নদ-নদীর নাব্যতা রক্ষা-ড্রেজিংয়ের নামে পানিতে অর্থ ঢালা!
একই দিনে দুটি উদ্বেগজনক সংবাদ_ কীর্তনখোলা ও কালাবদর নদীতে নাব্যতা সংকটে লঞ্চ চলাচল বিঘি্নত এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া চ্যানেলে প্রায় প্রতিদিনই ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে ফেরি। তাহলে দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ রাজধানীর সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ রাখবে? ছয়টি জেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল বিভাগে রেলপথ নেই। বিমান সার্ভিস নেই। সড়ক পথের বেহাল দশা। পদ্মা সেতু এখনও স্বপ্নই রয়ে গেছে। ভরসা ছিল নৌপথ, কিন্তু তাতেও বিঘ্ন। পানির দেশে বর্ষা মৌসুম
যেতে না যেতেই নদ-নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। সোমবার সমকালে প্রকাশিত খবরের শিরোনাম ছিল : 'কীর্তনখোলা-কালাবদর খননের নামে চলছে তুঘলকি কাণ্ড'। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর ড্রেজিংয়ের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। ড্রেজিং করে পলি ফেলা হচ্ছে নদীতেই। অথচ এ দুটি নদী ঢাকার সঙ্গে নৌপথে বরিশাল ও ভোলায় যোগাযোগের জন্য অপরিহার্য। নৌযানে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন ব্যয় সড়কপথের তুলনায় কম। তাছাড়া যাত্রীবাহী লঞ্চ ও স্টিমার সাধারণত চলে রাতের বেলা। ফলে দিনের কর্মদিবস বিঘি্নত হয় না। নৌপথ রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষের এটাও অজানা নয় যে, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদী দিয়ে বিপুল জলরাশি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। নদ-নদীর গভীরতা কমে যেতে থাকলে দ্রুত পানি সাগরে নেমে যায় এবং এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রাপ্যতা কমে যায়। হঠাৎ করে নয়, অনেক বছর ধরেই এ সমস্যা চলছে। কিন্তু তার সমাধানে যে নীতি ও কৌশল অনুসরণ করা হচ্ছে তা ফল দিচ্ছে না। এর একটি কারণ পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ না থাকা, অন্য কারণ দুর্নীতি ও অনিয়ম। বাংলাদেশে সড়ক ও রেলপথ তৈরিতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। এসবের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও বিপুল। কিন্তু নদ-নদী প্রকৃতির দান। বহু বহু আগে এগুলো সৃষ্টি হয়েছে এবং তার শুভ প্রভাব এই নদীমাতৃক দেশে নানাভাবে অনুভূত হচ্ছে। আমাদের সরকারের কাজ হচ্ছে এ পথকে সচল রাখার জন্য নিয়মিত ডেজিং করার ব্যবস্থা। কোথাও দরকার রুটিন ড্রেজিং, কোথাও-বা দীর্ঘমেয়াদি ড্রেজিং। এ জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করায় কার্পণ্য বিভিন্ন আমলেই লক্ষণীয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হয়তো ধারণা করে আছেন যে, নদ-নদী যেহেতু প্রকৃতির দান, তাই এর রক্ষণাবেক্ষণও প্রকৃতিই করবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। নদ-নদী এখন নানাভাবেই আক্রান্ত হচ্ছে, যা অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য গুরুতর হুমকি। পরিণতিতে বর্ষায় কোনো কোনোটা হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর এবং শুষ্ক মৌসুমে মিলছে না কৃষিকাজ, মৎস্য চাষ ও অন্যান্য অপরিহার্য প্রয়োজনের পানি। এ ধারা চলতে থাকলে নদীমাতৃক দেশের জন্য কী ভয়াবহ সময় অপেক্ষা করছে, তা ভাবতেও নতুন শঙ্কা জাগে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তার বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে বিলম্ব করা যাবে না। একই সঙ্গে নদ-নদী ড্রেজিং করার সীমিত যে আয়োজন তার বরাদ্দ আত্মসাতের মন্দ ধারাতেও আনতে হবে পরিবর্তন। কয়েক দশকে নয় নয় করে পানিতে কম অর্থ ঢালা হয়নি। কিছু লোকের জন্য তা বিপুল সম্পদের উৎস হয়েছে, কিন্তু মূল কাজের কিছুই হয়নি। যারা দেশের এভাবে ক্ষতি করে চলেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেই হবে।
No comments