শুদ্ধ রাজনীতিক by আনোয়ার হোসেন
রাজনীতিকের ব্যক্তিগত জীবন এবং তার রাজনৈতিক সত্তার ভিন্ন অস্তিত্ব নিয়ে আজকের বাংলাদেশে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ভীষণ টানাপড়েন। কমরেড মণি সিংহের মৃত্যু দিবসে তাঁকে বিশেষভাবে স্মরণ করতে হয়। কারণ তিনি এমন টানাপড়েনের বাইরে শুদ্ধ রাজনীতিকের আদর্শ। যেসব জাতীয় নেতা জনগণের চোখে চোখ রেখে সাহসের সঙ্গে বলতে পারেন 'মাই লাইফ ইজ মাই মেসেজ', মণি সিংহ তাঁদের একজন। বিশেষ করে আজকের বাংলাদেশে রাজনৈতিক
নেতাদের বৈষয়িক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাবনিকাশ শুনতে শুনতে ক্লান্ত দেশবাসীর মনে এমন একজন নেতা পাওয়ার আশা জাগে, যে নেতা আদর্শের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করেন। শোষণমুক্তির আদর্শে বিশ্বাসী মণি সিংহ এমন একজন মানুষ, যিনি আজীবন বিশুদ্ধ বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছেন এবং সেই আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অবিরাম সংগ্রাম করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্বাসের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনযাপনের অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্র প্রতিষ্ঠার তাগিদে জাগতিক ভোগ-বিলাস বিসর্জন দিয়ে আক্ষরিক অর্থে একজন সর্বহারার জীবন বেছে নিয়েছিলেন।
মণি সিংহের জন্ম ১৯০১ সালের জুলাই মাসে। মাত্র আড়াই বছর বয়সে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। তাঁর মা ছিলেন সুসং দুর্গাপুরের জমিদার পরিবারের। মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করতে কলকাতা গিয়ে ১৯১৪ সালে তিনি সশস্ত্র বিপ্লবী দল অনুশীলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর বিপ্লবী হয়ে ওঠার গল্প আজ যত ঔপনিবেশিক ভারতে সেদিন কাজটি তেমন সহজ ছিল না। কোনো জমিদারপুত্র যখন বিপ্লবের বিপদসংকুল পথে পা বাড়ান তখন তাঁর মানবিক সংবেদনশীলতা এবং এক বুক সাহসকে শ্রদ্ধা জানাতে হয়। ১৯২৬ সাল থেকে কলকাতায় শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে তাঁর কমিউনিস্ট আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের সূচনা। ১৯৩০ সালে তাঁর কারাবাসের শুরু। পাঁচ বছর জেল খেটে চার দেয়ালের বাইরে আসার সুযোগ পেলেও মণি সিংহকে ব্রিটিশ পুলিশ বিশ্বাস করতে পারেনি। পুলিশ তাঁকে সুসং দুর্গাপুরে নজরবন্দি করে রেখেছিল। নজরবন্দি অবস্থায় তিনি কৃষকের স্বার্থবিরোধী টংক প্রথার বিরুদ্ধে গোপনে কৃষকদের সংগঠিত করে আন্দোলন শুরু করেন। জমিদার পরিবারের সন্তান হয়ে সরাসরি জমিদারদের স্বার্থের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কঠিন দায়িত্ব মণি সিংহ অবলীলায় কাঁধে তুলে নেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান গঠিত হওয়ার পর মণি সিংহ আত্মগোপন করতে বাধ্য হন। পঞ্চাশের দশকে তিনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পাকিস্তান আমলে আত্মগোপনে থাকাকালে ১৯৬৭ সালে গ্রেফতার হয়ে তিনি মুক্তি পান ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর।
যুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য গঠিত উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন মণি সিংহ। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম কংগ্রেসে কমরেড মণি সিংহ সভাপতি নির্বাচিত হন। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মণি সিংহ শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার আদর্শে আমৃত্যু অবিচল ছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনযাপনের রীতি-পদ্ধতিতে আমৃত্যু কোনোদিন কোনো গরমিল হয়নি। রাজনৈতিক মত-পথের ভিন্নতা মেনে নিয়ে সব যুগে সব রাজনীতিকের জন্য মণি সিংহ শুদ্ধ রাজনীতিকের এক জীবনাদর্শ।
১৯৯০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কমরেড মণি সিংহ মৃত্যুবরণ করেন।
মণি সিংহের জন্ম ১৯০১ সালের জুলাই মাসে। মাত্র আড়াই বছর বয়সে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। তাঁর মা ছিলেন সুসং দুর্গাপুরের জমিদার পরিবারের। মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করতে কলকাতা গিয়ে ১৯১৪ সালে তিনি সশস্ত্র বিপ্লবী দল অনুশীলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর বিপ্লবী হয়ে ওঠার গল্প আজ যত ঔপনিবেশিক ভারতে সেদিন কাজটি তেমন সহজ ছিল না। কোনো জমিদারপুত্র যখন বিপ্লবের বিপদসংকুল পথে পা বাড়ান তখন তাঁর মানবিক সংবেদনশীলতা এবং এক বুক সাহসকে শ্রদ্ধা জানাতে হয়। ১৯২৬ সাল থেকে কলকাতায় শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে তাঁর কমিউনিস্ট আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের সূচনা। ১৯৩০ সালে তাঁর কারাবাসের শুরু। পাঁচ বছর জেল খেটে চার দেয়ালের বাইরে আসার সুযোগ পেলেও মণি সিংহকে ব্রিটিশ পুলিশ বিশ্বাস করতে পারেনি। পুলিশ তাঁকে সুসং দুর্গাপুরে নজরবন্দি করে রেখেছিল। নজরবন্দি অবস্থায় তিনি কৃষকের স্বার্থবিরোধী টংক প্রথার বিরুদ্ধে গোপনে কৃষকদের সংগঠিত করে আন্দোলন শুরু করেন। জমিদার পরিবারের সন্তান হয়ে সরাসরি জমিদারদের স্বার্থের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কঠিন দায়িত্ব মণি সিংহ অবলীলায় কাঁধে তুলে নেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান গঠিত হওয়ার পর মণি সিংহ আত্মগোপন করতে বাধ্য হন। পঞ্চাশের দশকে তিনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পাকিস্তান আমলে আত্মগোপনে থাকাকালে ১৯৬৭ সালে গ্রেফতার হয়ে তিনি মুক্তি পান ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর।
যুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য গঠিত উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন মণি সিংহ। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম কংগ্রেসে কমরেড মণি সিংহ সভাপতি নির্বাচিত হন। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মণি সিংহ শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার আদর্শে আমৃত্যু অবিচল ছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনযাপনের রীতি-পদ্ধতিতে আমৃত্যু কোনোদিন কোনো গরমিল হয়নি। রাজনৈতিক মত-পথের ভিন্নতা মেনে নিয়ে সব যুগে সব রাজনীতিকের জন্য মণি সিংহ শুদ্ধ রাজনীতিকের এক জীবনাদর্শ।
১৯৯০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কমরেড মণি সিংহ মৃত্যুবরণ করেন।
No comments