আলোচনায় শাহরিয়ার কবির-ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলির পদত্যাগ করা উচিত

রাজধানীতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফের পদত্যাগ করা উচিত। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে গতকাল শুক্রবার ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভা হয়। প্রজন্ম-৭১ আয়োজিত এই আলোচনায় বক্তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে রাষ্ট্রপক্ষে পর্যাপ্তসংখ্যক দক্ষ ও অভিজ্ঞ কৌঁসুলি


নিয়োগের দাবি জানান। আলোচনায় শাহরিয়ার কবির বলেন, ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা যুদ্ধাপরাধ প্রমাণের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে সাক্ষী খুঁজছেন। অথচ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অপরাধ প্রমাণের জন্য সাক্ষী নয়, পত্রিকার প্রতিবেদন, বিবৃতি প্রভৃতি যথেষ্ট। তিনি বলেন, কৌঁসুলিরা ঠিকমতো অভিযোগ দিতে না পারায় নতুনভাবে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। এই ব্যর্থতার দায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফকে নিতে হবে। তাঁর উচিত পদত্যাগ করা।
শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, সবচেয়ে সহজ মামলাটি হচ্ছে গোলাম আযমের। তাঁর অপরাধ প্রমাণের জন্য একাত্তরের দৈনিক সংগ্রামই যথেষ্ট। তাঁর অপরাধের সাক্ষী গোলাম আযম স্বয়ং। তাঁর অপরাধের সাক্ষীর খোঁজে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
ট্রাইব্যুনাল ২৬ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম এবং ২৮ ডিসেম্বর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো. কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ফেরত দিয়ে সেগুলো পুনর্দাখিলের আদেশ দেন।
শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে গোলাম আরিফের মুঠোফোনে রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার নিয়ে আমাদের যে জ্ঞান, বিদ্যা ও বুদ্ধি আছে, তা দিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।’
শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্য সম্পর্কে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ গতকাল বিবিসিকে বলেন, ‘যদি অভিযোগ অবিন্যস্ত থাকে, তাহলে ট্রাইব্যুনাল তা বিন্যস্ত করে দিতে বলতে পারেন। এ ঘটনায় কাউকে সরে যেতে হবে, এমন কিছু আমি দেখছি না। আমি একে ব্যর্থতা হিসেবেও দেখছি না। ট্রাইব্যুনালকে সাহায্য করাই আইনজীবীদের কাজ।’ তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও দেওয়া হবে।
গতকালের আলোচনায় অন্য বক্তারা বলেন, ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা অভিযোগ ঠিকমতো দিতে পারেননি। কোনো প্রহসন কিংবা অসম্পূর্ণতা ও অনভিজ্ঞতার কারণে একজন যুদ্ধাপরাধীও যদি পার পেয়ে যায়, তাহলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। আলোচনায় প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম বলেন, সমন্বয়ে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। তবে সব সমস্যা কাটিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত শেষ করতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ বলেন, তিন বছরেও একজন যুদ্ধাপরাধীকে শাস্তি দেওয়া যায়নি। বিচার দ্রুত শেষ করতে হলে অভিজ্ঞ ও পর্যাপ্ত কৌঁসুলি নিয়োগ দিতে হবে।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন প্রজন্ম-৭১-এর সভাপতি শাহীন রেজা নূর। আরও বক্তব্য দেন শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদ-সন্তান মো. মোহসিনুল হক প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.