আবার আসছে অশনি সংকেত by আতাউস সামাদ
গত সপ্তাহের লেখায় আলোচনার সূত্র ধরেছিলাম এ বিষয় নিয়ে যে, মহাজোট তথা আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বছর শেষ হতে চলেছে বলে এখন ও আগামী কিছুদিন বর্তমান শাসকদের কাজকর্ম, বিশেষ করে তারা জনগণ যেসব সমস্যায় কষ্ট পাচ্ছেন, সেগুলো দূর করতে বা সেগুলোর তীব্রতা কমাতে কতটুকু সফল বা ব্যর্থ হয়েছে মুখে মুখে সেই হিসাব-নিকাশ চলবে। দেশের মানুষ এও দেখবেন যে, তাদের চলমান যন্ত্রণাগুলোর সঙ্গে ক্ষমতাসীনরা নতুন কোনো কষ্ট বা উপসর্গ যোগ করলেন কিনা।
দেশে রাজনৈতিক সরকার থাকলে জনগণ সাধারণত এভাবেই চিন্তা করেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশেও এ রকম চিন্তাধারাই লক্ষ্য করা যায়।মাত্র ক’দিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি অঙ্গরাজ্য নিউজার্সি ও ভার্জিনিয়াতে গভর্নর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো; আর নিউ ইয়র্ক শহরে হলো মেয়র নির্বাচন। তিনটাতেই প্রেসিডেন্ট ওবামার ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। নিউ ইয়র্কে মেয়র পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্লুমবার্গ। যে দুটো অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাটদের হারিয়ে রিপাবলিকানরা জয়ী হয়েছেন, সেগুলোয় মাত্র এক বছর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট বারাক ওবামা জয়ী হয়েছিলেন। এবার গভর্নর নির্বাচনের সময় প্রেসিডেন্ট ওবামা তার দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে একাধিকবার নিউজার্সি সফরও করেছিলেন। তাতেও তার দলের পরাজয় ঠেকানো যায়নি। সদ্য অনুষ্ঠিত গভর্নর নির্বাচনে অধিকাংশ ভোটার বলেছেন, তারা প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রতি বিরক্ত নন, কিন্তু তবুও এবার তাদের ভোটের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চান যে, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উত্কণ্ঠা ও উদ্বেগ কাটেনি। তারা এখনও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন, বিশেষত বেকারত্ব পরিস্থিতি নিয়ে। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে তারা দেখছেন, প্রচণ্ড অর্থনৈতিক মন্দার দরুন কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে যাদের চাকরি গিয়েছিল তারা দেড়-দুই বছর পরও কাজ পাচ্ছেন না। নতুন কর্মসংস্থান তো হচ্ছেই না। সম্প্রতি মোটর গাড়ি প্রস্তুতকারক মার্কিন বিশাল কোম্পানি জেনারেল মোটর্স আবার লাভের মুখ দেখেছে। ওবামার সরকারের জন্য এ ছিল সুখবর, কারণ মার্কিন অন্য বড়-বড় শিল্প, ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির মতো জেনারেল মোটর্সও দেউলিয়া হতে বসেছিল। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই এসব কোম্পানিকে সরকারি তহবিল থেকে বিরাট অংকের অর্থ সাহায্য দিয়েছিলেন। এসব কোম্পানি এখন লাভের মুখ দেখলে সরকার তার তথা করদাতাদের টাকাটা ফেরত পাবে, প্রেসিডেন্ট ওবামাও ঝুঁকিমুক্ত হবেন। জেনারেল মোটর্সের মতো আরও কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান, বিশেষত ব্যাংক, নতুন করে মুনাফা অর্জন করছে। মার্কিন শেয়ারবাজারের জন্যও এগুলো সুখবর। যুক্তরাষ্ট্রে বস্ল মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোক বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনে রাখেন। এসব শেয়ারই তাদের সঞ্চয় এবং এর লভ্যাংশই তাদের অবসর জীবনের পাথেয়। এদিক থেকে দেখলে ডুবতে বসা কোম্পানিগুলো সরকারি সহায়তায় ভেসে ওঠার ঘটনাটি প্রেসিডেন্ট ওবামা ও তার দলের পক্ষে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু গভর্নর নির্বাচনে তা হলো না কেন? হলো না মানুষজন চাকরি পাচ্ছেন না বলে। লাভে ফিরে আসা কোম্পানিগুলো তাদের খরচ কমিয়ে রাখার লক্ষ্যে বর্তমান সঙ্কুচিত জনবল দিয়েই কাজ চালানোর নীতি নিয়ে চলছে। এর ফলে বর্তমানে কর্মহীন, আয়হীন সাধারণ ও গরিব মার্কিনিরা গত বছরের মতোই বিপদগ্রস্ত আছেন। প্রেসিডেন্ট ওবামার এক বছর বয়সী সরকার এখনও তাদের উদ্ধার করতে পারেনি। আর তাই তারা ভোট দেয়ার সুযোগ পাওয়া মাত্র ব্যালটের মাধ্যমে তাদের অসন্তুষ্টির কথা জনিয়ে দিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামা ও তার দলকে। ওবামা যদি তিন বছর পর প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হতে চান, ডেমোক্র্যাট দলীয়রা যদি কেন্দ্রে ও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে চান এবং কংগ্রেস ও সিনেটের নিয়ন্ত্রণে থাকতে চান, তাহলে তাদের মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা করতে, বিশেষ করে ব্যাপকভাবে নতুন কর্মসংস্থান করার জন্য নতুন কৌশল বের করতে হবে এবং তত্পর হতে হবে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, গত শুক্রবার মার্কিন সরকারের তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের সর্বশেষ হার দাঁড়িয়েছে শতকরা ১০। সাম্প্রতিককালে সে দেশে এত বেশি বেকারত্ব আর দেখা যায়নি। নিউজার্সিতে আরেকটি সমস্যা ছিল দুর্নীতি। দীর্ঘদিন ধরে ডেমোক্র্যাটদের দ্বারা শাসিত এই অঙ্গরাজ্যের সরকারে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছিল। কিছুদিন আগে একটি দুর্নীতির মামলায় রাজনীতিকসহ ৩০ জন গ্রেফতার হয়েছেন। মামলাটির বিষয় হলো, প্রতিস্থাপনের জন্য বেআইনিভাবে দেশে ও বিদেশে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করা। ভোটাররা এই দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ভোট দিয়েছেন।
সমস্যাটা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নয়, ইউরোপেও দেখা যাচ্ছে। ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভদের জনপ্রিয়তায় চলছে ভাটা। ফলে প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন ও তার সরকার অনমনীয় থেকে লয়েডস ব্যাংক ও রয়েল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ডকে বাধ্য করেছে, তাদের মালিকানাধীন অনেক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা বিক্রি করে দিতে। তাদের কথা হলো, এর ফলে ওই দুই ব্যাংকসহ তাদের হাত থেকে বের করে নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো মনোযোগ দিয়ে ব্যবসা করবে এবং বড় ব্যাংকের কর্তারা সাবসিডিয়ারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লাভ মূল প্রতিষ্ঠানের খাতায় তুলে অস্তিত্বহীন আয় দেখাতে পারবেন না। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, যেসব বড় ব্যাংকের কর্ণধাররা নিজেদের মহাক্ষমতাবান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে সব জবাবদিহিতার বাইরে চলে গিয়েছিলেন তাদের পা আবার মাটিতে এসে ঠেকবে। সরকারের ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এসব ‘কাট টু সাইজ’ কাজ করা দরকার ছিল ব্রিটেনে। আরও বেশি দরকার প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের টিকে থাকার জন্য।
অন্যদিকে অস্বস্তিতে পড়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ও তার সরকার। জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচন হয়ে গেল মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে। মার্কেল পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন এবং সরকার গঠন করেছেন গত ২৮ অক্টোবর। নির্বাচনের সময় ইস্যু ছিল অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বেকারত্ব কমিয়ে আনা। আর তখন বড় সমস্যা সৃষ্টি করেছিল সেই মার্কিন মোটর কোম্পানি জেনারেল মোটর্স। ইউরোপে ওই কোম্পানির একটি বড় কারখানা ও ব্র্যান্ড আছে ওপেল নামে। কারখানাটি জার্মানিতে অবস্থিত। আর্থিক লোকসানের দরুন জেনারেল মোটর্স ওপেল বন্ব্দ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কারখানাটি বন্ব্দ হলে হাজার হাজার জার্মান শ্রমিক বেকার হয়ে যেত। তেমনটা ঘটলে মার্কেলের জনপ্রিয়তা মস্ত ধাক্কা খেত। তাই তিনি ও তার সরকার আদাজল খেয়ে বিশ্বব্যাপী তল্লাশি চালিয়ে একটি কানাডীয় প্রতিষ্ঠানকে জোগাড় করে ওপেল কোম্পানি কিনে নেয়ার জন্য। জেনারেল মোটর্স সেই সময়ে এই হাত বদলে রাজি হয়েছিল। কিন্তু এখন জেনারেল মোটর্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লাভের মুখ দেখামাত্র ঘোষণা করেছে যে, তারা ওপেল বিক্রি করবে না। কিন্তু তারা এও বলেছে, জার্মানিতে কারখানা ও ব্যবসা চালু রাখতে হলে খরচ কমাতে হবে এবং তার ফলে ১০ হাজার জার্মান দক্ষ কারিগর ও শ্রমিক চাকরি হারাবেন। এই দুঃসংবাদ জার্মান সরকারের জন্য মহা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। অর্থাত্ পুনর্নির্বাচিত হয়েও ক্ষমতার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করে চ্যান্সেলর মার্কেল ও তার দল একটি কঠিন সমস্যার মধ্যে আটকেই থাকল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও জার্মানির নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সেই দেশগুলোর সরকারগুলো শিরঃপীড়ায় ভোগা ও গলদঘর্ম হয়ে থাকার যে কাহিনীগুলো এখানে তুলে ধরলাম, তাকে যদি কেউ ধান ভানতে শিবের গীত গেয়েছি বলে মনে করেন, তাহলে বিনয়ের সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে বলব, এ আমার ভাব প্রকাশের ব্যর্থতা। আমি যা বলতে চেয়েছি তা হলো, দেশে-দেশে জনগণ ক্ষমতাসীনদের যাচাই করে শেষোক্তরা তাদেরকে দেয়া দায়িত্ব কার্যকরভাবে পালন করে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় সুখ-শান্তি আনতে পারলেন কিনা, আর তা না পারলে অন্ততপক্ষে জীবন সহনীয় রাখতে পারলেন কিনা তাই দিয়ে। আর সত্যিকার অর্থে নিজের সিদ্ধান্তমাফিক ভোট দেয়ার সুযোগ যদি তাদের থাকে বা স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার ও তা ব্যবহার করার পরিস্থিতি যদি থাকে, তাহলে তারা প্রথম সুযোগেই তাদের মূল্যায়ন ভালোভাবেই জানিয়ে দেন।
বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাজোট তথা আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত হবে, এদিকে একটু স্লঁশজ্ঞান নিয়ে খেয়াল রাখা। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেশ পরিষ্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে, বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর সফল টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও সরকারি-আধাসরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পদ ছিনতাইকারীরা ছাড়া আর কেউ সুখে নেই। বিদেশের যে উদাহরণগুলো দিয়েছি বাংলাদেশের সঙ্গে সেগুলোর প্রাসঙ্গিকতা এখানেই।
সরকার নিজেও যে তার ব্যর্থতার খবর জানে না, তা নয়। তারা জানে। আজকাল সরকারি দলের লোকজন ও সমর্থকদের মুখ ফস্কে তাদের সরকারের ব্যর্থতা ও দলের লোকদের নানা কুকর্মের কথা বেরিয়ে পড়ছে। কিন্তু সে রকমটা হচ্ছে নেহায়েতই তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। তাই চাপাবাজি-গলাবাজি করে অপকর্ম ও ব্যর্থতা ছাইচাপা দেয়ার প্রচেষ্টা নিরন্তর বিদ্যমান। এর থেকে কিন্তু দেশের জন্য মহাবিপদ দেখা দিতে পারে। তা হলো, সরকার নিজের অসত্য ভাষণকে এক সময় নিজেই সত্য বলে বিশ্বাস করতে শুরু করবে। আর তখন সমালোচনা তো দূরের কথা, কেউ যদি দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্য বিনয় সহকারে প্রকৃত সত্যও সরকারের কাছে তুলে ধরেন. তা সহ্য করবেন না ক্ষমতাসীনরা। বাংলাদেশের শাসকদের মধ্যে এই সর্বনাশা বদভ্যাসটি বার বার পরিলক্ষিত হয়েছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে বিনম্র চিত্তে হলেও বলি, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫-এর আওয়ামী-বাকশাল আমলে সম্ভবত এমনই হয়েছিল। ‘সম্ভবত’ শব্দটি ব্যবহার করলাম এ জন্য যে, ১৯৭২ সালের মার্চ মাস থেকে ১৯৭৬ সালের আগসল্ট পর্যন্ত বিদেশে আমার কর্মস্থল ছিল বলে মাসখানেকের এক ছুটি বাদ দিয়ে পুরো সময়টা আমি দেশের বাইরে ছিলাম। তবে দিল্লিতে থাকতাম বলে প্রতাপ ও প্রভাবশালী কিছু বাংলাদেশীর সঙ্গে দেখা হয়েছে। তাদের কথাবার্তা শুনে আমার মনে হতো, তারা বুঝেও তাদের ভুল বুঝতে চাইতেন না। দেশে ফিরে অন্য ক্ষমতাসীনদের মাঝেও একই ধরনের আচরণ এবং ঔদ্ধত্য লক্ষ্য করেছি। কিন্তু নিয়তি কাউকেই ছাড় দেয়নি। তাই নিকট অতীত থেকে শিক্ষা নিলে ক্ষতি কী? বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে অনুরোধ করব, খাদের কিনার থেকে সরে আসায় মনোযোগী হতে। এ জন্য এখনও সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, তাদের হাতে আরও চার বছর সময় আছে। গত দশ মাস যে ঘৃণ্য দলবাজি আমরা দেখেছি, সরকার ও সরকারি দল যদি এখনও তা থেকে দূরে সরে আসে এবং দুর্নীতির পাহাড়টিকে আর উঁচু না হতে দেয় তাহলে আগামী নির্বাচন এসে যেতে যেতে মানুষ এরই মধ্যে ঘটে যাওয়া অনেক অপকর্মের কথা ভুলে যেতে রাজি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নিজে যদি এ বিষয়ে উদ্যোগী হন তাহলে হয়তো তার সহকর্মীরা একটু সতর্ক হবেন। ওই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অনেকেই নিজ নিজ অপকীর্তি বা অযোগ্যতা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে রাখার জন্য এবং দলনেত্রীকে খুশি করার মতলবে বিরোধীদলীয়দের ২৪ ঘণ্টা উত্ত্যক্ত করছেন। এমনকি নিজেদের জন্য অসুবিধাজনক ও অস্বস্তিকর বিতর্ক সৃষ্টি করছেন। হেরে গেলে বা চোরাবালিতে পা আটকে গেলে সংবাদ মাধ্যমকে দোষারোপ করছেন। প্রকৃতপক্ষে এদের অনেকের প্রগলভতা এখন সাধারণ মানুষের কাছেও অসহ্য ঠেকছে।
তবে জনগণ সরকারকে বিবেচনা করবে কোনো নেত্রী বা উপনেত্রী বা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর কথা দিয়ে নয়, কাজ দিয়ে। অর্থনীতি ও আইন-শৃগ্ধখলার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের কাজের ফলাফল প্রায় শূন্য। বিশ্ব অর্থনীতি থেকে এরই মধ্যে কিছু অশনি সঙ্কেত এসেছে। তার একটি হলো গত সপ্তাহে জ্বালানি তেলের দামে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দেয়া। ২ নভেম্বর তেলের দাম হঠাত্ বেড়ে ৭৬ দশমিক ৫৫ ডলার হয়ে যায়। তারপর গত শুক্রবার দাম খানিকটা কমে ব্যারেলপ্রতি ৭৫ দশমিক ৬১ ডলার হয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওই একইদিনে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম থাকে ব্যারেলপ্রতি ৭৭ দশমিক ৪৩ ডলার। খবরে দেখলাম, একটি বড় জ্বালানি কোম্পানির প্রধান বলছেন, অতি সস্তায় জ্বালানি তেল বিক্রি হওয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে। এখন তিনি আশা করছেন, তেলের দাম কিছুদিনের ভেতর ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারে উঠতে পারে। জ্বালানি তেলের দাম বাংলাদেশের ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। তথা জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে বাংলাদেশে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। কারণ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল দিয়ে চলে। পরিবহন খাতে ডিজেল তেলের ব্যবহার ব্যাপক। এদেশের প্রায় সব রেল ইঞ্জিন তেলে চলে। বাস, ট্রাক ও নৌযানও ডিজেলের ওপর নির্ভরশীল। ডিজেলের দাম বাড়লে যানবাহনের ভাড়া বাড়বেই। কৃষিতে সেচের ব্যয়ও বাড়বে। এসব কারণে দেশকে আরেক দফা মূল্যসম্ফীতির মোকাবিলা করতে হবে। এ রকম একটা করে নতুন সমস্যা যদি ক্রমাগত যোগ হতে থাকে বা পুরনো সমস্যা নতুন করে দেখা দেয়, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে হিমশিম খেতে হবে। আর জনগণ যেহেতু এখনই চরম কষ্টের মধ্যে আছে, তখন তাদের অবস্থা আরও দুঃসহ হবে। আওয়ামী লীগ সরকার যদি মনে করে থাকে যে, ও রকম পরিস্থিতিতে নিত্যনতুন রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি করে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখবে, তাহলে তারা সেই গুড়ে এখনই বালি দিয়ে রাখতে পারে।
No comments