মিলনমেলা-ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে কালের কণ্ঠ by মাহমুদুল হাসান

মাদের দেশে পাস করা লোকের অভাব নেই, অভাব জ্ঞানী লোকের। এ অভাব পূরণের জন্য তরুণসমাজকে পরীক্ষা পাসের মোহ থেকে মুক্ত করে প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা তুলে বিশ্বের বুকে দাঁড়াতে হলে জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই তরুণসমাজের সামনে। কালের কণ্ঠের এ উদ্যোগ তরুণসমাজকে দেশ ও জাতি সম্পর্কে তথ্য সচেতন করবে। গড়ে তুলবে পাঠ্যাভ্যাস, বাড়াবে জ্ঞানের পরিধি। সৃষ্টি হবে সামাজিক


মূল্যবোধ। এমনটাই মনে করেন ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকীব। তাঁর কথা শেষ হতে না হতেই একই বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান হাবীব, রাইসুল, এসরার, হযরত আলী ও মাহিব এসে হাজির। এরই মধ্যে একজন উচ্চ স্বরে পড়ছেন কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর 'জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে আইন ভেঙে'। একজন বলছেন, 'শিক্ষার সঙ্গে কর্মজীবনের যোগসূত্র তৈরিতে কাজ করছে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি।'
এ রকম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায় সেখানে। বাংলা সাহিত্যে বীরবল ছদ্মনামে খ্যাত লেখক প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, যে শিক্ষায় আনন্দ নেই, সেটা শিক্ষা হতে পারে না। এ কথার প্রমাণ দিতেই মহিব, রাইসুলরা আড্ডার ছলে বিভিন্ন শিক্ষণীয় বিষয়কে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসছেন। খবরের কাগজে প্রকাশিত নিত্যনতুন ঘটনার সংবাদ তাঁদের মনকে নাড়া দেয়_এমনটাই যেন জানান দিচ্ছে তাঁদের কথাবার্তায়। আজও এর ব্যতিক্রম নয়; কালের কণ্ঠ হাতে পেয়ে প্রত্যেকেই উল্লসিত। কেউ বাসায় পড়ার জন্য যত্ন করে ব্যাগে ঢুকিয়েছেন আবার কেউ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছেন।
গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রশাসনিক ভবনের লিফটের সামনে লম্বা সারি। ফটকের বাইরে চলে যাওয়া সে সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন অনেক শিক্ষার্থী। ক্লাসে যাওয়ার তাড়া আছে। এরই মধ্যে পত্রিকা পড়ছেন কেউ কেউ।
'ক্লাসের ফাঁকে লাইব্রেরিতে বসে কালের কণ্ঠসহ অন্যান্য পত্রিকা পড়ি।
কিন্তু কালের কণ্ঠ আমার বেশ পছন্দ। পত্রিকাটিতে পড়ার মতো কিছু একটা পাই। অনেক সমৃদ্ধ মনে হয় আমার কাছে।' এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি জানালেন বিবিএ তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী তাসলীমা জামান।
পাশেই রয়েছে আরেকটি একাডেমিক ভবন। সামনে ফাঁকা জায়গায় একটু উঁচু দেয়ালে বসে প্রতিদিনই আড্ডায় মাতেন সৌরভ, নোবেল, নাজমুলরা। তাঁদের একজন বলে উঠলেন, 'এখন তো কালের কণ্ঠই সেরা। খেলাধুলা, বিনোদন সব কিছুই আমার ভালো লাগে।' নোবেল বলেন, 'একটু যোগ করতে চাই, কালের কণ্ঠের নিয়মিত পাঠক আমি।'
বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের সামনের বটগাছের নিচে রয়েছে বেশ কিছু টং দোকান। বিভিন্ন ধরনের খাবারের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। এক হাতে কালের কণ্ঠ, আরেক হাতে চায়ের কাপ। চায়ে চুমুক দিচ্ছেন আর পত্রিকা দেখছেন দিয়া, তাহমিনা, সুমাইয়া, রাতুল, আশিক, বাবুলরা। জামাল টি-স্টলে বসে কালের কণ্ঠ পড়ছেন হাসান, মাহফুজ, অনিক, খালেদরা। কালের কণ্ঠের সাপ্তাহিক বিশেষ আয়োজনের কথা বলেন খালেদ। তিনি বলেন, 'এ আয়োজনের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে জানতে পারি খুব সহজেই। পুঁথিগত শিক্ষার বাইরেও অনেক কিছু জানা দরকার এবং এটি ছাত্রজীবন থেকেই শুরু করতে হয়, যা আমরা খবরের কাগজের মাধ্যমেই পাচ্ছি।' তিনি কালের কণ্ঠের নিয়মিত পাঠক দাবি করে আরো বলেন, 'আমার পুরো পরিবারই কালের কণ্ঠের পাঠক।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী, রেজোয়ান, লাভিব, অর্ণব, তুহিন, মুনি্ন, কণা সকাল থেকেই আছেন ক্যাম্পাসে। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। পড়ন্ত বেলায় ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। এর মধ্যেই হাজির হলেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। শিক্ষার্থীরা তাঁকে কাছে পেয়ে আনন্দিত।
উপাচার্যের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, 'আমরা কালের কণ্ঠের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের যুক্ত করতে চাই। সুযোগ করে দিতে চাই লেখালেখিতে।'
উপাচার্য অধ্যাপক আহমদ শফি বলেন, 'কালের কণ্ঠ পত্রিকাটি ইতিমধ্যে অনেক জনপ্রিয় হয়ে গেছে। ছাপার মান, খবর_সব মিলিয়ে অনেক সমৃদ্ধ মনে হয় আমার কাছে।'
পুরো ক্যাম্পাসেই কালের কণ্ঠের জয়জয়কার যেন। মহাখালী-গুলশান সড়কের পাশে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস। মূল ভবনের নিচতলার মেঝেতে বসে কালের কণ্ঠের ম্যাগাজিন 'মগজ ধোলাই'-এর মজার ধাঁধা মেলাতে ব্যস্ত কেউ কেউ। কেউ বা ব্যস্ত 'আয় ব্যয়' নিয়ে। কথা হয় আফিয়া শারমিন মীমের সঙ্গে। তিনি বলেন, "বেড়ানো আমার জন্য সব সময় মজার ব্যাপার। সুযোগ পেলেই চলে যাই বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে। কালের কণ্ঠের 'অন্য কোনোখানে' আমার খুব ভালো লাগে। পাই নতুন কিছু জায়গার সন্ধান, যা আমাকে সত্যিই আনন্দ দেয়।"
গতকাল ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ মিলনমেলার আয়োজনে কালের কণ্ঠের পাঠক সংগঠন শুভসংঘের বনু্লদের সঙ্গে ছিলেন পত্রিকার সার্কুলেশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হারুন অর রশীদ ও একই বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ। সকাল ৯টায় শুরু হয় এ মিলনমেলা। চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

No comments

Powered by Blogger.