স্মরণ-তোমার শূন্যতা কখনো পূরণ হবে না
ঢাকার রাজনীতির নন্দিত নায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও স্নেহভাজন, গণতন্ত্রমনা, ঢাকাবাসীর অহংকার, ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত সফল মেয়র ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ, যে মানুষটি রাজধানীর প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর দিবাগত রাতে ৬২ বছর বয়সে তিনি ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ
নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ তাঁর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৪৪ সালের ১ এপ্রিল সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবদুল আজিজ, মা মুনি্ন বেগমের পরিবারে মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন ছোট ছেলে। ১৯৬৫ সালে বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তিনি একান্ত সচিব থাকাকালীন ছয় দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি, ছয় দফা মুক্তি সনদ প্রণয়ন এবং প্রচারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের জাতীয় নির্বাচন ও মহান মুক্তিসংগ্রামে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকা চিরস্মরণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালের সব আন্দোলন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সব আন্দোলনে তিনি রাজপথে সংগ্রামে প্রথম কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অতুলনীয় সাংগঠনিক দক্ষতা এবং সম্মোহনী বাগ্মিতা তাঁকে কিংবদন্তিতুল্য খ্যাতি ও ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেওয়া ঢাকা-১২ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী সময়ে হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। সংগ্রামী জীবনে ১৯৭৬ সালে মোহাম্মদ হানিফ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন, মাঝখানে কিছুদিন বিরত থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ৩০ বছর এ মহান দায়িত্ব পালন করেন। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মোহাম্মদ হানিফ। ১৯৯৪ সালে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ঢাকার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন এই নেতা। তাঁর নেতৃত্বে ছিয়ানব্বইয়ের মার্চের শেষ সপ্তাহে 'জনতার মঞ্চ' গঠন করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট তৈরি করেন। তাই ছিয়ানব্বইয়ের ১২ জুন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করেন এবং পরবর্তী সময়ে দেশ পরিচালনার জন্য তাঁর প্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগের বিজয়ে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। একজন প্রকৃত নেতা হিসেবে জাতির প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে এই অকুতোভয় সৈনিক রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০৪ সালের ভয়াল ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশের ট্রাকমঞ্চে শেখ হাসিনার ওপর নারকীয় গ্রেনেড হামলার সময় নিজের জীবন তুচ্ছ করে মানবঢাল রচনা করে প্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে রক্ষার প্রাণান্ত চেষ্টা করেন মোহাম্মদ হানিফ। ২০০৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তাঙ্গনে এক সমাবেশে সভাপতির বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন, মাথায় বিদ্ধ স্প্লিন্টারের প্রতিক্রিয়া পরবর্তী সময়ে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ও অকালমৃত্যুর কারণ হিসেবে কাজ করে। তাঁর মৃত্যুতে সৃষ্ট শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। দেশের রাজনীতিতে তাঁর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। আমরা তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
মোহাম্মদ হাবিবুল ইসলাম সুমন
মোহাম্মদ হাবিবুল ইসলাম সুমন
No comments