে তা বিস্ময়কর বৈকি! এ ক্ষেত্রে চালকের অদূরদর্শিতা, অদক্ষতা এবং খামখেয়ালিকে কোনো অজুহাত দাঁড় করিয়ে লাঘব করার অবকাশ নেই। চালক সতর্ক থাকলে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা এড়ানো মোটেই অসম্ভব ছিল না। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গোটা শীতকাল নৌচলাচলের জন্য নিরাপদ মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত। এ সময় অনেকে স্থলপথের বদলে ভ্রমণ উপভোগ করতে নদীপথকে বেছে নেন। সেই আনন্দ ভ্রমণ যদি নিছক কুয়াশার কারণে বা চালকের অসতর্কতার জন্য সলিল-সমাধিতে পরিণত হয় তাহলে মানবিক সুরক্ষার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
উল্লেখ্য, আমাদের নৌপরিবহন সেক্টরে ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি নতুন কিছু নয়। বারবার ভয়াবহ দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও নৌপরিবহনে কোনো সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরে আসেনি। নৌপরিবহনে নজরদারি তথা তদারকির অভাব প্রতিটি দুর্ঘটনার পরই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দুর্ঘটনার পর উদ্ধার কাজে বিলম্ব, অকুস্থলে দিশেহারা যাত্রীদের মালামাল লুটপাট এমনকি লাশের শরীর থেকে গহনাপত্র খুলে নেয়ার মতো নৃশংস ঘটনাও ঘটে। মূল্যবোধের এই ভয়াবহ পতন ঠেকাতে প্রশাসনিক তত্পরতা নিশ্চয়ই যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। সে ক্ষেত্রেও আমাদের কর্তব্যবোধের অভাব প্রকট। আমরা মনে করি, প্রশাসনিক দিক থেকে সুশৃঙ্খল বিহিত ব্যবস্থা চালু না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের বিয়োগান্তক পরিণাম এড়ানো সম্ভব হবে না।
No comments