জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল-বাড়বে মূল্যস্ফীতি ও জনদুর্ভোগ

বার বাড়ানো হলো জ্বালানি তেলের দাম। সরকারের নিজস্ব নিয়মের বাইরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর চতুর্থবারের মতো সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল। জ্বালানি তেলের এই বর্ধিত মূল্যের প্রভাব পড়বে জনজীবনে। সব ধরনের পণ্যের দামই এ ক্ষেত্রে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের নিজস্ব একটি আইন আছে। দাম বাড়ানোর আগে গণশুনানি করতে হয়। এর আগে দাম


বাড়ানোর সময়ও গণশুনানি হয়নি। এবারও গণশুনানি করা হয়নি। নির্বাহী আদেশে বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। অর্থাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে নিজস্ব আইনি বাধ্যবাধকতা সরকার নিজেই যে মানছে না, চতুর্থবারের মতো মূল্যবৃদ্ধি সেটাই প্রমাণ করে। সরকারের আইনে বছরে একবারের বেশি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো যায় না। কিন্তু চলতি বছরের ৫ মে, ১৮ সেপ্টেম্বর এবং ১০ নভেম্বর_এই তিন দফা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। বৃহস্পতিবার সরকার তেলের দাম বাড়ানোর এই ঘোষণা দেয় এবং তা রাত ১২টা থেকেই কার্যকর হয়। নতুন মূল্যহার অনুযায়ী, দেশে ভোক্তাপর্যায়ে প্রতি লিটার ডিজেল ৬১ টাকা, কেরোসিন ৬১ টাকা, অক্টেন ৯৪ টাকা, পেট্রল ৯১ টাকা ও ফার্নেস অয়েল ৬০ টাকা দরে বিক্রি হবে। সরকারের পক্ষ থেকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে একটি সাফাই যুক্তিও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, 'গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। দেশে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য চলতি অর্থবছরে অতিরিক্ত প্রায় ২০ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে তেল আমদানি করতে গিয়ে সরকারের ভর্তুকি বেশি দিতে হচ্ছে। দাম না বাড়ালে জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রাখা সরকারের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দাম না বাড়ালে সরকারের অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় ব্যয়সহ উন্নয়ন ব্যয় কমাতে হবে, যা কাম্য নয়। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে সরকারের ঋণগ্রহণ অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। এ কারণে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।' জ্বালানি তেলের সঙ্গে অনেক কিছু নির্ভর করে। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে, শিল্প-কারখানায় ও পরিবহন খাতে ব্যবহৃত হয় ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল। এই দুই ধরনের তেলের দামই বেড়েছে। তেলের দামের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে পরিবহনের ভাড়া। পরিবহন ভাড়া শুধু যে যাত্রী পরিবহনে বাড়বে তা নয়, পাশাপাশি পণ্য পরিবহনেও ভাড়া বাড়বে। সেই বর্ধিত ভাড়া তুলে নেওয়া হবে বিক্রীত পণ্য থেকে। আবার উৎপাদন খাতে এই বর্ধিত মূল্য ফেলবে নেতিবাচক প্রভাব। আর অবধারিত ফল হিসেবে বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে বাড়বে মূল্যস্ফীতি, বাড়বে জনদুর্ভোগ। এই মূল্যস্ফীতি কমাতে গিয়ে আবার যদি টাকার অবমূল্যায়ন হয়ে যায়, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। বছরের শেষার্ধে এসে জ্বালানি তেলের এই মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য সুখবর নয়।

No comments

Powered by Blogger.