ভারতীয় বই দিয়ে হচ্ছে শিশুদের হাতেখড়িঃ এরা ভিন্ন সংস্কৃতির বাহক হতে বাধ্য
একেবারে শৈশব থেকে মানুষের সাংস্কৃতিক মননের ভিত গড়ে উঠতে শুরু করে। তাই দুনিয়ার সব দেশে শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরুর সময়কালে তাদের হাতে শিক্ষার এমন সব উপকরণ তুলে দেয়া হয়, যাতে শিশুমন দেশজ ও লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকে।
স্বাভাবিক কারণে আশা করা যায়, এসব শিশু বড় হয়ে নিজস্ব সংস্কৃতি এবং জাতীয় মর্যাদার প্রশ্নে হবে আপসহীন। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নজরদারিতে শিক্ষাঙ্গনে শিশুদের এই যে পথ চলা শুরু হয় তার লেশমাত্র দেখা যায় না আমাদের দেশে। ফলে শিশুদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ গড়ে ওঠার সুযোগ থেকে যায় উপেক্ষিত। এর একটি পরিষ্কার চিত্র ফুটে উঠেছে গতকাল আমার দেশ-এ প্রকাশিত ‘ভারত থেকে আসছে কোটি কোটি টাকার শিশুতোষ বই’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, শিশুদের বর্ণমালা ও ছড়া শেখার অন্তত চার কোটি টাকার বই প্রতি বছর আসছে ভারত থেকে। এসব বই দেশের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় অর্থাত্ প্লে, নার্সারি শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। মানের দিক থেকে ভারতীয় বই ভালো, এই বিবেচনায় অনেক অভিভাবকও স্বউদ্যোগে এসব বই কিনছেন। অথচ দেশের প্রায় দেড়শ’ প্রকাশনী উন্নতমানের শিশুতোষ বই প্রকাশ করছে। তাদের প্রকাশিত বইগুলো হালে পানি পেলে এভাবে ভারতীয় শিশুতোষ বইয়ে বাজার সয়লাব হয়ে যেত না।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই শিশুদের জন্য বর্ণ শেখার বই আসতে শুরু করে ভারত থেকে। সে সময় শিশুদের বর্ণমালা শেখার উপযোগী তেমন কোনো বই বাংলাদেশে ছিল না। দু’চারটা থাকলেও সেগুলোর মান উন্নত ও আকর্ষণীয় ছিল না। আশির দশক থেকে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা নিজস্ব উদ্যোগে শিশুদের জন্য বর্ণ পরিচয় ও ছড়ার বই প্রকাশ শুরু করে। এ ধরনের প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা এখন দেড়শ’র মতো। এরা উন্নতমানের শিশুতোষ বই তুলনামূলক কম দামে প্রকাশ করা সত্ত্বেও একশ্রেণীর অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে বিদেশি (এক্ষেত্রে ভারতীয়) বই এখনও যথেষ্ট আকর্ষণীয় রয়ে গেছে।
আমাদের ধারণা, যেসব অভিভাবক ভারতীয় শিশুতোষ বই ‘বেশি ভালো’ মনে করছেন তারা নিজেরাও সম্ভবত ভারতীয় বই দিয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেছিলেন। শিশুজীবনের সেই সূচনা তাদের অবচেতন মনে এমন ছাপ ফেলেছে যে, এখনও তারা দেশি বইকে নিকৃষ্ট হিসেবে দেখছেন। বিদেশি বইয়ের এই যে স্থায়ী প্রভাব, তা নিয়েই আমাদের যত উদ্বেগ।
বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজ হয়ে উঠেছে। দেশে দেশে সাংস্কৃতিক দেয়ানেয়া আগেও ছিল। বিশ্বায়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তি তাকে এখন অনেক বেগবান করেছে। এই ধারা চলতেই থাকবে। আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কথা বলছি না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা অবশ্যই আসবে। আমরা সেগুলো পড়ব, জানব, প্রয়োজনে সেখান থেকে কিছু গ্রহণও করব। কিন্তু তাই বলে আধো আধো কথা বলতে শেখা শিশুদের হাতে বিদেশি পাঠ্যবই তুলে দেয়া কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিংশ শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই আমরা আমাদের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উদযাপন করেছি। আর মাত্র এক বছর পর একুশ শতকের প্রথম দশক শেষ হয়ে যাবে। এখনও যদি আমাদের মেনে নিতে হয় যে আমরা শিশুদের শিক্ষা শুরুর উপযোগী ভালো বই প্রকাশ করতে অক্ষম, বিজাতীয় সংস্কৃতির বাহক বিদেশি বই ছাড়া প্রথাগত শিক্ষার সঙ্গে শিশুদের পরিচয় ঘটানো সম্ভব নয়, তবে সবাই মিলে গলায় দড়ি দেয়াই ভালো।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই শিশুদের জন্য বর্ণ শেখার বই আসতে শুরু করে ভারত থেকে। সে সময় শিশুদের বর্ণমালা শেখার উপযোগী তেমন কোনো বই বাংলাদেশে ছিল না। দু’চারটা থাকলেও সেগুলোর মান উন্নত ও আকর্ষণীয় ছিল না। আশির দশক থেকে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা নিজস্ব উদ্যোগে শিশুদের জন্য বর্ণ পরিচয় ও ছড়ার বই প্রকাশ শুরু করে। এ ধরনের প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা এখন দেড়শ’র মতো। এরা উন্নতমানের শিশুতোষ বই তুলনামূলক কম দামে প্রকাশ করা সত্ত্বেও একশ্রেণীর অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে বিদেশি (এক্ষেত্রে ভারতীয়) বই এখনও যথেষ্ট আকর্ষণীয় রয়ে গেছে।
আমাদের ধারণা, যেসব অভিভাবক ভারতীয় শিশুতোষ বই ‘বেশি ভালো’ মনে করছেন তারা নিজেরাও সম্ভবত ভারতীয় বই দিয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেছিলেন। শিশুজীবনের সেই সূচনা তাদের অবচেতন মনে এমন ছাপ ফেলেছে যে, এখনও তারা দেশি বইকে নিকৃষ্ট হিসেবে দেখছেন। বিদেশি বইয়ের এই যে স্থায়ী প্রভাব, তা নিয়েই আমাদের যত উদ্বেগ।
বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজ হয়ে উঠেছে। দেশে দেশে সাংস্কৃতিক দেয়ানেয়া আগেও ছিল। বিশ্বায়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তি তাকে এখন অনেক বেগবান করেছে। এই ধারা চলতেই থাকবে। আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কথা বলছি না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা অবশ্যই আসবে। আমরা সেগুলো পড়ব, জানব, প্রয়োজনে সেখান থেকে কিছু গ্রহণও করব। কিন্তু তাই বলে আধো আধো কথা বলতে শেখা শিশুদের হাতে বিদেশি পাঠ্যবই তুলে দেয়া কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিংশ শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই আমরা আমাদের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উদযাপন করেছি। আর মাত্র এক বছর পর একুশ শতকের প্রথম দশক শেষ হয়ে যাবে। এখনও যদি আমাদের মেনে নিতে হয় যে আমরা শিশুদের শিক্ষা শুরুর উপযোগী ভালো বই প্রকাশ করতে অক্ষম, বিজাতীয় সংস্কৃতির বাহক বিদেশি বই ছাড়া প্রথাগত শিক্ষার সঙ্গে শিশুদের পরিচয় ঘটানো সম্ভব নয়, তবে সবাই মিলে গলায় দড়ি দেয়াই ভালো।
No comments