যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে-নিট খাতে চার মাসে আয় কমেছে ১৬ শতাংশ by আবু হেনা মুহিব
তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে এ খাতের রফতানি কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস থেকে এ যাবৎ টানা ঋণাত্মক ধারায় চলছে রফতানি। এ সময় (জুলাই_অক্টোবর) নিট পোশাকের রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৬ শতাংশ। ডলারের অঙ্কে রফতানি আয় কমেছে ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ওভেন ও নিট মিলে এ সময় রফতানি কমেছে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ।পরিস্থিতি নিয়ে রফতানিকারক, গবেষণা সংস্থা এবং অর্থনীতিবিদরা তাদের উদ্বেগের কথা
জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ সব রফতানি বাজারে ৩০ শতাংশ হারে রফতানি আদেশ কমে যাওয়ার কারণে আগামী দিনেও এ উৎস থেকে রফতানি আয় কমে যাওয়ার ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি, বিদেশে কর্মরত মিশনগুলোকে আরও সক্রিয় করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। আগামী মাসে জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডবি্লউটিও) সম্মেলনে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধার দাবি তোলা হবে বলে জানা গেছে। এলডিসি হিসেবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জাপানসহ উন্নত বিশ্বে বর্তমানে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা ভোগ করছে দেশের রফতানি খাত।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ( ইপিবি) এবং নিট পোশাক রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় নিট থেকে রফতানি আয় ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ কমেছে। ডলারের হিসেবে আয় কমেছে এক কোটি ৬২ লাখ ডলার। আগস্ট মাসে শতাংশ হিসেবে ৪ শতাংশ এবং ডলারের হিসেবে কমেছে ৫০ লাখ ডলার। একক মাস হিসেবে রফতানি সবচেয়ে বেশি কমেছে সেপ্টেম্বরে। এ সময় রেকর্ড ৩৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ কমেছে রফতানি আয়। ডলারের হিসেবে কমেছে ৩ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। ৯০ লাখ ডলার কমেছে অক্টোবর মাসে। শতাংশের হিসেবে এ সময় আয় কমেছে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। উলি্লখিত চার মাসে গড় রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৫ শতাংশের বেশি। ডলারের হিসাবে রফতানি আয় কমেছে ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। তৈরি পোশাকের ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশের মধ্যে নিটের অবদানই বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে নিট থেকে মোট রফতানি ৪২ শতাংশ এবং ওভেনে ৩৬ শতাংশ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) রফতানি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চলতি অর্থবছরের এ যাবৎ সামষ্টিক অর্থনীতির গতিচিত্র পর্যালোচনায় এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, রফতানিতে এক পণ্যের প্রতি নির্ভরতা এবং তার পড়তি প্রবণতা আন্তর্জাতিক লেনদেনে চাপ বাড়াচ্ছে। সিপিডি বলেছে, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি রফতানি পণ্যের রফতানি কমেছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে পোশাক খাতের রফতানি কমেছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। পোশাকবহির্ভূত পণ্যে রফতানি কমেছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ।
বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এ বিষয়ে গতকাল সমকালকে বলেন, বড় বাজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমে যাওয়া আমাদের রফতানি খাতের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। তবে বলতে গেলে গোটা রফতানি বাজারই এখন এ রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রথম দফা বিশ্বমন্দা কাটিয়ে উঠতে না উঠতে দ্বিতীয় দফা মন্দার এবং উচ্চ হারের বেকারত্বের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি.
বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এ প্রসঙ্গে সমকালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের রফতানি কমে যাওয়ার প্রবণতা আগামীতেও অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ইউরোপের মতো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এ বাজার থেকে রফতানি আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এ জন্য আগামী মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য ডবি্লউটিওর সম্মেলনে এ বিষয়ে জোরালো তৎপরতা শুরু করা দরকার। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং মিশনগুলোকে এ বিষয়ে তৎপরতা বাড়াতে সরকারি উদ্যোগের কথা বলেন তিনি।
No comments