‘স্বর্ণারে তো কবরটাও দিতে পারি নাই’ by মোছাব্বের হোসেন
‘বড় সাধ ছিল বড় মেয়েটারে ডাক্তার বানাব। মেডিকেল কলেজে ভর্তিও করেছিলাম। ওর সঙ্গে ঢাকায় যখনই দেখা করতে যেতাম, দেখতাম ও ক্লাস থেকে এপ্রোন পরে আমার সামনে আসত। কী যে ভালো লাগত! কিন্তু আজ হীরা...’ বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন বাবা নুরুল হক হাওলাদার।
এক বছর আগে আজকের এই দিনেই (৪ আগস্ট) মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা নদীতে ‘পিনাক-৬’ লঞ্চডুবিতে দুই মেয়ে নুসরাত জাহান হীরা ও ফাতেমা তুজ জোহরা স্বর্ণাকে হারিয়েছেন নুরুল হক। ঢাকার শিকদার মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষে পড়তেন হীরা। আর স্বর্ণা পড়ত নূর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ওই দুর্ঘটনার পর হীরার লাশ পাওয়া গেলেও স্বর্ণার হদিস মেলেনি আজও। কাঁদো কাঁদো গলায় নুরুল হক বলেন, ‘তিন সন্তানের মধ্যে আমার মেয়ে দুইটা চলে গেল একসঙ্গে। ছোট ছেলেটা সবেমাত্র ফাইভে পড়ে। ঘরে ঢুকলেই মেয়েদের কথা মনে পড়ে। খেতে বসলে মনে পড়ে, রাস্তাঘাটে মনে পড়ে। মনের দুঃখে শুধুই কান্নাকাটি করি। হীরারে না হয় কবর দিছি, স্বর্ণারে তো তা-ও পারি নাই।’
‘দলিল লেখার কাজের মধ্যে যখনই অবসর পাই, তখনই দুই মেয়ের কথা মনে পড়ে’ জানিয়ে নুরুল হক বললেন, ‘কী আর কবর! নামাজ পড়ে ওদের জন্য দোয়া করি। আত্মীয়স্বজন যারা আছে, তারা নামাজ পড়ে দোয়া করে। আপনারাও ওদের জন্য দোয়া কইরেন।’
গত বছরের ঈদের পর মাদারীপুরের শিবচরের কাওরাকান্দি ঘাট থেকে যাত্রী বোঝাই করে মুন্সিগঞ্জ যাওয়ার পথে মাওয়া ঘাটের কাছে ডুবে যায় পিনাক-৬ লঞ্চটি। এ দুর্ঘটনায় ৪৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ২৮টি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হলেও বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয় ২১টি। তবে, এ দুর্ঘটনায় ঠিক কত জন নিখোঁজ রয়েছে, তা আজও নিশ্চিত করা যায়নি।
সকালে মাওয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার স্থানটিতে পুরোদমে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। এ কারণে মাওয়ার পুরো ঘাটটি স্থানান্তর করা হয়েছে শিমুলিয়ায়।
পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার প্রত্যক্ষদর্শী ও মাওয়া ঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী তপন কুমার দাশ এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ওই দিন খুবই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল। চোখের সামনেই লঞ্চটিকে ডুবে যেতে দেখেছিলাম।’
ঘটনার পর এখানে নিখোঁজ লোকজনের কেউ আসে কি না, জানতে চাইলে তপন কুমার বলেন, ‘লঞ্চ নাই, ঘাট নাই, মানুষ আসবে কোত্থেকে? ’
মাওয়া থেকে ঘাটটি সরিয়ে নেওয়ায় অনেকেই শিমুলিয়ায় ব্যবসা শুরু করেছেন। সেখানে শিমুলিয়া ঘাট স্পিডবোট সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিনু খানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘মাওয়া ঘাটের কাছে আমার দোকান ছিল। ওই দিন দোকানে বসে কাজ করছিলাম। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস ছিল। ভাবছিলাম, বৃষ্টি কমলেই বাইরে বেরুবো। এর মধ্যে লঞ্চ ডুবে যাচ্ছে বলে চিল্লাচিল্লি শুনে বাইরে গিয়ে দেখি, লঞ্চটির পেছন অংশ ডুবে গেছে। এরপর কাত হয়ে পুরোপুরি ডুবে যায়।’
বিনু খানের ভাষ্য, ডুবে যাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে স্পিডবোট চালকদের নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করি। ১১২ জন যাত্রীকে তাঁরা জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন বলে জানান তিনি।
ঘটনার পরদিন লাশ ভেসে ওঠার দৃশ্য বর্ণনা করেন বিনু খান এভাবে—‘কচুরিপানার মতো লাশ ভাইস্যা উঠছিল। এর চাইতেও বেশি ঢেউয়ের মধ্যেই পদ্মায় লঞ্চ চলে। কিন্তু ধারণক্ষমতার চাইতে অধিক যাত্রী নেওয়ায় লঞ্চটা ডুবছে।’
ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘ওই দিন গ্যারেজে গাড়ি ঠিক করছিলাম। এমন সময় দেখি লোকজন ডাকাডাকি করছে। পরে সামনে গিয়া দেখি, আস্তে আস্তে লঞ্চটি ডুবে যাচ্ছে। বেশি যাত্রী না লইলে লঞ্চটি হয়তো ডুবত না।’
এক বছর আগে আজকের এই দিনেই (৪ আগস্ট) মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা নদীতে ‘পিনাক-৬’ লঞ্চডুবিতে দুই মেয়ে নুসরাত জাহান হীরা ও ফাতেমা তুজ জোহরা স্বর্ণাকে হারিয়েছেন নুরুল হক। ঢাকার শিকদার মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষে পড়তেন হীরা। আর স্বর্ণা পড়ত নূর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ওই দুর্ঘটনার পর হীরার লাশ পাওয়া গেলেও স্বর্ণার হদিস মেলেনি আজও। কাঁদো কাঁদো গলায় নুরুল হক বলেন, ‘তিন সন্তানের মধ্যে আমার মেয়ে দুইটা চলে গেল একসঙ্গে। ছোট ছেলেটা সবেমাত্র ফাইভে পড়ে। ঘরে ঢুকলেই মেয়েদের কথা মনে পড়ে। খেতে বসলে মনে পড়ে, রাস্তাঘাটে মনে পড়ে। মনের দুঃখে শুধুই কান্নাকাটি করি। হীরারে না হয় কবর দিছি, স্বর্ণারে তো তা-ও পারি নাই।’
‘দলিল লেখার কাজের মধ্যে যখনই অবসর পাই, তখনই দুই মেয়ের কথা মনে পড়ে’ জানিয়ে নুরুল হক বললেন, ‘কী আর কবর! নামাজ পড়ে ওদের জন্য দোয়া করি। আত্মীয়স্বজন যারা আছে, তারা নামাজ পড়ে দোয়া করে। আপনারাও ওদের জন্য দোয়া কইরেন।’
গত বছরের ঈদের পর মাদারীপুরের শিবচরের কাওরাকান্দি ঘাট থেকে যাত্রী বোঝাই করে মুন্সিগঞ্জ যাওয়ার পথে মাওয়া ঘাটের কাছে ডুবে যায় পিনাক-৬ লঞ্চটি। এ দুর্ঘটনায় ৪৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ২৮টি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হলেও বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয় ২১টি। তবে, এ দুর্ঘটনায় ঠিক কত জন নিখোঁজ রয়েছে, তা আজও নিশ্চিত করা যায়নি।
সকালে মাওয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার স্থানটিতে পুরোদমে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। এ কারণে মাওয়ার পুরো ঘাটটি স্থানান্তর করা হয়েছে শিমুলিয়ায়।
পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার প্রত্যক্ষদর্শী ও মাওয়া ঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী তপন কুমার দাশ এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ওই দিন খুবই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল। চোখের সামনেই লঞ্চটিকে ডুবে যেতে দেখেছিলাম।’
ঘটনার পর এখানে নিখোঁজ লোকজনের কেউ আসে কি না, জানতে চাইলে তপন কুমার বলেন, ‘লঞ্চ নাই, ঘাট নাই, মানুষ আসবে কোত্থেকে? ’
মাওয়া থেকে ঘাটটি সরিয়ে নেওয়ায় অনেকেই শিমুলিয়ায় ব্যবসা শুরু করেছেন। সেখানে শিমুলিয়া ঘাট স্পিডবোট সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিনু খানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘মাওয়া ঘাটের কাছে আমার দোকান ছিল। ওই দিন দোকানে বসে কাজ করছিলাম। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস ছিল। ভাবছিলাম, বৃষ্টি কমলেই বাইরে বেরুবো। এর মধ্যে লঞ্চ ডুবে যাচ্ছে বলে চিল্লাচিল্লি শুনে বাইরে গিয়ে দেখি, লঞ্চটির পেছন অংশ ডুবে গেছে। এরপর কাত হয়ে পুরোপুরি ডুবে যায়।’
বিনু খানের ভাষ্য, ডুবে যাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে স্পিডবোট চালকদের নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করি। ১১২ জন যাত্রীকে তাঁরা জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন বলে জানান তিনি।
ঘটনার পরদিন লাশ ভেসে ওঠার দৃশ্য বর্ণনা করেন বিনু খান এভাবে—‘কচুরিপানার মতো লাশ ভাইস্যা উঠছিল। এর চাইতেও বেশি ঢেউয়ের মধ্যেই পদ্মায় লঞ্চ চলে। কিন্তু ধারণক্ষমতার চাইতে অধিক যাত্রী নেওয়ায় লঞ্চটা ডুবছে।’
ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘ওই দিন গ্যারেজে গাড়ি ঠিক করছিলাম। এমন সময় দেখি লোকজন ডাকাডাকি করছে। পরে সামনে গিয়া দেখি, আস্তে আস্তে লঞ্চটি ডুবে যাচ্ছে। বেশি যাত্রী না লইলে লঞ্চটি হয়তো ডুবত না।’
গত বছরের ৪ আগস্ট মুন্সিগঞ্জের মাওয়ার পদ্মা নদীর এই অংশ পিনাক-৬ লঞ্চটি ডুবে যায়। এখন সেখানে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। ছবি: মোছাব্বের হোসেন |
No comments