ডিপিডিসির প্রস্তাবে বিইআরসির গণশুনানি-গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৯ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ

রাজধানীতে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৯ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ডিপিডিসি এর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছিল, এর ওপর গণশুনানির পর বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি এই সুপারিশ করে। গতকাল মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে বিইআরসির কার্যালয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।


গত ৫ অক্টোবর ডিপিডিসি বিদ্যুতের দাম ১১.৯৩ শতাংশ বাড়াতে কমিশনের কাছে প্রস্তাব করে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে এই বর্ধিত দাম কার্যকর করার কথা বলা হয় ওই প্রস্তাবে। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের মাধ্যমে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য গড়ে পাঁচ ভাগ বাড়িয়েছিল বিইআরসি।
গতকাল দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গণশুনানি হয়। শুনানি গ্রহণ করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন। তিনি বলেন, গ্রাহকদের কথা বিবেচনায় রেখে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ডিপিডিসিকে গ্রাহকসেবার মান নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মো. ইমদাদুল হক ও সেলিম মাহমুদ এবং ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সোবহান।
সেলিম মাহমুদ জানান, সুপারিশ কার্যকরের ঘোষণা অচিরেই দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে বিদ্যুৎ কিনে ঢাকা মহানগরীর ধানমণ্ডি, লালমাটিয়া, শাহবাগ, শ্যামলী, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, পুরান ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করে ডিপিডিসি। বর্তমানে হুইলিং চার্জসহ ডিপিডিসির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ে তিন টাকা ১৬ পয়সা। সিস্টেম লস ১১.৬৮ শতাংশ।
ঢাকা নগরীতে ডিপিডিসি ছাড়াও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)। তাদের পক্ষ থেকেও বিদ্যুতের দাম বাড়নোর প্রস্তাব এসেছে বলে কমিশন সূত্র জানিয়েছে। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
ডিপিডিসির প্রস্তাব
ডিপিডিসি বলছে, পিডিবি চলতি বছরে দুই দফায় বিদ্যুতের বাল্ক রেট (পাইকারি দাম) ২১.৭৮ শতাংশ বাড়িয়েছে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ১৪.১৮ শতাংশ ও আগস্টে ৭.৬ শতাংশ বাড়ানো হয়। কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয় গড়ে ৫ শতাংশ। দাম বাড়ানোর কারণে বর্তমানে প্রতিমাসে অতিরিক্ত ২৭ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল পিডিবিকে দিতে হচ্ছে।
প্রস্তাবে বলা হয়, দাম না বাড়ালে তারা (ডিপিডিসি) সরকার ও দাতা সংস্থার এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ ও সুদের কিস্তি পরিশোধ করতে পারবে না। একই সঙ্গে পিডিবি ও পিজিসিবির বিল পরিশোধ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
ডিপিডিসি আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ১০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট দুই টাকা ৬০ পয়সা থেকে দুই টাকা ৭৫ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে। ১০১ ইউনিট থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত দাম ইউনিটপ্রতি তিন টাকা ৪৬ পয়সা থেকে তিন টাকা ৮৭ পয়সা, ৪০১ ইউনিটের বেশি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পাঁচ টাকা ৯৩ পয়সা থেকে ছয় টাকা ৬৫ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে কম্পানিটি।
অনাবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল প্রতি ইউনিট তিন টাকা ৩৫ পয়সা থেকে তিন টাকা ৭৫ পয়সা, ক্ষুদ্র শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য ১১.৭৬ শতাংশ থেকে ১২.৪৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া রাস্তার বাতি ও পাম্পের জন্য বিদ্যুৎ বিল প্রতি ইউনিট চার টাকা ১৭ পয়সা থেকে চার টাকা ৬৮ পয়সা করার কথা বলেছে ডিপিডিসি।
বিলম্বে বিল পরিশোধে মোট বিলের ওপর ২ শতাংশ সরল সুদে সারচার্জের পরিবর্তে মাসিক ২ শতাংশ এবং মূল বিলের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ সারচার্জ বা বিলম্ব মাশুল কার্যকর করার প্রস্তাবও দিয়েছে কম্পানি।
মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ
বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি ডিপিডিসির প্রস্তাব পর্যালোচনা করে বলেছে, প্রতিষ্ঠানটি একটি পাবলিক লিমিটেড কম্পানি। ৯.৫ শতাংশ রেট অব রিটার্ন ধরে কম্পানিকে লাভজনকভাবে পরিচালনার জন্য বার্ষিক পরিচালনার ব্যয় প্রয়োজন দুই হাজার ৬৮৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। বিদ্যুতের মূল্য গড়ে ৯ শতাংশ বাড়ালে এ ব্যয় উঠে আসবে। বিলম্বে বিল পরিশোধে প্রতিমাসে মোট বিলের ওপর ২ শতাংশ সরল সুদে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত সারচার্জ বা বিলম্ব মাশুল ধার্যের সুপারিশ করেছে মূল্যায়ন কমিটি।

No comments

Powered by Blogger.