জানুয়ারিতে কমিটির ইঙ্গিত, প্রাধান্য পাবে ছাত্রত্ব-প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্রদলের নতুন কমিটি হচ্ছে না by শরিফুল হাসান

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন কমিটি হচ্ছে না। তবে জানুয়ারি মাসেই নতুন কমিটি হবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এই কমিটিতে বয়স নয়, প্রাধান্য দেওয়া হবে ছাত্রত্ব। আগামীকাল ১ জানুয়ারি উদ্যাপিত হবে ছাত্রদলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বলেছেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। তাই তাঁরা আশা করেছিলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু তা হচ্ছে না বলে বেশির ভাগ


নেতা-কর্মী হতাশ। তাঁরা বলেন, বিএনপির সবচেয়ে বড় শক্তি ছাত্রদল। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে সংগঠনটি প্রায় নির্জীব হয়ে পড়ে ছিল। ছাত্রদলকে গোছাতে সুলতান সালাউদ্দিনকে সভাপতি ও আমিরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০০৯ সালের ১ জুলাই ছয় মাস মেয়াদি কমিটি করা হয়। এ কমিটি ছাত্রদলকে সংগঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে নিষ্প্রভ থাকা, জেলা কমিটি গঠন নিয়ে বাণিজ্য, কর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এ কমিটি তৃণমূলের আস্থা হারিয়েছে।
ছাত্রদলের একজন যুগ্ম সম্পাদক বলেন, কমিটির শীর্ষ দুই নেতার ব্যর্থতায় সংগঠনে সাত থেকে আটটি উপদল হয়েছে, কোন্দল বেড়েছে। এর জের ধরে মারামারি এমনকি মহানগরের এক নেতাকে হত্যার চেষ্টাও হয়েছে। এ ছাড়া ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহী নেতা-কর্মীদের হামলায় ছাত্ররাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হয় ছাত্রদল। সেই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছাত্রদল। এর প্রভাবে সারা দেশে সংগঠন নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্দোলনে রাজপথে বিএনপির মূল ভরসা ছাত্রদল। কাজেই, ছাত্রদলকে আগের মতো সক্রিয় করতে হলে দ্রুত নতুন কমিটি করা দরকার। এটি এখন সংগঠনের প্রতিটি নেতা-কর্মীর দাবি।’
সহ-সাধারণ সম্পাদক তরুণ দে বলেন, ছাত্রদলকে জাগ্রত করতে নতুন কমিটির বিকল্প নেই। একই কথা বলেন ক্রীড়া সম্পাদক আহসানুল হক। ছাত্রদল কর্মী মফিজুর রহমান নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে বলেন, এই সময়ে এর চেয়ে বড় কোন দাবি নেই নেতাকর্মীদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হায়দার আলী বলেন, ‘বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নেতা-কর্মীরা নতুন কমিটি চাইবেন, এটিই স্বাভাবিক। আমরাও চাই। তবে কমিটি দেওয়া নির্ভর করে বিএনপির হাইকমান্ডের ওপর। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তবে হাইকমান্ডও কমিটি দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে না হলেও শিগগিরই হয়তো কমিটি হবে।’
বিএনপি ও ছাত্রদলের সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিছুদিনের মধ্যে নতুন কমিটি গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিবসহ প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার কারণে তা হয়নি। সর্বশেষ চলতি বছরের জুলাইয়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। বিশেষ করে ১০ ও ১১ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগেই নতুন কমিটি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে চেয়েছিল ছাত্রদল। কিন্তু সভাপতিসহ সংগঠনের কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় প্রক্রিয়াটি থেমে যায়। পরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সামনে রেখে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়। কিন্তু ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীতে চোরাগোপ্তা হামলা, যানবাহন ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সুলতান-আমিরুল-শহীদুলসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় এই প্রক্রিয়াও পিছিয়ে যায়। তাই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কমিটি হচ্ছে না। এ ছাড়া ৮ ও ৯ জানুয়ারি চারদলীয় জোটের চট্টগ্রামে রোডমার্চ থাকায় এর আগে কমিটি হচ্ছে না। তবে জানুয়ারিতে কমিটি গঠনের ইঙ্গিত রয়েছে।
ছাত্রদলের তরুণ নেতা-কর্মীদের দাবি, ছাত্রলীগের মতো ছাত্রদলের কমিটিও তরুণদের দিয়ে করা হোক। তাঁরা বলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বয়স এখন ২৯ বছরের নিচে। অথচ ছাত্রদলের শীর্ষ পদের দুই নেতার বয়স ৪৫ পেরিয়েছে। এ কারণে ছাত্রনেতা হিসেবে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা নেই। তবে অপেক্ষাকৃত বয়সী নেতারা বয়সের এই বাধ্যবাধকতার বিপক্ষে।
ছাত্রদলের নতুন কমিটি কবে নাগাদ হবে—জানতে চাইলে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সাংসদ শহীদ উদ্দীন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন হয়তো হবে না, তবে জানুয়ারিতেই আমরা নতুন কমিটি করব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অতীতে যাঁরা ছাত্রদলের জন্য ভূমিকা রেখেছেন এবং সংগঠন চালাতে পারবেন, এমন নেতাদের নিয়েই কমিটি করা হবে। এ ক্ষেত্রে বয়সের চেয়ে আমরা গুরুত্ব দেব নিয়মিত ছাত্রদের। কারণ, নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে কমিটি হলে এমনিতেই কম বয়সীরা চলে আসবে। এ ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ যাঁরা বাদ পড়বেন, তাঁদের বিএনপি, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে পদ দেওয়া হবে।’
ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের একটিই কথা, কমিটি না হওয়ার কারণেই ছাত্রদল যেমন দুর্বল হয়েছে, তেমনি তৈরি হয়েছে নানা কোন্দল, উপদল, বেড়েছে তরুণদের মধ্যে হতাশা। একমাত্র নতুন কমিটিই পারে সব সমস্যা দূর করে ছাত্রদলকে সক্রিয় করতে। কাজেই যত তাড়াতাড়ি কমিটি হবে, ততই বিএনপি ও ছাত্রদলের মঙ্গল।

No comments

Powered by Blogger.