রেলের দুরবস্থা-আধুনিকায়ন ও বিস্তৃতিতেই উন্নতি
রেলের দুরবস্থা সাধারণ নাগরিকদেরও জানা। আর যারা রেলে ভ্রমণ করেন তারা তো নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়েই উপলব্ধি করেন এই গণপরিবহনটির বেহাল অবস্থা। শুক্রবার সমকালের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত রেলের ওপর রিপোর্টটি মানুষের জানা ও হতাশ করা উপলব্ধিরই পরিশীলিত প্রকাশ। রিপোর্টে দেখা যায়, রেলের আধুনিকায়ন, সেবা কোনোটাই বাড়েনি। এমনকি গত তিন বছরে এক কিলোমিটার নতুন লাইনও স্থাপন করা হয়নি। তবে ভাড়া বাড়িয়ে ও বিনাটিকিটে
ভ্রমণ সংখ্যা হ্রাসের ফলে আয় সামান্য বেড়েছে। কিন্তু তাতেও লোকসানের খেরোখাতা থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে তার মর্যাদাহানিকর লোকসানি প্রতিষ্ঠানের উপমাটি ঝেড়ে ফেলতে পারেনি। অথচ বিশ্বের তাবৎ রেল পরিবহনই লাভজনক অবস্থায় দাপটের সঙ্গে সেবা ও আওতা বাড়িয়ে চলেছে। তাই অন্যরা যা পারে, রেলের ক্ষেত্রে আমরা তা করতে পারি না কেন_ এ প্রশ্নটি তির্যকভাবে আসাটাই স্বাভাবিক। নবনিযুক্ত রেলমন্ত্রী সর্বব্যাপী রেলের ভবিষ্যৎ উন্নতির টুকরো টুকরো চিত্র আঁকতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এতে এই গণপরিবহন ব্যবস্থাটির সার্বিক উন্নতি হবে কিনা_ তার নিশ্চয়তা কি দেওয়া যায়! অবশ্য মন্ত্রীও সে রকম দাবি করেননি। বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত উন্নয়নের চেষ্টা যে এই খাতকে বাড়তি প্রণোদনা জোগাতে পারবে না, তা বলাই বাহুল্য। রেলের সেবার মান উন্নত করা, প্রয়োজনীয় কোচ, ইঞ্জিন, জনবল, আধুনিক সিগন্যালিং সিস্টেম যুক্ত করা, লাইনের পরিধি বৃদ্ধি করা, একপ্রেসওয়েগুলোতে ডবল লাইন বসানো, পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন বাতিল করে নতুন উচ্চগতির ও জ্বালানিসাশ্রয়ী ইঞ্জিন যুক্ত করাসহ অনেক কিছুই করার রয়েছে রেলকে নিয়ে। তাই রেলকে নিয়ে একটি ভিশন দরকার এবং এ ভিশন অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়ার জন্য ধাপওয়ারি মিশনও প্রয়োজন। এভাবে একটি দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার অধীনে রেলের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হলে এবং সে অনুযায়ী অর্থসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে রেলওয়ে শুধু যে তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে তা নয়, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে রেল পরিবহন যোগসূত্র হিসেবে তার কাঙ্ক্ষিত ভূমিকাও পালনে সক্ষম হবে। রেলে ভাড়া কম, দুর্ঘটনার হারও কম, ভ্রমণ আনন্দদায়ক আর মাল পরিবহনও অনেকটা ঝক্কিমুক্ত ও নিরাপদ বিধায় বিশ্ববাসী রেলকেই তাদের ভ্রমণ বা মাল পরিবহনের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব প্রদান করে। কিন্তু আমাদের এখানে রেলের ওপর থেকে আস্থা কমতে কমতে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এই গণপরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও বিস্তৃতি সময়ের দাবি।
No comments