'মমতা জাতীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হতে চাইছেন'
ভারতের প্রথম ইউপিএ সরকারের শরিক হিসেবে সিপিএমের ভূমিকার সঙ্গে বর্তমানের দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের শরিক তৃণমূল কংগ্রেসের মিল খুঁজে পাচ্ছেন দিলি্লর কংগ্রেস নেতারা। বৃহস্পতিবার মাঝরাত পর্যন্ত সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় লোকপাল বিল নিয়ে বির্তক হলেও শেষ পর্যন্ত তা পাস না করেই অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। এ ঘটনায় কংগ্রেস-বিজেপি পরস্পরকে দোষারোপ করেছে। কলকাতায় বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে পুরো বিষয়ে নিজের
নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছেন_ তাতেই ঘুরেফিরে এসেছে সিপিএমের সঙ্গে তুলনা। প্রথম ইউপিএ সরকারে সমর্থক বামেদের কারণে কোনো আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচি তেমন রূপায়ণ করতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। এবারের মেয়াদে গত ছয় মাসে তিস্তার পানি বণ্টন থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় কর্মসূচি রূপায়ণে বাধা পাচ্ছেন মনমোহন। সবক্ষেত্রেই তৃণমূল কংগ্রেসকে না জানিয়ে কংগ্রেস নিজেদের কর্মসূচি রূপায়ণ করতে গিয়ে আটকে যাচ্ছে বলে মমতার ঘনিষ্ঠ মহল থেকে বলা হলেও দিলি্লর কংগ্রেস নেতারা তা মানতে পারছেন না। এ লোকযুক্তের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার খবরদারি করতে পারে না। তাদের এই অবস্থান কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ককে ঘিরে পুরনো বিতর্ককে উস্কে দিচ্ছে_ তৃণমূল কংগ্রেসের এ বক্তব্য কংগ্রেস মানতে পারছে না। তাদের বক্তব্য, বিল পাসের আগে খসড়া নিয়ে শরিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল। যা আপত্তি এসেছিল তা পরিবর্তনও করা হয়েছে। তারপরও আপত্তি থাকলে মমতা শনিবার তার সঙ্গে কলকাতায় যখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয় তখন বলতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে লোকসভায় বিলটিকে সমর্থন করার পর রাজ্যসভায় যেভাবে বিরোধিতা করেছেন, তা সাংসদীয় ইতিহাসে নজিরবিহীন। এ জায়গা থেকেই কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, মমতা নিজেকে জাতীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রক ভাবছেন। সে কারণেই তিস্তার পানিবণ্টন, খুচরা ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ থেকে লোকপাল বিল_ সবক্ষেত্রেই শেষ মুহূর্তে আপত্তি জানিয়ে কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ কংগ্রেসের। বড় শরিকের এহেন অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের কানেও পেঁৗছেছে। মমতা নিজে অবশ্য এবারে এ জন্য দায়ী করছেন তার নিজের দলের সাংসদদের।
ঘনিষ্ঠ মহলে মমতা জানিয়েছেন, লোকপাল নিয়ে লোকসভায় তার দলের সদস্যরা যাতে ভোট না দিয়ে নিরপেক্ষতা বজায় রাখে তা করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু লোকসভার মধ্যে টেলিফোন করা যায় না বলে সে বার্তা ঠিক সময়ে পেঁৗছে দেওয়া যায়নি। মমতা নিজেও দলের সাংসদদের বকাবকি করেছেন। সংসদে ভোটাভুটির আগে তার দলের এমপিরা কেন তার সঙ্গে কথা বলে নেননি তাও জানতে চেয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান। এরপরই রাজ্যসভায় বিরোধিতার কর্মসূচি ঠিক করেছেন মমতা নিজে।
সব মিলে লোকপাল বিল ইস্যুতে শরিক নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বড় শরিক কংগ্রেসের সম্পর্ক আবার তলানিতে।
No comments