গাছের সার্জন নজরুল! by আমিনুল হক
গাছের সার্জন হিসেবেই সবাই তাকে চেনেন। একটি নিম্ন জাতের ফলের গাছকে উন্নত জাতে রূপান্তর করতে তার জুড়ি নেই। তার হ্যান্ডব্যাগের মধ্যে একটি সার্জিক্যাল কাঁচি এবং চাকু সব সময় থাকে। আর থাকে উন্নত জাতের আমের সরু ডাল, যা তিনি নিম্ন জাতের আমগাছে কলম হিসেবে সংযোজন করে দেন। অল্প দিনের মধ্যে সেই ডাল মূল গাছের সঙ্গে মিশে গিয়ে উন্নত জাতে রূপান্তর হয়। নিম্ন জাতের ফল গাছ উন্নত জাতে রূপান্তর করা এখন তার নেশায় পরিণত হয়েছে।
তাই সবাই তার নাম দিয়েছে 'গাছের সার্জন নজরুল ইসলাম'। তবে তার বড় সফলতা এসেছে বাঁশ সম্প্রসারণে। নজরুল ইসলাম কৃষি বিভাগের গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (সাবেক বল্গক সুপারভাইজার)। অনেক বল্গক সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালন নিয়ে অভিযোগ থাকলেও নজরুল সে ক্ষেত্রে একেবারে ব্যতিক্রম। দায়িত্ব পালনে সুনাম তার যথেষ্ট। গাছের কলম দিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার কারণে তিনি সুখ্যাতি লাভ করেছেন আরও বেশি। হয়েছেন পুরস্কৃত। শুধু আম নয়, বহু ধরনের গাছের কলম তৈরিতে তিনি অভিজ্ঞ। কাঁঠাল গাছের জোড়কলম, নাইট কুইন ফুলের পাতা কর্তন কলম, লেবুর পাতা থেকে চারা উৎপাদন, লেবু গাছের মধ্যে কমলা গাছের কলম সংযোজন, জংলি কাঁটা বেগুনের সঙ্গে টমেটোর জোড়কলমের মাধ্যমে দীর্ঘদিন টমেটো উৎপাদনের উপায় উদ্ভাবন নজরুল ইসলামকে দেশের অন্যসব বল্গক সুপারভাইজার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা পরিচিতি এনে দিয়েছে।
নজরুল ইসলাম সাঘাটা উপজেলার সদরে বোনারপাড়ায় টিটু মিয়ার বাড়িতে একটি আমগাছের সঙ্গে ১৪ ধরনের উন্নত জাতের আমের ডাল সংযোজন করে তাতে ১৪ রকমের আম ফলিয়েছেন। একটি মাত্র গাছে এখন মলি্লকা, ফজলি, আম্রপালি, ভাসতারা, চোষা, ল্যাংড়া, সুবর্ণরেখা, খিরসাপাতি, কিষাণভোগ, সূর্যাপরি, এইচস্টন-১০, গোপালভোগ এবং লকনা আম পাওয়া যাচ্ছে। গাছের মালিক টিটু মিয়া বলেন, 'হামার বাড়ির এই আমগাছ দেখার তানে মেলা নোক আসে। দেখি সংগায় অবাক হয়া যায়। এক গাছৎ অ্যাদান ক্যামন কাণ্ড!' নজরুল বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ব্যাপক ঘর-বাড়ি ওঠায় আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। ফলে আমগাছের মতো বড় বড় গাছ রোপণের জায়গার অভাব হবে এক সময়। বিভিন্ন জাতের আমের স্বাদ নিতে বেশি জায়গা নিয়ে গাছ লাগানোর প্রয়োজন হবে না।
গাছের কলম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা নজরুলের যেন নেশা। তিনি তার গবেষণায় সফলও হয়েছেন। কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশের চাষ তারই উদ্ভাবন। এই পদ্ধতিতে একটি বড় বাঁশের তিনটি করে গাঁটসহ ১৫ থেকে ২০টি পর্যন্ত কাটিং করা যায়। বাঁশের এই কাটিং জমিতে নালা কেটে মাটিচাপা দিয়ে রাখতে হয়। তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে প্রতি কাটিং থেকে তিনটি করে গাঁটে বাঁশের কঞ্চি বের হয়ে আসে। দুই মাসের মধ্যে মাটির নিচে শিকড় গজিয়ে ওই কঞ্চি বাঁশে রূপ নেয়। বিস্তার করে শাখা-প্রশাখা। এভাবে পরিপূর্ণ একটি বাঁশবাগান হতে সময় লাগে প্রায় তিন বছর। তখন প্রতিটি গাঁট থেকে ৩০-৪০টি বাঁশ বের হয়।
সনাতন পদ্ধতিতে একটি বাঁশের মোথা থেকে মাত্র একটি চারা উৎপাদন হয়। গাঁট কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশ চাষে খরচও খুব কম। এই পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে বিঘাপ্রতি জমিতে বাগান বানিয়ে বছরে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আর দু'তিন বিঘা জমিতে বাঁশ চাষ করতে পারলে তা দিয়েই একটি পরিবারের দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের বাউলিয়া গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান তার প্রায় পৌনে এক বিঘা জমিতে কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে সফল হয়েছেন। হাবিবুর রহমান বলেন, 'নজরুল ইসলামের পরামর্শ মতো গাঁট কাটিং করি ভুইত (জমি) বাঁশ নাগাই। এতে হামার অনেক লাভ হইছে।'
বল্গক সুপারভাইজার নজরুল ইসলামের জন্ম সাঘাটা উপজেলার উল্ল্যা ভরতখালী গ্রামে। বর্তমানে সাঘাটা উপজেলা সদরে বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন সংলগ্ন পূর্ব শিমুলতাইড় গ্রামে তিনি বসবাস করেন। শৈশব থেকেই গাছ লাগানো, কলম করা, বাগান করা এসব বিষয়ে তার বিপুল উৎসাহ ছিল। নিজেদের জায়গা ছাড়াও রাস্তার পাশে তিনি বহু গাছ লাগিয়েছেন। গাছ-গাছড়ার প্রতি আগ্রহ এবং মমত্ববোধই কৃষি ডিপেল্গামা গ্রহণে তাকে আকৃষ্ট করে বলে জানান।
গাছের শিকড়, বীজ বা ডাল থেকে সাধারণত চারা হয়। কিন্তু পাতা থেকে চারা উৎপাদন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন নজরুল। এই পদ্ধতিতে লেবুর পাতা কেটে নিয়ে বালিভর্তি টবের মধ্যে পাতার গোড়ার অংশ ঢেকে দিতে হয়। পরে এই টবটি পানিভর্তি একটি ট্রের ওপর বসিয়ে সেটি একটি পলিথিন দ্বারা সম্পূর্ণ ঢেকে দেওয়া হয়। ট্রের পানি টবের ছিদ্র দিয়ে ভেতরে ঢুকে তা ক্রমে বালি ভেদ করে লেবুর পাতা স্পর্শ করে। তাতে পাতা জীবন্ত থাকে এবং পলিথিনের ঢাকনার ভেতরে আর্দ্রতা বেড়ে যায়। এভাবে ১০-১৫ দিনের মধ্যে লেবুর পাতার গোড়ার শিরা থেকে শিকড় গজাতে থাকে। তখন পলিথিনের ঢাকনাটি খুলে ফেলতে হয় এবং পাতা থেকে বেরিয়ে আসে একটি সজীব চারা।
নজরুল ইসলাম জানান, এসব গবেষণা সফল করতে তার সময় লেগেছে ৪ থেকে ১০ বছর। তিনি বলেন, বহুবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছে। ব্যর্থ হতে হতে এক সময় সফল হন। এখন আর ব্যর্থতা নেই। এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারা বড় হলে ফলন ভালো হয়।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বজলুর রশিদ বলেন, নজরুল ইসলামের লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহারে অনেকে সুফল পেয়েছেন। তবে এসব পদ্ধতি নতুন নয়। তিনি অনেককে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং তার প্রচেষ্টা ও পরামর্শে গাছপালা লাগিয়ে অনেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। এসব কাজের জন্য নজরুল ইসলাম ইতিমধ্যে জাতীয়ভাবে রৌপ্য পদক পেয়েছেন এবং রোটারি ক্লাব ও ডিপেল্গামা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন থেকে তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (সাবেক বল্গক সুপারভাইজার)। অনেক বল্গক সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালন নিয়ে অভিযোগ থাকলেও নজরুল সে ক্ষেত্রে একেবারে ব্যতিক্রম। দায়িত্ব পালনে সুনাম তার যথেষ্ট। গাছের কলম দিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার কারণে তিনি সুখ্যাতি লাভ করেছেন আরও বেশি। হয়েছেন পুরস্কৃত। শুধু আম নয়, বহু ধরনের গাছের কলম তৈরিতে তিনি অভিজ্ঞ। কাঁঠাল গাছের জোড়কলম, নাইট কুইন ফুলের পাতা কর্তন কলম, লেবুর পাতা থেকে চারা উৎপাদন, লেবু গাছের মধ্যে কমলা গাছের কলম সংযোজন, জংলি কাঁটা বেগুনের সঙ্গে টমেটোর জোড়কলমের মাধ্যমে দীর্ঘদিন টমেটো উৎপাদনের উপায় উদ্ভাবন নজরুল ইসলামকে দেশের অন্যসব বল্গক সুপারভাইজার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা পরিচিতি এনে দিয়েছে।
নজরুল ইসলাম সাঘাটা উপজেলার সদরে বোনারপাড়ায় টিটু মিয়ার বাড়িতে একটি আমগাছের সঙ্গে ১৪ ধরনের উন্নত জাতের আমের ডাল সংযোজন করে তাতে ১৪ রকমের আম ফলিয়েছেন। একটি মাত্র গাছে এখন মলি্লকা, ফজলি, আম্রপালি, ভাসতারা, চোষা, ল্যাংড়া, সুবর্ণরেখা, খিরসাপাতি, কিষাণভোগ, সূর্যাপরি, এইচস্টন-১০, গোপালভোগ এবং লকনা আম পাওয়া যাচ্ছে। গাছের মালিক টিটু মিয়া বলেন, 'হামার বাড়ির এই আমগাছ দেখার তানে মেলা নোক আসে। দেখি সংগায় অবাক হয়া যায়। এক গাছৎ অ্যাদান ক্যামন কাণ্ড!' নজরুল বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ব্যাপক ঘর-বাড়ি ওঠায় আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। ফলে আমগাছের মতো বড় বড় গাছ রোপণের জায়গার অভাব হবে এক সময়। বিভিন্ন জাতের আমের স্বাদ নিতে বেশি জায়গা নিয়ে গাছ লাগানোর প্রয়োজন হবে না।
গাছের কলম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা নজরুলের যেন নেশা। তিনি তার গবেষণায় সফলও হয়েছেন। কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশের চাষ তারই উদ্ভাবন। এই পদ্ধতিতে একটি বড় বাঁশের তিনটি করে গাঁটসহ ১৫ থেকে ২০টি পর্যন্ত কাটিং করা যায়। বাঁশের এই কাটিং জমিতে নালা কেটে মাটিচাপা দিয়ে রাখতে হয়। তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে প্রতি কাটিং থেকে তিনটি করে গাঁটে বাঁশের কঞ্চি বের হয়ে আসে। দুই মাসের মধ্যে মাটির নিচে শিকড় গজিয়ে ওই কঞ্চি বাঁশে রূপ নেয়। বিস্তার করে শাখা-প্রশাখা। এভাবে পরিপূর্ণ একটি বাঁশবাগান হতে সময় লাগে প্রায় তিন বছর। তখন প্রতিটি গাঁট থেকে ৩০-৪০টি বাঁশ বের হয়।
সনাতন পদ্ধতিতে একটি বাঁশের মোথা থেকে মাত্র একটি চারা উৎপাদন হয়। গাঁট কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশ চাষে খরচও খুব কম। এই পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে বিঘাপ্রতি জমিতে বাগান বানিয়ে বছরে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আর দু'তিন বিঘা জমিতে বাঁশ চাষ করতে পারলে তা দিয়েই একটি পরিবারের দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের বাউলিয়া গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান তার প্রায় পৌনে এক বিঘা জমিতে কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে সফল হয়েছেন। হাবিবুর রহমান বলেন, 'নজরুল ইসলামের পরামর্শ মতো গাঁট কাটিং করি ভুইত (জমি) বাঁশ নাগাই। এতে হামার অনেক লাভ হইছে।'
বল্গক সুপারভাইজার নজরুল ইসলামের জন্ম সাঘাটা উপজেলার উল্ল্যা ভরতখালী গ্রামে। বর্তমানে সাঘাটা উপজেলা সদরে বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন সংলগ্ন পূর্ব শিমুলতাইড় গ্রামে তিনি বসবাস করেন। শৈশব থেকেই গাছ লাগানো, কলম করা, বাগান করা এসব বিষয়ে তার বিপুল উৎসাহ ছিল। নিজেদের জায়গা ছাড়াও রাস্তার পাশে তিনি বহু গাছ লাগিয়েছেন। গাছ-গাছড়ার প্রতি আগ্রহ এবং মমত্ববোধই কৃষি ডিপেল্গামা গ্রহণে তাকে আকৃষ্ট করে বলে জানান।
গাছের শিকড়, বীজ বা ডাল থেকে সাধারণত চারা হয়। কিন্তু পাতা থেকে চারা উৎপাদন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন নজরুল। এই পদ্ধতিতে লেবুর পাতা কেটে নিয়ে বালিভর্তি টবের মধ্যে পাতার গোড়ার অংশ ঢেকে দিতে হয়। পরে এই টবটি পানিভর্তি একটি ট্রের ওপর বসিয়ে সেটি একটি পলিথিন দ্বারা সম্পূর্ণ ঢেকে দেওয়া হয়। ট্রের পানি টবের ছিদ্র দিয়ে ভেতরে ঢুকে তা ক্রমে বালি ভেদ করে লেবুর পাতা স্পর্শ করে। তাতে পাতা জীবন্ত থাকে এবং পলিথিনের ঢাকনার ভেতরে আর্দ্রতা বেড়ে যায়। এভাবে ১০-১৫ দিনের মধ্যে লেবুর পাতার গোড়ার শিরা থেকে শিকড় গজাতে থাকে। তখন পলিথিনের ঢাকনাটি খুলে ফেলতে হয় এবং পাতা থেকে বেরিয়ে আসে একটি সজীব চারা।
নজরুল ইসলাম জানান, এসব গবেষণা সফল করতে তার সময় লেগেছে ৪ থেকে ১০ বছর। তিনি বলেন, বহুবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছে। ব্যর্থ হতে হতে এক সময় সফল হন। এখন আর ব্যর্থতা নেই। এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারা বড় হলে ফলন ভালো হয়।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বজলুর রশিদ বলেন, নজরুল ইসলামের লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহারে অনেকে সুফল পেয়েছেন। তবে এসব পদ্ধতি নতুন নয়। তিনি অনেককে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং তার প্রচেষ্টা ও পরামর্শে গাছপালা লাগিয়ে অনেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। এসব কাজের জন্য নজরুল ইসলাম ইতিমধ্যে জাতীয়ভাবে রৌপ্য পদক পেয়েছেন এবং রোটারি ক্লাব ও ডিপেল্গামা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন থেকে তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
No comments