অশান্ত জাবি ক্যাম্পাস-শিক্ষার্থীদের স্বার্থ প্রাধান্য পাবে না?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের মারধরে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমদের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় ক্যাম্পাস উত্তপ্ত রয়েছে। শিক্ষার্থীরা মিছিল-সমাবেশ করে দোষীদের শাস্তি দাবি করছে। সাধারণ শিক্ষকরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। এ অবস্থায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তোলায় পদক্ষেপ গ্রহণের বিশেষ দায়িত্ব বর্তায় কর্তৃপক্ষের ওপর।
কিন্তু শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের হাতে শিক্ষক সমিতির সভাপতির লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে তাতে সন্দেহ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রক্টর বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনিই যদি অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ হয়ে ওঠেন, তার চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। প্রক্টর এবং তার সমর্থক শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতিকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রশাসনপন্থি এসব শিক্ষকের বক্তব্য : 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতিকে আক্রমণ করার সংবাদটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক।' তবে তাদের এ বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে হয় না। আমরা মনে করি, ছাত্রলীগের বিবদমান দুই গোষ্ঠীর বিবাদের জের ধরে একজন শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে পিটিয়ে হত্যা করার পর উদ্ভূত চরম অস্বস্তিকর পরিবেশ শান্ত ও স্বাভাবিক করে তোলার একটিই উপায় রয়েছে_ দোষীদের দ্রুত কঠোর দণ্ড প্রদান। এ ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ একজোট থাকবে এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটেনি। কখনও কখনও সময় আসে যখন শিক্ষার্থীদের কল্যাণে, প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে সব বিবাদ ভুলে একাট্টা হতে হয়। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিরাজ করছে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতি। শিক্ষকদের সাধারণ সভায় রোষ-ক্রোধের প্রকাশ ঘটেছে। শুক্রবার সমকালে 'শিক্ষক রাজনীতি পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করছে' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্যের একটি পদ শূন্য হয়েছে। এ পদে নিয়োগ পেতে শিক্ষকদের মধ্যে চলছে গ্রুপিং-লবিং।' এ অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাসের প্রত্যাশা সুদূরপরাহতই থেকে যাবে। শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নয়, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজনের খবর সংবাদপত্রে আসে। এমনিতেই শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক মেরুকরণ প্রকট। দেশের ক্ষমতার রদবদলের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের জন্য ১৯৭৩ সালে প্রণীত আইনটি এখন আর প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের কোনো পক্ষের কাছেই মূল্য বহন করে না। দলের পছন্দের কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে যা যা করণীয়, সবকিছু করায় তারা এক পায়ে খাড়া। যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তিনি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং বিশেষ করে শিক্ষা-গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় সর্বোত্তম ব্যক্তি কি-না সেটা আদৌ বিবেচনায় আসে না। আবার এই বিশেষ পদগুলো পেতে দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার জন্য চলে দলীয় শিক্ষকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং কখনও কখনও তা সাধারণ মূল্যবোধ ও শালীনতার সীমারেখা অতিক্রম করে। এ ক্ষেত্রে দলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যবহারের ঘটনাও ঘটে থাকে। কবে এ থেকে নিষ্কৃতি মিলবে কেউ জানে না। শুভবুদ্ধির জয় হোক, এই দাবিই কেবল করা যায়। জাহাঙ্গীরনগর এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক সংখ্যা কম নেই। শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টিতে তারা সক্রিয় হবেন, এটাও প্রত্যাশা থাকবে।
No comments