দুই কিশোরের বুদ্ধিমত্তা-ট্রেন বাঁচল, রেল বাঁচবে তো
মানুষের প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব চলন্ত ট্রেনের দুর্ঘটনা রোধ করেছে এবং বিপুলসংখ্যক যাত্রীর প্রাণ বাঁচিয়েছে_ এমন খবর নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের নানা বয়সের মানুষ এমন সাহসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে ট্রেন রক্ষা করে যাত্রীদের প্রাণে বাঁচিয়েছেন। তাদের কীর্তি সংবাদপত্রে এবং বেতার ও টেলিভিশনে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়। এভাবে একদল লোক অনুপ্রাণিত হয়। নিজেরাও তেমন কিছু করতে চায়। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় কুমিল্লা সদর দক্ষিণ
উপজেলার শিকারপুর রেললাইনের এক জোড়াস্থলে প্রায় এক ফুট অংশ ফাঁকা দেখে রাকিব ও সুমন নামে দুই কিশোর নিজ নিজ বাড়িতে ছুটে যায়। তাদের একজন নিয়ে আসে সোয়েটার, অপরজন ওড়না। তারপর দু'জনে মিলে তা ওড়াতে থাকে লাইনের ভাঙা অংশের কাছে দাঁড়িয়ে। লোকাল ট্রেন এমনিতেই ধীরলয়ে চলে। তাই লাকসাম থেকে আসা ট্রেনটির চালকের পক্ষে দুই কিশোরের 'লাইন অবরোধের' কারণ ধরতে সমস্যা হয়নি। ট্রেনটি তিনি থামিয়ে দেন এবং রাকিব ও সুমনের প্রশংসা করেন। লাইন মেরামত করতে ঘণ্টাদুয়েক সময় লাগে। এ কারণে এ রুটে অন্য ট্রেন চলাচল বিঘি্নত হয়। শিকারপুরের অধিবাসীরা তাদের দুই কিশোরকে নিয়ে নিশ্চয়ই গর্ববোধ করছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও হয়তো শুকরিয়া আদায় করছে। তারা রাকিব ও সুমনকে পুরস্কৃতও করতে পারে। বাংলাদেশ রেলওয়ে তার দেড়শ' বছর অতিক্রম করেছে। বিশ্বের বহু দেশে রেলগাড়ি যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। পরিবেশবান্ধব হিসেবেও এর দারুণ কদর। এর গতি বাড়ছে, যাত্রী সুবিধা বাড়ছে। কিন্তু হায়! বাংলাদেশ রেলওয়ে যে একটি অবহেলিত খাত। এখানে লাইন কমছে, গতি কমছে। কমছে যাত্রী সুবিধাও। পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন ঘটবে_ এমন ভরসা করা চলে না। তবে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলার পরিকল্পনা যে একেবারে নেই_ সেটা বলা যাবে না। রাজধানীতে নাকি মাটির কয়েক ফুট ওপর দিয়েও রেলগাড়ি চলবে; পাতালেও চলবে_ এমন স্বপ্নও তো রয়েছে আমাদের। স্বপ্ন থাকা ভালো, নইলে তা পূরণের প্রেরণা কোথায় মিলবে? তবে আপাতত আমাদের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রাকিব-সুমনকে নিয়ে প্রচারকার্যে মেতে থেকে কিছু দিন আয়েশেই কাটিয়ে দিতে পারে।
No comments