চলে গেলেন যাঁরা

০১১ সালে আমরা হারিয়েছি বেশ কয়েকজনকে। তাঁদের মধ্যে অনেকে চলে গেছেন নীরবে। অনেকে আবার কাঁদিয়েছেন বিশ্ববাসীকে। যাঁরা কাঁদিয়েছেন, মানুষের হূদয়কে আলোড়িত করেছেন, মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকবেন ভালোবাসায়, কর্মে ও স্মরণে। এমনই আলোচিত কয়েকজন হলেন— স্টিভ জবস: বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল স্টিভ পল জবসের মৃত্যু। প্রযুক্তির এই প্রবাদ পুরুষ পৃথিবী ছেড়ে যান ৫ অক্টোবর। অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান


এবং পরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন টেকনোলজিতে তাঁর অবদান অসামান্য। অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। জগজিত্ সিং: একা থাকতে পছন্দ করতেন এই জনপ্রিয় শিল্পী। থাকতেন কিছুটা বিমর্ষও। সেই ছাপ ছিল তাঁর গজলে। শুনতে শুনতে চোখ ভিজে উঠত। অসাধারণ ছিল তাঁর গায়কি। তাই ভারতের চলচ্চিত্রেও গজলের একটি নতুন ঘরানা শুরু হয়। অসংখ্য গুণগ্রাহী ও ভক্তদের কাঁদিয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ১০ অক্টোবর চলে গেলেন এই শিল্পী।

ভূপেন হাজারিকা: ‘মানুষ মানুষের জন্য’—এই গান গেয়ে অসংখ্য হূদয়ে ঝড় তুলেছিলেন এই শিল্পী। তাঁর প্রায় দেড় হাজার গান রয়েছে। আর সব গানই অনবদ্য। তিনি ছিলেন মানবতার শিল্পী। একাধারে সংগীতশিল্পী, কম্পোজার, কবি ও রাজনৈতিক কর্মী। আসাম, বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পে তাঁর গানের অবদান অসামান্য। ৫ নভেম্বর মারা যান এই কিংবদন্তি শিল্পী।
এলিজাবেথ টেলর: হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলর মারা যান ৩ মার্চ। হূদরোগের কারণে সেডারস-সিনাই মেডিকেল সেন্টারে ছয় সপ্তাহ চিকিত্সাধীন থাকার পর ৭৯ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। সেরা অভিনেত্রী হিসেবে দুবার অস্কার জিতেছেন।

এম এফ হুসেন: মকবুল ফিদা হুসেন। তিনি পেয়েছেন খ্যাতি, সম্মান ও ভালোবাসা। আবার পড়েছেন বিদ্রূপের মুখেও। হয়েছেন সমালোচনার সম্মুখীন। তিনি ছিলেন ভারতের পিকাসো। ১৯৯১ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কার পান এই শিল্পী। হিন্দু সম্প্রদায়ের দেব-দেবীদের ছবি আঁকার জন্য রক্ষণশীলদের হামলার মুখে পড়েন মকবুল ফিদা হুসেন। এর পরে ২০০৬ সালে ভারত ছাড়েন তিনি। লন্ডনেই শেষ দিনগুলো কাটান তিনি। ৯ জুন মারা যান এই আলোচিত শিল্পী।

অ্যামি ওয়াইনহাউস: ‘ডাই এ হান্ড্রেড টাইমস’, ‘ব্যাক টু ব্ল্যাক’ সাড়া জাগানো এসব গান গেয়ে বিশ্ববাসীকে মাতিয়ে তুলেছিলেন এই গায়িকা। প্রতিভা ও গানের জন্য অ্যামি ভক্তদের হূদয়ে ভালোবাসার আসন জিতেছেন। তবে ২৩ জুলাই মাত্র ২৭ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান তিনি। নিজের বাসায় তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

শাম্মী কাপুর: ‘ইয়াহু’ আর ‘জংলি হিরো’—এ দুটিই জনপ্রিয় করে তুলেছিল শাম্মী কাপুরকে। ১৯৫০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বলিউডকে কাঁপিয়ে তোলেন এই অভিনেতা। একের পর এক চলচ্চিত্রে তাঁর অসাধারণ অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। ১৪ আগস্ট মারা যান এই অভিনেতা। কাঁদিয়ে যান অসংখ্য দর্শকদের।

দেব আনন্দ: রোমান্টিক হিরো মানেই দেব আনন্দ। ৫০ বছর বয়সেও চিরসবুজ ছিলেন এই তারকা। একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বলিউডে ঝড় তোলেন দেব আনন্দ। গাইড, কালা পানি, জুয়েল থিফ, হীরা পান্না সাড়া জাগানো সব চলচ্চিত্র। কিংবদন্তি এই অভিনেতা মারা যান ৩ ডিসেম্বর।

মনসুর আলী খান পতৌদি: ক্রিকেট ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন টাইগার। মাত্র ২১ বছর বয়সে ভারতের ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। কিন্তু ২১ বছর বয়সেই সড়ক দুর্ঘটনায় চোখে আঘাত পান তিনি। আর সেখানেই ক্রিকেট জীবনের ইতি ঘটে। ২২ সেপ্টেম্বর মারা যান তিনি।

সত্য সাঁই বাবা: ভালোবাসো, সেবা করো। সত্য সাঁই বাবার এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন ভারতের ৩০ লাখ লোক। ভারতের গণমাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল এই আধ্যাত্মিক নেতার মৃত্যু। হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২৪ এপ্রিল মারা যান তিনি। তাঁর ভক্তদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, এমনকি ক্রিকেট খেলোয়াড় শচীন টেন্ডুলকারও। সবাইকেই শোকের সাগরে ভাসিয়ে চলে যান তিনি।

ইন্দিরা গোস্বামী: সাহিত্যিক ইন্দিরা গোস্বামী। নিজের জীবন কাহিনিই তুলে ধরেছেন তিনি। তাই সহজেই জয় করেছেন পাঠকের মন। সাহিত্য একাডেমি ও জনপথ পুরস্কার পেয়েছেন। ২৯ নভেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

এ ছাড়া এ বছর চলে গেছেন বেশ কয়েকজন আলোচিত নেতা। তাঁরা হলেন—
মুয়াম্মার গাদ্দাফি: লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিও নিহত হন এ বছর। ২০ অক্টোবর ন্যাটো বিমান হামলা চালায় গাদ্দাফির গাড়িবহরে। এ সময় গাদ্দাফির দলের সঙ্গে ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের গোলাগুলি হয়। এতে নিহত হন তিনি। নিজ জন্ম শহর সার্তেই প্রাণ হারান এই নেতা। তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বলে নানা গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এবং ছবিতে দেখা গেছে।

ওসামা বিন লাদেন: মার্কিন অভিযানে মারা যান আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন। ২ মে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের কাছে অ্যাবোটাবাদে আত্মগোপনে থাকা লাদেনকে অনেকটা নিরস্ত্র অবস্থায় হত্যা করে মার্কিন সেনারা। তাঁকে সমাহিত করা হয় সাগরে।

কিম জং-ইল: বছরের শেষে এসে মারা যান উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-ইল। ১৭ ডিসেম্বর ট্রেন ভ্রমণের সময় হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। প্রিয় এই নেতার মৃত্যুতে কেঁদেছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির পরবর্তী নেতা হিসেবে নাম ঘোষণা হয়েছে তাঁর ছেলে কিম জং-উনের।

No comments

Powered by Blogger.