গণজাগরণ পরিণত হবে গণবিপ্লবে-খুলনার জনসভায় খালেদা by লোটন একরাম ও মামুন রেজা,
বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, ব্যর্থ মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে সৃষ্ট গণজাগরণ গণবিপ্লবে পরিণত হবে। তাদের চিরস্থায়ী ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন কখনোই পূরণ হবে না। যশোরের পথসভা ও খুলনার জনসভায় তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে হবে। সেনাবাহিনী ছাড়া ও ইভিএমের মাধ্যমে কোনো নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, দুর্নীতির কারণে এ সরকার পদ্মা সেতু
তৈরি করতে পারবে না। দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত ক্ষমতায় এলে আমরা তাদের বিচার করব। মহাজোট সরকারকে বিদায় করতে রোডমার্চ শেষে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচিতে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। খুলনা অভিমুখে বিএনপির তৃতীয় রোডমার্চ শেষে গতকাল রোববার বিকেলে স্থানীয় সার্কিট হাউস মাঠে এক বিশাল জনসভায় খালেদা জিয়া বক্তৃতা করছিলেন। যশোরের পথসভায় খালেদা জিয়া বলেন, সেনাবাহিনী ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন তারা মানবেন না। যশোরে রাতযাপনের পর সকালে সার্কিট হাউস মাঠে পথসভা শেষে দুপুর পৌনে ১টায় খুলনা অভিমুখে রোডমার্চ শুরু করেন খালেদা জিয়া। খুলনা যাওয়ার আগে বাগেরহাটে খালেদা জিয়া হজরত খানজাহান আলীর (রহঃ) মাজার
জিয়ারত করেন। রোডমার্চে চারদলীয় জোট, সমমনা ও বিভিন্ন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
খালেদা জিয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, তিনি ডা. মিলনের হত্যাকারী। তাকে পাশে নিয়ে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও বিরোধী দলের আসনে বসানোর ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রকৃত খুনি ও অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, তাদের ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়স্বজন সবাই বিদেশে থাকেন। প্রয়োজন হলে তিনিও বিদেশে চলে যাবেন। রোডমার্চ ও মহাসমাবেশ দেখে প্রধানমন্ত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। দেশের সব কাজ বাদ দিয়ে তিনি কাগজ-কলম ও কাঁচি নিয়ে বসেছেন। রোডমার্চের গাড়ির হিসাব গুনছেন। বিদ্যুতের ব্যাপারে কেউ লিখলে বা প্রতিবাদ করলে লাইন কেটে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে শনিবার সকালে ঢাকা থেকে খুলনা অভিমুখে তিন সহস্রাধিক গাড়ির বহর নিয়ে রোডমার্চ শুরু করেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রোডমার্চের ৩০০ কিলোমিটার পথে পাবনা ও ঝিনাইদহে দুটি পথসভা এবং কুষ্টিয়ায় একটি জনসভা শেষে রাত ১১টায় যশোর পেঁৗছেন খালেদা জিয়া। যশোর সার্কিট হাউসে রাতযাপন করেন তিনি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাংবাদিকরা যশোরে রাতযাপন করেন। তবে বহরে অংশ নেওয়া অন্য নেতাকর্মীরা রাতযাপন করেন খুলনায়। যশোর সার্কিট হাউস থেকে সকাল সাড়ে ১১টায় শহরের ঈদগাহ ময়দানে পথসভাস্থলে আসেন খালেদা জিয়া। এখানে হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক তুমুল করতালি দিয়ে তাদের নেত্রীকে অভিনন্দন জানান। যশোরের পথসভা শেষ করে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া দুপুর পৌনে ১টায় খুলনা অভিমুখে দ্বিতীয় দিনের রোডমার্চ শুরু করেন। যশোরের পথসভাটি হাজার হাজার কর্মী-সমর্থকের উপস্থিতিতে জনসভার রূপ নেয়। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ঈদগাহ মাঠে পেঁৗছলে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম।
পথসভা শেষে খুলনা অভিমুখে রাজারহাট, রূপদিয়া বাজার, বসুন্দিয়া, প্রেমবাগ, চেগুটিয়া, নওয়াপাড়া, ফুলতলা, দৌলতপুর প্রভৃতি স্থানে সড়কের দু'পাশে হাজারো নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে ফুল ছিটিয়ে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান। পাজেরো জিপ থেকে হাত নেড়ে তিনি কর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। যশোর থেকে খুলনার ৫০ কিলোমিটার সড়কপথের বিভিন্ন স্থানে কয়েকশ' শুভেচ্ছা তোরণ নির্মাণ করা হয়। দলীয় নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করে সমাবেশে যোগ দেন। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ছিল অগণিত তোরণ।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার প্রতিদিন ব্যাংক থেকে ১২০ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। ইতিমধ্যেই তারা ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেলেছে। এ অবস্থা চললে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় এলে তাদের প্রথম কাজ হবে জিনিসপত্রের দাম কমানো ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান।
টিপাইমুখ ইস্যুতে সরকার শক্ত অবস্থান নিলে পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন খালেদা জিয়া। বলেন, না পারলে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। তিনি বলেন, এ বাঁধ বাংলাদেশের জন্য মহাবিপদ। এটা করতে দেওয়া হবে না। এ জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে দু'দেশের মধ্যে যৌথ জরিপের কথা বলেছেন। তিনি চিঠির উত্তর দিয়েছেন। তবে চিঠিতে কী লিখেছেন, তা এখনও তিনি দেখেননি। বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, টিপাইমুখ বাঁধের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি সিলেটের ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা কোনোমতেই দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আশুগঞ্জ করিডোর দিয়ে গ্যাসের সরঞ্জামাদি ভারতে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ ষড়যন্ত্র সফল হলে সীমান্তের সব গ্যাস ভারত নিয়ে যাবে। সরকারের উচিত এ পরিকল্পনায় বাধা দেওয়া।
তিনি আবারও বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার দলীয় লোকদের অধীনে নয়, আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। বিএনপি স্বাধীনতার পক্ষের ও মুক্তিযোদ্ধাদের দল।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন শেয়ারবাজারে ধস নামে। '৯৬ সালেও শেয়ারবাজারে ধস নেমেছিল। এবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে।
রামপালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, কোনো অবস্থায় সেখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে দেওয়া হবে না। ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, গোপন চুক্তির মাধ্যমে সরকার ট্রানজিট দিয়েছে। ভারতের ভারী যানবাহনে আমাদের রাস্তাঘাট নষ্ট হচ্ছে।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, একসময় খুলনা শিল্প এলাকা ছিল। এখন সব শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবার বন্ধ কারখানা চালুসহ নতুন কারখানা চালু করা হবে।
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে ২৭ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনে চার দলের সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। বরিশাল ও রংপুর বিভাগে রোডমার্চের পরিবর্তে জনসভা করা হবে। আগামী জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চের মাধ্যমে শেষ হবে বিএনপির রোডমার্চ কর্মসূচি। চট্টগ্রামের রোডমার্চ থেকে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
খুলনার জনসভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। বক্তৃতা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, মাজিদুল ইসলাম ও এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই, ভাইস চেয়ারম্যান রাজিয়া ফয়েজ, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মোঃ ইসহাক, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল গণি, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোঃ ইবরাহীম, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নিজামী, বিজেপির মহাসচিব শামীম আল মামুন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোঃ শাহজাহান, বরকতউল্লা বুলু এমপি, মিজানুর রহমান মিনু ও আমানউল্লাহ আমান, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ মোঃ তাহের ও মাওলানা শামসুল ইসলাম এমপি, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আলী, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দীপু, খুলনা মহানগর জামায়াতের আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, আরিফুজ্জামান অপু, সিরাজুল হক নান্নু, মোমরেজ আলী, শফিকুল আলম তুহিন, আজিজুল হাসান দুলু, এমরানুল কবীর নাসিম, আরিফুজ্জামান আরিফ। সভা পরিচালনা করেন মনিরুজ্জামান মনি, শফিকুল আলম মনা, আমীর এজাজ খান ও ফকরুল আলম।
সভাপতির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা লুটপাট, টেন্ডারবাজি, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসসহ সারাদেশে নৈরাজ্য করছে।
দুপুর ১২টা থেকে নেতাকর্মীরা হাতে ব্যানার, পল্গ্যাকার্ড, ধানের শীষ, দলীয় ও জাতীয় পতাকা, মাথায় ক্যাপ-হেডব্যান্ড, গেঞ্জি গায়ে রোডমার্চে ব্যান্ডপার্টি এবং মিছিল সহকারে জনসভাস্থলে আসতে শুরু করে। জনসভা উপলক্ষে গতকাল রোববার খুলনা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। জনসভাস্থল খুলনা সার্কিট হাউস মাঠের পার্শ্ববর্তী এলাকার সড়কে মানুষের ঢল নামে। মিছিলের কারণে সার্কিট হাউসের পার্শ্ববর্তী সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে যানজটের সৃষ্টি হয়।
দল, জোট ও সমমনা নেতাদের বক্তব্য : জনসভা ও পথসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা দেওয়ার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে নাকি বিচারের মুখোমুখি করা হবে। স্বাধীনতার ঘোষকের উত্তরসূরি সম্পর্কে তার এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার কোনো অধিকার নেই। যারা পাকিস্তানি বাহিনীকে ক্ষমা করে দিয়েছিল আগে তাদের বিচার করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সরকার দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে ফেলেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এ সরকার ১৫টি মামলা দিয়েছে। তারেক রহমানই একদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, রোডমার্চে সরকারের বিরুদ্ধে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করার জন্য সরকার প্রহসনের বিচার শুরু করেছে। যে কোনো মূল্যে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার মিথ্যা মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ মোঃ তাহের বলেন, এ সরকারের কাছে দলীয় নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে লাভ নেই। সরকারের পতন ঘটিয়ে তাদের মুক্ত করতে হবে।
এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, সরকার বিদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।
খেলাফত মজলিসের মাওলানা মোঃ ইসহাক বলেন, ভোট ডাকাতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসতে চায়।
বিজেপির মহাসচিব শামীম আল মামুন বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি না দিলে এ সরকার আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নিজামী বলেন, সরকার চারদলীয় জোটকে ধ্বংস করার জন্য নেতাকর্মীদের জেলে পাঠাচ্ছে।
যশোর অফিস থেকে তৌহিদুর রহমান জানান, যশোরের পথসভায় জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামছুল হুদার সভাপতিত্বে ঈদগাহ ময়দানের পথসভায় বক্তৃতা করেন প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব, অ্যাডভোকেট কাজী মুনিরুল হুদা, যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, নগর বিএনপির সভাপতি ও যশোর পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম, কোতোয়ালি থানা বিএনপির সভাপতি নূরুন্নবী, সাধারণ সম্পাদক কাজী আযম, অ্যাডভোকেট আবু মুরাদ, মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, শার্শা থানা বিএনপির সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু, চৌগাছা থানা বিএনপির সভাপতি জহুরুল ইসলাম, ঝিকরগাছা থানা বিএনপির সভাপতি নাজমুল ইসলাম, কেশবপুর থানা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ প্রমুখ।
জনসভা শেষে খুলনা সার্কিট হাউসে বিশ্রাম নিয়ে রাত সোয়া ৭টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন খালেদা জিয়া। খান জাহান আলীর মাজার জিয়ারত করে খুলনা যাওয়ার পথে খালেদা জিয়া কুদিরপুরে একটি অনির্ধারিত পথসভায় বক্তৃতা করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শাহ শরীফ তাজের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ পথসভায় বিপুল লোক সমাগম হয়। খালেদা জিয়া যশোরের পথসভায় ৪০ এবং খুলনার জনসভায় ৩৫ মিনিট বক্তৃতা করেন।
রিজভীর সংবাদ সম্মেলন : রোডমার্চে পথে পথে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেছেন, পুলিশ ও র্যাবের ছত্রচ্ছায়ায় আওয়ামী 'সন্ত্রাসী'রা হামলা চালিয়েছে। এ ধরনের আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি। গতকাল রোববার নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এ সরকার দিশাহারা হয়ে সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন করেছে। রোডমার্চে জনগণের অভূতপূর্ব সাড়া দেখে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তারা 'পোষ্য গুণ্ডাপাণ্ডা'দের লেলিয়ে দিয়েছে। এভাবে সরকার তার পতন তরান্বিত করছে বলে হুশিয়ারি করেন তিনি।
জিয়ারত করেন। রোডমার্চে চারদলীয় জোট, সমমনা ও বিভিন্ন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
খালেদা জিয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, তিনি ডা. মিলনের হত্যাকারী। তাকে পাশে নিয়ে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও বিরোধী দলের আসনে বসানোর ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রকৃত খুনি ও অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, তাদের ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়স্বজন সবাই বিদেশে থাকেন। প্রয়োজন হলে তিনিও বিদেশে চলে যাবেন। রোডমার্চ ও মহাসমাবেশ দেখে প্রধানমন্ত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। দেশের সব কাজ বাদ দিয়ে তিনি কাগজ-কলম ও কাঁচি নিয়ে বসেছেন। রোডমার্চের গাড়ির হিসাব গুনছেন। বিদ্যুতের ব্যাপারে কেউ লিখলে বা প্রতিবাদ করলে লাইন কেটে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে শনিবার সকালে ঢাকা থেকে খুলনা অভিমুখে তিন সহস্রাধিক গাড়ির বহর নিয়ে রোডমার্চ শুরু করেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রোডমার্চের ৩০০ কিলোমিটার পথে পাবনা ও ঝিনাইদহে দুটি পথসভা এবং কুষ্টিয়ায় একটি জনসভা শেষে রাত ১১টায় যশোর পেঁৗছেন খালেদা জিয়া। যশোর সার্কিট হাউসে রাতযাপন করেন তিনি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাংবাদিকরা যশোরে রাতযাপন করেন। তবে বহরে অংশ নেওয়া অন্য নেতাকর্মীরা রাতযাপন করেন খুলনায়। যশোর সার্কিট হাউস থেকে সকাল সাড়ে ১১টায় শহরের ঈদগাহ ময়দানে পথসভাস্থলে আসেন খালেদা জিয়া। এখানে হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক তুমুল করতালি দিয়ে তাদের নেত্রীকে অভিনন্দন জানান। যশোরের পথসভা শেষ করে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া দুপুর পৌনে ১টায় খুলনা অভিমুখে দ্বিতীয় দিনের রোডমার্চ শুরু করেন। যশোরের পথসভাটি হাজার হাজার কর্মী-সমর্থকের উপস্থিতিতে জনসভার রূপ নেয়। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ঈদগাহ মাঠে পেঁৗছলে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম।
পথসভা শেষে খুলনা অভিমুখে রাজারহাট, রূপদিয়া বাজার, বসুন্দিয়া, প্রেমবাগ, চেগুটিয়া, নওয়াপাড়া, ফুলতলা, দৌলতপুর প্রভৃতি স্থানে সড়কের দু'পাশে হাজারো নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে ফুল ছিটিয়ে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান। পাজেরো জিপ থেকে হাত নেড়ে তিনি কর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। যশোর থেকে খুলনার ৫০ কিলোমিটার সড়কপথের বিভিন্ন স্থানে কয়েকশ' শুভেচ্ছা তোরণ নির্মাণ করা হয়। দলীয় নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করে সমাবেশে যোগ দেন। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ছিল অগণিত তোরণ।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার প্রতিদিন ব্যাংক থেকে ১২০ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। ইতিমধ্যেই তারা ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেলেছে। এ অবস্থা চললে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় এলে তাদের প্রথম কাজ হবে জিনিসপত্রের দাম কমানো ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান।
টিপাইমুখ ইস্যুতে সরকার শক্ত অবস্থান নিলে পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন খালেদা জিয়া। বলেন, না পারলে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। তিনি বলেন, এ বাঁধ বাংলাদেশের জন্য মহাবিপদ। এটা করতে দেওয়া হবে না। এ জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে দু'দেশের মধ্যে যৌথ জরিপের কথা বলেছেন। তিনি চিঠির উত্তর দিয়েছেন। তবে চিঠিতে কী লিখেছেন, তা এখনও তিনি দেখেননি। বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, টিপাইমুখ বাঁধের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি সিলেটের ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা কোনোমতেই দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আশুগঞ্জ করিডোর দিয়ে গ্যাসের সরঞ্জামাদি ভারতে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ ষড়যন্ত্র সফল হলে সীমান্তের সব গ্যাস ভারত নিয়ে যাবে। সরকারের উচিত এ পরিকল্পনায় বাধা দেওয়া।
তিনি আবারও বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার দলীয় লোকদের অধীনে নয়, আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। বিএনপি স্বাধীনতার পক্ষের ও মুক্তিযোদ্ধাদের দল।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন শেয়ারবাজারে ধস নামে। '৯৬ সালেও শেয়ারবাজারে ধস নেমেছিল। এবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে।
রামপালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, কোনো অবস্থায় সেখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে দেওয়া হবে না। ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, গোপন চুক্তির মাধ্যমে সরকার ট্রানজিট দিয়েছে। ভারতের ভারী যানবাহনে আমাদের রাস্তাঘাট নষ্ট হচ্ছে।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, একসময় খুলনা শিল্প এলাকা ছিল। এখন সব শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবার বন্ধ কারখানা চালুসহ নতুন কারখানা চালু করা হবে।
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে ২৭ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনে চার দলের সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। বরিশাল ও রংপুর বিভাগে রোডমার্চের পরিবর্তে জনসভা করা হবে। আগামী জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চের মাধ্যমে শেষ হবে বিএনপির রোডমার্চ কর্মসূচি। চট্টগ্রামের রোডমার্চ থেকে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
খুলনার জনসভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। বক্তৃতা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, মাজিদুল ইসলাম ও এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই, ভাইস চেয়ারম্যান রাজিয়া ফয়েজ, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মোঃ ইসহাক, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল গণি, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোঃ ইবরাহীম, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নিজামী, বিজেপির মহাসচিব শামীম আল মামুন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোঃ শাহজাহান, বরকতউল্লা বুলু এমপি, মিজানুর রহমান মিনু ও আমানউল্লাহ আমান, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ মোঃ তাহের ও মাওলানা শামসুল ইসলাম এমপি, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আলী, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দীপু, খুলনা মহানগর জামায়াতের আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, আরিফুজ্জামান অপু, সিরাজুল হক নান্নু, মোমরেজ আলী, শফিকুল আলম তুহিন, আজিজুল হাসান দুলু, এমরানুল কবীর নাসিম, আরিফুজ্জামান আরিফ। সভা পরিচালনা করেন মনিরুজ্জামান মনি, শফিকুল আলম মনা, আমীর এজাজ খান ও ফকরুল আলম।
সভাপতির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা লুটপাট, টেন্ডারবাজি, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসসহ সারাদেশে নৈরাজ্য করছে।
দুপুর ১২টা থেকে নেতাকর্মীরা হাতে ব্যানার, পল্গ্যাকার্ড, ধানের শীষ, দলীয় ও জাতীয় পতাকা, মাথায় ক্যাপ-হেডব্যান্ড, গেঞ্জি গায়ে রোডমার্চে ব্যান্ডপার্টি এবং মিছিল সহকারে জনসভাস্থলে আসতে শুরু করে। জনসভা উপলক্ষে গতকাল রোববার খুলনা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। জনসভাস্থল খুলনা সার্কিট হাউস মাঠের পার্শ্ববর্তী এলাকার সড়কে মানুষের ঢল নামে। মিছিলের কারণে সার্কিট হাউসের পার্শ্ববর্তী সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে যানজটের সৃষ্টি হয়।
দল, জোট ও সমমনা নেতাদের বক্তব্য : জনসভা ও পথসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা দেওয়ার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে নাকি বিচারের মুখোমুখি করা হবে। স্বাধীনতার ঘোষকের উত্তরসূরি সম্পর্কে তার এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার কোনো অধিকার নেই। যারা পাকিস্তানি বাহিনীকে ক্ষমা করে দিয়েছিল আগে তাদের বিচার করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সরকার দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে ফেলেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এ সরকার ১৫টি মামলা দিয়েছে। তারেক রহমানই একদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, রোডমার্চে সরকারের বিরুদ্ধে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করার জন্য সরকার প্রহসনের বিচার শুরু করেছে। যে কোনো মূল্যে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার মিথ্যা মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ মোঃ তাহের বলেন, এ সরকারের কাছে দলীয় নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে লাভ নেই। সরকারের পতন ঘটিয়ে তাদের মুক্ত করতে হবে।
এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, সরকার বিদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।
খেলাফত মজলিসের মাওলানা মোঃ ইসহাক বলেন, ভোট ডাকাতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসতে চায়।
বিজেপির মহাসচিব শামীম আল মামুন বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি না দিলে এ সরকার আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নিজামী বলেন, সরকার চারদলীয় জোটকে ধ্বংস করার জন্য নেতাকর্মীদের জেলে পাঠাচ্ছে।
যশোর অফিস থেকে তৌহিদুর রহমান জানান, যশোরের পথসভায় জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামছুল হুদার সভাপতিত্বে ঈদগাহ ময়দানের পথসভায় বক্তৃতা করেন প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব, অ্যাডভোকেট কাজী মুনিরুল হুদা, যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, নগর বিএনপির সভাপতি ও যশোর পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম, কোতোয়ালি থানা বিএনপির সভাপতি নূরুন্নবী, সাধারণ সম্পাদক কাজী আযম, অ্যাডভোকেট আবু মুরাদ, মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, শার্শা থানা বিএনপির সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু, চৌগাছা থানা বিএনপির সভাপতি জহুরুল ইসলাম, ঝিকরগাছা থানা বিএনপির সভাপতি নাজমুল ইসলাম, কেশবপুর থানা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ প্রমুখ।
জনসভা শেষে খুলনা সার্কিট হাউসে বিশ্রাম নিয়ে রাত সোয়া ৭টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন খালেদা জিয়া। খান জাহান আলীর মাজার জিয়ারত করে খুলনা যাওয়ার পথে খালেদা জিয়া কুদিরপুরে একটি অনির্ধারিত পথসভায় বক্তৃতা করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শাহ শরীফ তাজের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ পথসভায় বিপুল লোক সমাগম হয়। খালেদা জিয়া যশোরের পথসভায় ৪০ এবং খুলনার জনসভায় ৩৫ মিনিট বক্তৃতা করেন।
রিজভীর সংবাদ সম্মেলন : রোডমার্চে পথে পথে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেছেন, পুলিশ ও র্যাবের ছত্রচ্ছায়ায় আওয়ামী 'সন্ত্রাসী'রা হামলা চালিয়েছে। এ ধরনের আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি। গতকাল রোববার নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এ সরকার দিশাহারা হয়ে সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন করেছে। রোডমার্চে জনগণের অভূতপূর্ব সাড়া দেখে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তারা 'পোষ্য গুণ্ডাপাণ্ডা'দের লেলিয়ে দিয়েছে। এভাবে সরকার তার পতন তরান্বিত করছে বলে হুশিয়ারি করেন তিনি।
No comments