বখাটে-খুনি-পুলিশের অমার্জনীয় নিষ্ক্রিয়তা

বার বখাটেদের হাতে প্রাণ দিলেন বরিশালের শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা জিন্নাত আলী। দীর্ঘদিন ধরে তার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল বখাটেরা। মেয়েকে রক্ষার জন্য তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছেন। শুধু প্রতিবাদ নয়, থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) পর্যন্ত করেছিলেন। তার প্রতিবাদ ও জিডির পর পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল, কিন্তু বখাটেরা এ প্রতিবাদকে ভালোভাবে নেয়নি। তারা নিষ্ক্রিয়ও থাকেনি। শেষ পর্যন্ত বখাটেদের ছুরির আঘাতে প্রাণ দিতে হলো একজন মুক্তিযোদ্ধা


ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে। প্রশ্ন হলো, বখাটেদের উৎপাতে অতিষ্ঠ এক মেয়ের বাবা আইনি সহায়তার জন্য থানার শরণাপন্ন হওয়ার পরও কেন থানা নিষ্ক্রিয় ছিল? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিঠ কতটা দেয়ালে ঠেকলে মেয়ের বাবা মেয়েকে রক্ষার জন্য থানার শরণাপন্ন হতে পারেন তা বোধগম্য। কিন্তু সকলে বিষয়টি বুঝলেও থানা বিষয়টি বুঝতে পারেনি। জিন্নাত আলী নিহত হওয়ার পর জানা গেল, যে থানায় জিন্নাত আলী জিডি করেছেন বখাটের বাড়ি সে থানার অধীনে ছিল না। তাই তারা ব্যবস্থা নিতে পারেনি। প্রশ্ন হলো, এ অজুহাত কি বখাটেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। অপরাধীরা থানার আওতা হিসাব করে বসবাস করে না। প্রয়োজনে পুলিশকেই অপরাধীর পেছনে ধাওয়া করতে হয়। একটি মেট্রোপলিটন শহরে এটি সহজ কাজ। আর থানার আওতা যদি গুরুতর বিষয় হয়ে থাকে তবে কাউনিয়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা জিন্নাত আলীকে কোতোয়ালি থানার শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিতে পারতেন। নিজেরা উদ্যোগী হয়ে জিডিটি কোতোয়ালি থানার নজরে আনতে পারতেন। কিন্তু এসবের কিছুই করেননি তারা। অবশেষে প্রাণ দিতে হলো প্রতিবাদী একজন বাবাকে। বখাটেদের বিরুদ্ধে সারাদেশে যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তরফে যেভাবে বখাটে প্রতিরোধের নির্দেশনা এসেছে তার সঙ্গে পুলিশের এ আচরণ মানানসই নয়। অভিযোগ পেয়ে তারা নিষ্ক্রিয় থাকলে দেশে একের পর এক হত্যা ও উত্ত্যক্ত করার ঘটনা ঘটতেই থাকবে। স্বাভাবিক কারণে জিন্নাত আলীর মৃত্যুর পর এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেছেন, রাস্তায় নেমে এ হত্যার শাস্তি দাবি করেছেন। যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের অতিদ্রুত গ্রেফতার করা পুলিশের কর্তব্য। এলাকাবাসীর এ স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখি। জিন্নাত আলীর মৃত্যুর পর এলাকাবাসী যেভাবে তৎপরতা দেখিয়েছে তার ছিটেফোঁটা প্রতিবাদ যদি তার মৃত্যুর আগে বখাটেদের বিরুদ্ধে দেখানো হতো, তবে হয়তো বখাটেদের দৌরাত্ম্য এত দূর পর্যন্ত গড়াতে পারত না, জিন্নাত আলীর মতো মানুষকেও এভাবে প্রাণ দিতে হতো না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একটি মেয়ে বখাটেদের হাতে উত্ত্যক্ত হচ্ছে দেখেও এলাকাবাসী মেয়েটি বা তার পরিবারের পাশে দাঁড়ায় না। অজানা ভয়ে তারা উদ্যমহীন থাকে। আর এর ফলে উত্ত্যক্তের ভীতি আরও বেড়ে যায়। এটি কিছুতেই কাম্য নয়। যেখানে বখাটেদের উৎপাত সেখানেই সম্মিলিত প্রতিরোধ থাকতে হবে। নইলে শেষ পর্যন্ত তাদের ভয়ঙ্কর রূপটিই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। বরিশালে যে ঘটনাটি ঘটল তা দুঃখজনক। গণমাধ্যমে বারবার আশা প্রকাশ করা হয় যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। কিন্তু একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। আমরা মনে করি, এ জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। সর্বাগ্রে থানাগুলোকে সক্রিয় করা দরকার। প্রয়োজনে বখাটেদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিশেষ তদারকিতে থাকা দরকার। নয়তো এমন দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.