বাংলাদেশে ভারতের রমরমা সাংস্কৃতিক বাণিজ্যঃ জাতীয় স্বাতন্ত্র্য বিপন্ন হতে পারে।
বাংলাদেশ ভারতের প্রায় একচেটিয়া বাজারে পরিণত হয়েছে, এটা নিছক কথার কথা নয়। প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় নির্বিশেষে বিভিন্ন ধরনের ভারতীয় পণ্য প্রতিদিন স্রোতের মতো ঢুকছে বাংলাদেশে। সে তুলনায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রফতানি তেমন একটা নেই বললেই চলে। ফলে দু’দেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্য স্থায়ীভাবে ভারতের অনুকূলে হেলে আছে দারুণভাবে। এটা হচ্ছে বৈধপথে বাণিজ্যের হিসাব।
অবৈধ পথে চলমান বাণিজ্যের চিত্রও এর থেকে ভিন্ন নয়। ট্রিগার হ্যাপি বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের নিরীহ চাষীদের গুলি করে মেরে ফেলতে দারুণ উত্সাহী হলেও চোরাচালানিদের, বিশেষ করে ফেনসিডিল চোরাচালানিদের তারা দেখেও দেখে না। এভাবে দিনে দিনে ভারত-নির্ভরতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বাংলাদেশের বাজার দর অনেকটাই ভারতীয় ব্যবসায়ীদের মর্জিনির্ভর হয়ে পড়েছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যর এই স্থূল হিসাবের পাশাপাশি আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও এখন ভারতীয় আগ্রাসন নজর কাড়ার মতো। বিশেষ করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ ভারতীয় শিল্পীদের রমরমা বাজারে পরিণত হয়েছে। আমার দেশ গতকাল প্রথম পাতায় যে প্রধান খবর ছেপেছে তাতে দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি ভারতীয় শিল্পী বাংলাদেশে এসে কনসার্ট করে গেছেন। এসব কনসার্টে উপচেপড়া ভিড় প্রমাণ করে, বাংলাদেশের সচ্ছল শস্লরে তারুণ্য এখন মুম্বাইমার্কা ধুমধাড়াক্কার আবেশে বিহ্বল। গান যতই শোনার বিষয় থেকে দেখার বস্তুতে পরিণত হচ্ছে ততই তা তরুণ মনের শিরায় শিরায় মাতাল নৃত্যের আবহ সৃষ্টি করছে। এই উন্মাদনাকে পুঁজি করে যে ব্যবসা নিয়ত প্রসারমান তার ডাকনাম হচ্ছে শো-বিজ। ‘বিজ’ হচ্ছে বিজনেসের সার-সংক্ষেপ। অর্থাত্ ‘ফেল কড়ি মাখ তেল’ ব্যাপারটা কব্জা করেছে সঙ্গীতকেও। এই সঙ্গীতে অবশ্য সুকুমার কলা তেমন আর অবশিষ্ট নেই। এসব ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে গ্লামার এবং ক্রমে সূক্ষ্ম থেকে স্থূল হতে থাকা সেক্স। সঙ্গীতের নামে শো-বিজের পসরা সাজিয়ে ভারতীয় শিল্পীরা শুধু বাংলাদেশের দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধই করছেন না, সেই সঙ্গে কামিয়ে নিচ্ছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। এ টাকা স্লন্ডির মাধ্যমে এমন নিখুঁতভাবে আগাম হিসেবে পাচার হয়ে যায় যে, ধরার বা বলার কোনো উপায় নেই। পাশাপাশি মান্না দে, পূর্ণদাস বাউলের গান অথবা হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার ক্লাসিক্যাল বংশীবাদন উপভোগ করার জন্য যখন শ্রোতার ঢল সামলানো দায় হয়ে পড়ে, তখন মানতেই হয়, ভালো গানবাদ্য উচ্চমূল্যে শ্রবণের মতো মানুষের আকাল বাংলাদেশে অন্তত পড়েনি। দরকার শুধু সুষ্ঠু আয়োজনের।
আমাদের কথাও এখানটায়। ভারতীয় শিল্পীরা টাকা পাচ্ছেন; বাংলাদেশে এসে পারফর্ম করে যাচ্ছেন। তাদের আনছেন কিন্তু বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা, কেউ পয়সা কামানোর জন্য, কেউ ‘জাতে’ ওঠার লালসায়। অথচ বাংলাদেশী শিল্পীদের নিয়ে তেমন আয়োজন নেই বললেই চলে। ধারণ, লালন, পরিচর্যা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমাদের সঙ্গীত শিল্প এবং শিল্পীরা আজ রামায়ণের উপেক্ষিতা ঊর্মিলার দশায় উপনীত। সঙ্গত কারণেই তারা হতাশ এবং বেদনার্ত। গতকাল আমার দেশ-এ প্রকাশিত কয়েকজন শিল্পীর প্রতিক্রিয়ায় তাদের অভিমানমিশ্রিত ক্ষোভ ফুটে উঠেছে, যা এক ধরনের সতর্কবাণীও বলা যায়। এর পরিণতি গোটা জাতির জন্য কতবড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে সে বোধ জাগ্রত হয়ে আমাদের সক্রিয় করে তোলার ব্যাপারে ইতোমধ্যে যথেষ্ট বিলম্ব ঘটে গেছে। এই বিলম্ব দীর্ঘতর হলে জাতীয় স্বাতন্ত্র্যের আর কিছু অবশিষ্ট নাও থাকতে পারে। কারণ নির্বীর্য সংস্কৃতির ধারক হয়ে কোনো জাতি শক্তিশালী হিসেবে টিকে থাকতে পারে না।
ব্যবসা-বাণিজ্যর এই স্থূল হিসাবের পাশাপাশি আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও এখন ভারতীয় আগ্রাসন নজর কাড়ার মতো। বিশেষ করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ ভারতীয় শিল্পীদের রমরমা বাজারে পরিণত হয়েছে। আমার দেশ গতকাল প্রথম পাতায় যে প্রধান খবর ছেপেছে তাতে দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি ভারতীয় শিল্পী বাংলাদেশে এসে কনসার্ট করে গেছেন। এসব কনসার্টে উপচেপড়া ভিড় প্রমাণ করে, বাংলাদেশের সচ্ছল শস্লরে তারুণ্য এখন মুম্বাইমার্কা ধুমধাড়াক্কার আবেশে বিহ্বল। গান যতই শোনার বিষয় থেকে দেখার বস্তুতে পরিণত হচ্ছে ততই তা তরুণ মনের শিরায় শিরায় মাতাল নৃত্যের আবহ সৃষ্টি করছে। এই উন্মাদনাকে পুঁজি করে যে ব্যবসা নিয়ত প্রসারমান তার ডাকনাম হচ্ছে শো-বিজ। ‘বিজ’ হচ্ছে বিজনেসের সার-সংক্ষেপ। অর্থাত্ ‘ফেল কড়ি মাখ তেল’ ব্যাপারটা কব্জা করেছে সঙ্গীতকেও। এই সঙ্গীতে অবশ্য সুকুমার কলা তেমন আর অবশিষ্ট নেই। এসব ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে গ্লামার এবং ক্রমে সূক্ষ্ম থেকে স্থূল হতে থাকা সেক্স। সঙ্গীতের নামে শো-বিজের পসরা সাজিয়ে ভারতীয় শিল্পীরা শুধু বাংলাদেশের দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধই করছেন না, সেই সঙ্গে কামিয়ে নিচ্ছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। এ টাকা স্লন্ডির মাধ্যমে এমন নিখুঁতভাবে আগাম হিসেবে পাচার হয়ে যায় যে, ধরার বা বলার কোনো উপায় নেই। পাশাপাশি মান্না দে, পূর্ণদাস বাউলের গান অথবা হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার ক্লাসিক্যাল বংশীবাদন উপভোগ করার জন্য যখন শ্রোতার ঢল সামলানো দায় হয়ে পড়ে, তখন মানতেই হয়, ভালো গানবাদ্য উচ্চমূল্যে শ্রবণের মতো মানুষের আকাল বাংলাদেশে অন্তত পড়েনি। দরকার শুধু সুষ্ঠু আয়োজনের।
আমাদের কথাও এখানটায়। ভারতীয় শিল্পীরা টাকা পাচ্ছেন; বাংলাদেশে এসে পারফর্ম করে যাচ্ছেন। তাদের আনছেন কিন্তু বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা, কেউ পয়সা কামানোর জন্য, কেউ ‘জাতে’ ওঠার লালসায়। অথচ বাংলাদেশী শিল্পীদের নিয়ে তেমন আয়োজন নেই বললেই চলে। ধারণ, লালন, পরিচর্যা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমাদের সঙ্গীত শিল্প এবং শিল্পীরা আজ রামায়ণের উপেক্ষিতা ঊর্মিলার দশায় উপনীত। সঙ্গত কারণেই তারা হতাশ এবং বেদনার্ত। গতকাল আমার দেশ-এ প্রকাশিত কয়েকজন শিল্পীর প্রতিক্রিয়ায় তাদের অভিমানমিশ্রিত ক্ষোভ ফুটে উঠেছে, যা এক ধরনের সতর্কবাণীও বলা যায়। এর পরিণতি গোটা জাতির জন্য কতবড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে সে বোধ জাগ্রত হয়ে আমাদের সক্রিয় করে তোলার ব্যাপারে ইতোমধ্যে যথেষ্ট বিলম্ব ঘটে গেছে। এই বিলম্ব দীর্ঘতর হলে জাতীয় স্বাতন্ত্র্যের আর কিছু অবশিষ্ট নাও থাকতে পারে। কারণ নির্বীর্য সংস্কৃতির ধারক হয়ে কোনো জাতি শক্তিশালী হিসেবে টিকে থাকতে পারে না।
No comments