গুচ্ছ ঘোষণায়ও কাজ হচ্ছে না-* ডিএসইতে সূচক কমেছে ৩০৮ পয়েন্ট -* লেনদেন হয়েছে ৪৫১ কোটি টাকা

দেশের দুই স্টক এঙ্চেঞ্জেই বড় ধরনের দরপতন হলো গতকাল রবিবার। সারা দিনই দুই স্টক এঙ্চেঞ্জে সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে লেনদেন হয়। দিনের লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৩০৮ পয়েন্ট কমে ৫০৬৫ পয়েন্টে স্থির হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ৭৭৪ পয়েন্ট কমে ১৪৪৬৫ পয়েন্টে শেষ হয়েছে। প্রায় সব কম্পানির শেয়ারের দাম কমায় সূচকের এই দরপতন হয়েছে।


বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৩০ শতাংশের নিচে শেয়ার রয়েছে এমন কম্পানির পরিচালকরাই গতকালের দরপতনের বড় ভূমিকা রেখেছেন। কম দামে শেয়ার কেনার জন্যই তাঁরা এই দরপতন ঘটাচ্ছে।
এদিকে সরকারের পক্ষে প্যাকেজ ঘোষণার পরও এই দরপতনে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। দরপতনকালে বরাবর বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতারা বিক্ষোভ শুরু করেন। কিন্তু গতকাল দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এই সংগঠনের নেতারা বিক্ষোভ ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন। একপর্যায়ে বিক্ষোভের ভিন্নমুখী গতিপথ ঠেকাতে মিছিলে নেতৃত্ব দেন তাঁরা। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মিশে গতকালের বিক্ষোভে যোগ দেন তাঁরা।
চার মাসের টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের আন্দোলনের মুখে গত ১৬ নভেম্বর (বুধবার) রাতে প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে চার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। এ বৈঠকের পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন (এসইসি) অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে। এসব বৈঠকের ফসল হিসেবে গত ২৩ নভেম্বর (বুধবার) প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এই প্যাকেজে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগসহ ২১ দফা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।
এরপরের দিন বৃহস্পতিবার বারবার ওঠানামার পর মাত্র দশমিক ৬৫ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয় ডিএসইর। গতকাল ছিল প্যাকেজ ঘোষণা-পরবর্তী দ্বিতীয় দিন। দিনটি শেয়ারবাজারের অগি্নপরীক্ষার দিন ছিল। প্যাকেজ ঘোষণার প্রভাব পড়েছে এই দিনে। গতকাল শুরুতেই বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী অপেক্ষা করেছেন বাজারের গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য। কিন্তু শুরুতেই দরপতন হতাশ করে তাঁদের।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বড় বড় বিনিয়োগকারীরা শুরুতেই শেয়ার বিক্রি করেন। এতে বিক্রির চাপ বেড়ে যায়। আর শুরু হয় দরপতন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব পরিচালকের হাতে ৩০ শতাংশের নিচে শেয়ার রয়েছে, তাঁরাই দরপতনে গতকাল বড় ভূমিকা রেখেছেন।
গতকাল শুরুর দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা দুপুর সোয়া ২টার দিকে ডিএসইর সামনে জড়ো হন। এ সময় বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতারা হাজির হন। তাঁরা বিক্ষুব্ধ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সান্ত্বনা দেওয়া চেষ্টা করেন। এ সময় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ চলে।
গতকাল ডিএসই ভবনের সামনের জড়ো হওয়া বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়টি খোলাসা করে বুঝিয়ে দেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতা আতা উল্লাহ নাঈম। তিনি বিক্ষোভরত বিনিয়োগকারীদের শান্ত করতে গিয়ে বলেন, 'যেসব কম্পানির পরিচালকদের হাতে ৩০ শতাংশের নিচে শেয়ার রয়েছে, তাঁরাই এই দরপতন ঘটাচ্ছেন। আপনারা এ সময় তাঁদের হাতের ক্রীড়নক হয়ে শেয়ার বিক্রি করবেন না।' এ সময় ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান রশীদ চৌধুরীও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সান্ত্বনা দেওয়া চেষ্টা করেন। মিজান রশীদ বলেন, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে না। সরকারের প্রণোদনা বাস্তবায়ন না করে কেন তারা হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে, সে ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এসইসিসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এ জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে সরকারের প্রণোদনা বাস্তবায়ন শুরু না হলে ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে বিক্ষোভরত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বারবার এই সময়সীমা ২৪ ঘণ্টায় নামিয়ে আনার জন্য চাপ দেন। তবে মিজান রশীদ চৌধুরী তাঁর অবস্থানে অনড় থাকেন। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের চাপের মুখে বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন ঐক্য পরিষদের এই নেতারা। তবে এ সময় ডিএসইর সামনের সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকে। ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন ছিল।
বাজারের এই দরপতনের ব্যাপারে চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জের (সিএসই) সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ বলেন, ব্যাংক বা কম্পানিগুলো এক দিনেই শেয়ার কিনতে পারে না। এ জন্য পরিচালনা পরিষদের অনুমোদন দরকার হয়। তিনি বলেন, যদি কেউ কোনো অনিয়ম করে তবে সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেখা দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, 'শোনা যাচ্ছে যেসব পরিচালকের হাতে ৩০ শতাংশের কম শেয়ার রয়েছে, তাঁরাই গতকালের দরপতনের ভূমিকা রেখেছে। বিষয়টি এসইসির সার্ভিলেন্সে ধরা পড়বে। এ বিষয়ে এসইসিকে কঠোর হতে হবে।'
ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, এদিন সাধারণ মূল্যসূচক ৫০৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। তবে ১৫ মিনিটে সূচকের তীর কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও আবারও নিম্নমুখী হয় সূচকের তীর, যা সারা দিনই অব্যাহত থাকে।
ডিএসইতে গতকাল ২৫৪টি প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২৪৭টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে মাত্র সাতটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। স্টক এঙ্চেঞ্জটিতে গতকাল ৪৫১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ৭৯ কোটি টাকা কম।

No comments

Powered by Blogger.