চরাচর-হারিয়ে যাচ্ছে উল্লুক by আজিজুর রহমান

বাংলাদেশ বিশ্বের চরম ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না এ দেশের বন্য প্রাণীরা। শুধু জনসংখ্যার চাপ নয়, মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের জন্যও বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব এখন চরম হুমকির মুখে। আবহাওয়াগত কারণে বন্য প্রাণীর জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত উপযোগী হলেও বন নিধন ও ক্রমবর্ধমান উপদ্রবের কারণে প্রাকৃতিক বনের এই প্রাণীরা নির্মমভাবে ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।


একসময় লজ্জাবতী বানর, চশমা বানর, প্যারাল্লা বানর, কুলু বানর, মুখপোড়া হনুমান, গিবন বা উল্লুকসহ আরো কয়েক প্রজাতির বানর অবাধে বিচরণ করত দেশের বিভিন্ন বনাঞ্চলে। অনেক প্রজাতি বানরের মধ্যে আমাদের দেশের একমাত্র উন্নত বানর প্রজাতি হচ্ছে উল্লুক বা গিবন। ইংরেজি নাম Hoolock Gibbon আর বৈজ্ঞানিক নাম Hylobates hoolock। উল্লুক, উল্লুবানর বা বনমানুষ_এরা একই প্রাণী। একেক জায়গায় এদের একেক নাম। বাংলাদেশের একমাত্র লেজবিহীন কালো বদামি রঙের দারুণ লম্বা যুগল হাত-পায়ের অধিকারী এই বানর প্রজাতি। উল্লুক সোজা হয়ে দাঁড়ালে প্রায় তিন ফুটের মতো লম্বা হয়। ওজন পাঁচ থেকে ছয় কেজি হয়ে থাকে। এরা লম্বা হাতের সাহায্যে এক ডাল থেকে অন্য ডালে এত দ্রুত চলতে পারে যে চোখের পলকেই গভীর বনে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। জোড়া বেঁধে বাচ্চাসহ চারটি উল্লুক একসঙ্গে বাস করে। পাখির ছানা, ডিম, গাছের কচি পাতা, মুকুল, ফুল ও ফল এদের প্রধান খাদ্য। শীত মৌসুমে এরা বাচ্চা প্রসব করে। মানুষের দেহের সঙ্গে এদের দেহের যথেষ্ট মিল রয়েছে। এদের বুদ্ধিও অন্য সব স্তন্যপায়ী বন্য প্রাণীর চেয়ে উন্নত। এরা গোয়েন্দা কাজেও বেশ দক্ষ। এদের কাজে লাগিয়ে বনের অনেক অজানা তথ্য সংগ্রহ করা হয়। একসময় শেরপুর জেলার গজনির গভীর অরণ্যে এবং বালিঝুরি রেঞ্জের শালবনে প্রচুর উল্লুক অবাধে বিচরণ করত। এখন আর এসব এলাকায় এদের দেখা যায় না। তবে সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে কিছু উল্লুক দেখা যায়। কিন্তু সংখ্যায় এরা খুবই নগণ্য। নির্বিচারে বনভূমি উজাড় আর যত্রতত্র জনবসতি গড়ে ওঠায় আবাস হারাচ্ছে বহু বন্য প্রাণী। ফলে সংকটাপন্ন হয়ে এসব প্রাণী দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। বন্য প্রাণী বিলুপ্তি ও ক্রমহ্রাসের কারণে পরিবেশের ব্যাপক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ ঋতু-বৈচিত্র্যের দেশ। সাগর-নদী-পাহাড়, বন-বনানী, হাওর-বাঁওড় ও বিল-ঝিলের দেশ। বন্য প্রাণী রক্ষায় এখানে অভয়ারণ্য ও আশ্রয় গড়া অনেক সহজ ও সুবিধাজনক। এ বিষয়ে সরকার, বেসরকারি সংগঠন ও ব্যক্তিপর্যায়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতাও সৃষ্টি করতে হবে।
আজিজুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.