পার্থ টেস্ট-আরও অন্ধকারে ভারত

প্রথম দিন শেষে ভারত ১২ রানে এগিয়ে! কথাটায় ভুল নেই। সমস্যা একটাই, ভারত ১৬১ রানে অলআউট আর অস্ট্রেলিয়া ১৪৯ তুলেছে কোনো উইকেট না হারিয়ে। মেলবোর্ন ও সিডনির দুঃস্বপ্ন ফিকে হতে না হতেই আরও অন্ধকারে ভারত। পার্থের প্রথম দিনই টেস্টের ফলাফল নিয়ে সংশয় প্রায় ঘুচিয়ে দিয়ে প্রশ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে একটাই—এবার কি আরও অপদস্থ হতে হবে ধোনির দলকে?


একটা সময় ছিল, যখন অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রায় সব দলের জন্যই বাঁধা ছিল এমন পরিণতি। রাম আর অযোধ্যার মতো সেই অস্ট্রেলিয়া আর নেই ভেবেই প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জয়ের হাঁকডাক শুনিয়েছিল ভারতীয় দল। এখন সিরিজটা শেষ হলে বাঁচে!
ওয়াকার ঘাসে ঢাকা বাউন্সি উইকেট দেখে দুই দলই নেমেছে চারজন ফাস্ট বোলার নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার জন্য এটি খুব ব্যতিক্রমী না হলেও ভারত সর্বশেষ চার ফাস্ট বোলার খেলিয়েছিল ২০ বছর আগে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই সিডনি টেস্টে।
অস্ট্রেলিয়ার চার ফাস্ট বোলার তাঁদের কাজটা ঠিকই করেছেন। ৪ উইকেট নিয়ে হিলফেনহস সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেও উইকেট পেয়েছেন সবাই। ৪-৩-২-১—এই ক্রমানুসারে। কিন্তু ভারতীয় চার পেসারের তো ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। ইশান্ত শর্মা ছিলেন সবচেয়ে হিসেবি, তার পরও ওভারপ্রতি ৫.৬০ রান! উমেশ যাদব ও অভিষিক্ত বিনয় কুমার তো যথাক্রমে ওভারে ৭ ও পৌনে ৮ করে দিয়েছেন। ‘এন্ড অব পোলিও’ আন্দোলনে যোগ দিয়ে দুই দলের খেলোয়াড়েরা সব হলুদ ফিতা বুকে লাগিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। ভারতীয় বোলাররা চোখের সামনেও ‘হলুদ’ নেচে বেড়াতে দেখেছেন। সরষে ফুলের রং তো হলুদই!
তা টেস্ট ম্যাচে বোলারদের বোলিং ফিগার এমন টি-টোয়েন্টিসুলভ বানিয়ে কে তাঁদের চোখে সরষে ফুল দেখালেন? কে আবার, ডেভিড ওয়ার্নার। গাট্টাগোট্টা এই ওপেনার ব্যাট হাতে কতটা বিধ্বংসী হতে পারেন, সেটি ক্রিকেট বিশ্বের জানা। তবে সেটি মূলত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। কিছুদিন আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটিতেও একটু সংযমের প্রদর্শনী ছিল। তবে কাল দেখা দিলেন আদি ও অকৃত্রিম রূপে। ৩৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। দ্বিতীয় ফিফটি এসেছে ৩৩ বলে। সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন বিনয় কুমারকে ওয়াইড লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে। টেস্ট ক্রিকেট এর চেয়ে কম বলে সেঞ্চুরি দেখেছে মাত্র তিনটি।
ওয়ার্নারের ব্যাটিং-তাণ্ডবে ১৫ ওভারেই ১১৭ রান তুলে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। ২০০২ সালের শুরু থেকে ধরলে টেস্টে প্রথম ১৫ ওভারে এটিই সর্বোচ্চ স্কোর। আগের কীর্তিটি ছিল বাংলাদেশের—২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকায় ১০৮ রান। ওয়ার্নার-ঝড় এসেছে ভারতের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা হয়ে। কাটা ঘা তো ব্যাটিং-ব্যর্থতার আরেকটি প্রদর্শনীতেই সম্পন্ন। সর্বোচ্চ বিরাট কোহলির ৪৪—২০১০ সালের ডিসেম্বরের পর এই প্রথম ভারতীয় ইনিংসে কোনো ফিফটি নেই।
চতুর্থ ওভারে শেবাগের শূন্য রানে আউট হওয়া দিয়ে যে ব্যর্থতার মিছিল শুরু, সেটিতে একটু বিরতি পড়েছিল লক্ষ্মণ-কোহলির ৬৮ রানের জুটিতে। পঞ্চম উইকেটে এই জুটি। এর আগেই ফিরে গেছেন প্রথম চারজন, ভারতীয় ক্রিকেটের তিন নক্ষত্রও। শেবাগের কথা তো বলাই হলো। ইংল্যান্ড সফরে একাই বুক চিতিয়ে লড়া দ্রাবিড়ের বয়স যেন হঠাৎই অনেক বেড়ে গেছে। সিরিজে পঞ্চম ইনিংসে চতুর্থবারের মতো বোল্ড হলেন। টেন্ডুলকার স্ট্রেট ড্রাইভে দারুণ শুরু করেছিলেন। তবে এবার আর সেঞ্চুরির জন্য আফসোস করার সুযোগও রাখলেন না। ১৫ রানেই বিদায়, হ্যারিসের একটু ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লু।
বিশ বছর আগে এই পার্থেই দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি ছিল সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ টেন্ডুলকারের। সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনার বদলে ফেরালেন তিনি অভিষেক টেস্ট ইনিংসের স্মৃতি। সেটিও যে ১৫! তথ্যসূত্র: এএফপি ও ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.