পবিত্র কোরআনের আলো-প্রাকৃতিক বালা-মুসিবতের অবসান হওয়া মাত্র তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করত
১৩২. ওয়া ক্বা-লূ মাহ্মা তা'তিনা বিহী মিন আয়াতিন লিতাছ্হারানা বিহা; ফামা নাহনু লাকা বিমু'মিনীন। ১৩৩. ফাআরছালনা আ'লাইহিমুত্ তূফা-না ওয়ালজারা-দা ওয়ালক্বুম্মালা ওয়াদ্দ্বাফা-দিআ' ওয়াদ্দামা আয়া-তিম্ মুফাস্সালা-তিন ফাছতাকবারূ ওয়া কা-নূ ক্বাওমাম্ মুজরিমীন। ১৩৪. ওয়া লাম্মা ওয়াক্বাআ' আ'লাইহিমুর্ রিজ্যু ক্বা-লূ ইয়া-মূছা উদ'উ লানা রাব্বাকা বিমা আ'হিদা ই'নদাকা; লায়িন কাশাফ্তা আ'ন্নার্ রিজযা লানু'মিনান্না লাকা
ওয়ালানুরছিলান্না মাআ'কা বানী ইসরা-ঈল। ১৩৫. ফালাম্মা কাশাফ্না আ'নহুমুর্ রিজযা ইলা আজালিন হুম বা-লিগূহু ইযা হুম ইয়ানকুছূন।
[সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ১৩২-১৩৫]
অনুবাদ : ১৩২. আর তারা (মিসরীয় লোকরা) মুসাকে বলত, আমাদের জাদু করার জন্য তুমি আমাদের সামনে যত আলামতই নিয়ে আসো, আমরা কিন্তু কখনোই তোমার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করব না।
১৩৩. সুতরাং আমি তাদের ওপর ঝড়-ঝঞ্ঝা, পঙ্গপাল, কীটপতঙ্গ, ব্যাঙ ও রক্তপাতজনিত বালা-মুসিবত অবতীর্ণ করেছি; এগুলো পৃথক পৃথক বা উপর্যুপরি নিপতিত হয়েছে। এর পরও তারা কিন্তু অহংকারই করেছে। বস্তুত তারা ছিল পাপাচারি জাতি।
১৩৪. যখন তাদের ওপর প্রাকৃতিক শাস্তি এসে নিপতিত হতো তখন তারা বলত, হে মুসা! তোমার সঙ্গে তোমার প্রভুর যে অঙ্গীকার রয়েছে, এরই বরাত দিয়ে আমাদের জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা জানাও। যদি তুমি আমাদের ওপর থেকে এই মুসিবতের অপসারণ ঘটাতে পারো, তবে আমরা তোমার ওপর বিশ্বাসী হব এবং বনিইসরাইলকে তোমার সঙ্গে যেতে দেব।
১৩৫. এরপর যখন আমি তাদের ওপর থেকে সাময়িকভাবে মুসিবত দূর করে দিতাম তাদের একটা গন্তব্যে উপনীত হওয়া পর্যন্ত, তখন তারা নিমেষে তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ফেলত।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে মিসরের ফারাও সাম্রাজ্যের অনুগত পথভ্রষ্ট মানুষদের হেদায়েতের পথে আনতে মুসা (আ.) যে সংগ্রাম করেছিলেন এবং যেভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন এর আরো কিছু বিবরণ এখানে তুলে ধরা হয়েছে। ১৩২ নম্বর আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, মুসা (আ.)-এর আদর্শিক অবস্থানকে তারা যেভাবে ভুল বুঝেছিল এবং যেভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল সেই বিষয়টি। তারা মুসা (আ.)-এর নবুয়ত ও মুজেজার বিষয়টি পুরোপুরি জাদুকরী এবং জাদু বলে অভিহিত করছিল। অথচ জাদুকরী ও জাদু থেকে নবুয়ত ও মুজেজা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
৩৩ নম্বর আয়াতে অহংকারী নৃপতি ফেরাউন ও তার বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের ওপর আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রেরিত প্রাকৃতিক বালা-মুসিবত ও এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে। এদের ওপর বালা-মুসিবত একের পর এক আসতে থাকে। প্রথমে আসে বন্যা ও ঝড়-ঝঞ্ঝা। ফলে তাদের ফল-ফসল নষ্ট হয়ে যায়। অতঃপর তারা যখন ইমান আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুসা (আ.)-কে দিয়ে দোয়া করাল, তখন আবার ফসল জন্মাতে লাগল। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করল। তারা অন্যায়-অবিচারের পথই অনুসরণ করতে থাকল। তারপর পঙ্গপাল এসে সেই ফসল বিনষ্ট করে দিল। আবারও সেই প্রতিশ্রুতি দিল, ফলে বিপদ দূর হলো এবং স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে এল। কিন্তু এবারও তারা ওয়াদা ভঙ্গ করে কুফরিতে লিপ্ত থাকল। তখন ফল-ফসলে ব্যাপক কীট-পতঙ্গের আক্রমণ হলো। এতেও তাদের চৈতন্য হলো না। তারা নবীর আহ্বানে সাড়া দিল না। এরপর দেশ ব্যাঙে সয়লাব হয়ে গেল, ব্যাঙের উৎপাতে জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়ল। এমনিভাবে সমাজে কলহ-বিবাদ ও খুন-খারাবির পরিমাণ বেড়ে গেল। ১৩৪ ও ১৩৫ নম্বর আয়াতে এ বিষয়গুলো কিছুটা বিস্তারিতভাবেই বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এ সবই করছিলেন তাদের মনে চেতনা জাগিয়ে তোলার জন্য এবং তাদের পরীক্ষা করার জন্য। সব চেষ্টা যখন বিফল হলো এবং পরীক্ষা সমাপ্ত হলো, তখন আরো কঠিন পরিণতি তাদের ওপর নেমে এসেছিল। পরবর্তী আয়াতগুলোতে সে কাহিনীও বর্ণনা করা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments