কাউকে পাকিস্তানে আক্রমণ করতে দেওয়া হবে না :গিলানি-পাক-মার্কিন সম্পর্কে কঠিন টানাপড়েন

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি বলেছেন, 'কাউকে আমাদের দেশে হামলা চালাতে দেওয়া হবে না। কেউ হামলা চালালে তা বরদাশত করা হবে না।' শনিবার রাতে আফগান সীমান্তবর্তী পাখতুন খোয়া অঞ্চলে একটি তল্লাশি শিবিরে ন্যাটোর হামলায় ২৮ পাক সেনাসদস্য নিহত হয়। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গিলানি এ কথা বলেন। এ নিয়ে পাক-মার্কিন সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়েছে।


পাকিস্তানের একটি তল্লাশি চৌকিতে ন্যাটোর হেলিকপ্টার হামলার ঘটনাকে 'মর্মান্তিক' এবং 'অনভিপ্রেত' বলে বর্ণনা করেছেন ন্যাটোর প্রধান অ্যান্ডারস ফগ রাসমুসেন। ঘটনা তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে পাক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির কাছে তিনি চিঠিও লিখেছেন বলে জানা গেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার ন্যাটোর হেলিকপ্টার হামলায় পাকিস্তানি সেনা নিহত হওয়ার ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য বলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে টেলিফোনে রোববার বলেছেন, এর ফলে দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, 'এই হামলার ঘটনায় প্রমাণ হয়, ন্যাটোর কাছে পাকিস্তানিদের জীবনের মূল্য নেই। এ ঘটনায় পাকিস্তানজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এ ঘটনায় সমবেদনা জানিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনার তদন্তের জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করবে। এ হামলা সত্ত্বেও
পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক 'গুরুত্বপূর্ণ' বলে ওয়াশিংটন মন্তব্য করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিও প্যানেট্টা গতকাল ওয়াশিংটনে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, 'হামলার ঘটনায় আমরা গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে এ হামলার পেছনে ন্যাটোর উদ্দেশ্য আমরা খতিয়ে দেখব।' পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা কমান্ডার জেনারেল জন অ্যালেন এবং মার্কিন জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ চেয়ারম্যান জেনারেল মাটিন ডেম্পসে তাদের পাকিস্তানি প্রতিপক্ষকে পরিস্থিতি ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে এ হামলার প্রতিবাদে করাচি এবং মুলতানে মার্কিন কনস্যুলেটের বাইরে কয়েক হাজার মানুষ মার্কিন পতাকায় আগুন দেয় ও ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
এই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে পাকিস্তান তাদের বিমান ঘাঁটি ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। এ ছাড়াও তাদের দেশ হয়ে ন্যাটোর সব রসদ সরবরাহের পথ বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান। ন্যাটোর হামলায় ক্ষুব্ধ পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শামসি বিমান ঘাঁটি ছেড়ে যেতে বলেছে।
প্রধানমন্ত্রী গিলানি আরও বলেন, 'পাকিস্তান এমনিতেই অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। আমাদের সৈন্যদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলা পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার ওপর হামলা। আমি বিরোধীদলীয় নেতা চৌধুরী নিসারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। এমনকি ইমরান খানসহ অন্য নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। দেশ রক্ষার প্রশ্নে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। কেউ আমাদের দেশ আক্রমণ করে চলে যাবে, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।'
গতকাল ন্যাটোর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কার্স্টেন জ্যাকবসন বলেন, 'দ্য ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাসিসট্যান্স ফোর্স (আইএসএএফ) পুরো ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত করছে। কেন আর কীভাবে এ ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হবে।'
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের হান্না সেনা তল্লাশি চৌকিতে শনিবার ন্যাটোর হামলা চালানোর পর প্রতিবাদ জানাতে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইসলামাবাদ। ন্যাটোর হামলার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানির সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পরই মার্কিন বাহিনীকে পাকিস্তানের শামসি বিমান ঘাঁটি ত্যাগ করতে বলে ইসলামাবাদ। এর আগেও চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রকে একই ধরনের নির্দেশ দিয়েছিল পাকিস্তান। তখন ইসলামাবাদের কাছে এবোটাবাদে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর অভিযানে আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের শামসি বিমান ঘাঁটি ত্যাগ করতে বলেছিল পাকিস্তান। তবে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতার পরিপ্রেক্ষিতে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি।
গতকালের হামলার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাতে সে দেশে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্যামেরন মুনতারকে ডেকে পাঠায়। ওবামা প্রশাসন এ হামলার পূর্ণ তদন্তের অঙ্গীকার করেছে।
শনিবার গিলানির ডাকে মন্ত্রিপরিষদের প্রতিরক্ষা কমিটির এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও আফগানিস্তানে মোতায়েন ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাসিসট্যান্স ফোর্সের (আইএসএএফ) সঙ্গে কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতাসহ সব ধরনের সহযোগিতা কার্যক্রম পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত হয়। এ হামলার ফলে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ঘটনায় তিক্ত হয়ে ওঠা পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক মারাত্মক হুমকি ও টানাপড়েনের মধ্যে পড়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। বিবিসি, ডন, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.