বিলুপ্ত ছিটের নতুন উপাখ্যান-১, রাত জেগে পাহারা
সিদ্দিক আলম দয়াল/মিজানুর রহমান মিন্টু/রবিউল ইসলাম বেলাল, কুড়িগ্রাম, মিলন পাটোয়ারী, লালমনিরহাট থেকে
দীর্ঘ ৬৮ বছর পর মুক্ত হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিয়েছে ছিটমহলবাসী। কিন্তু মুক্ত হাওয়ায়ও একপ্রকার আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। এ আতঙ্ক জমি নিয়ে। দলিলহীন জমি কিংবা ভুয়া দলিল আর হলফনামার মারপ্যাঁচে আটকা তারা। অনেকে নিজ জমি রক্ষায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। এ নিয়ে রোববার দাসিয়ারছড়ায় সংঘর্ষও হয়েছে। এ খবর বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ছিটমহলজুড়ে। এ অবস্থায় আতঙ্কমুক্ত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতারা গতকাল দাসিয়ারছড়ার কালিরহাট বাজারে মতবিনিময় করেছেন।
দাসিয়ার ছড়া কালিহাটের বাসিন্দা আবদুল হাকিম ও হাফিজুর রহমান জানান, ২০০৫ সাল থেকে ছিটমহলের জমি দলিল করা বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। এর আগে ভারতের দিনহাটা রেজিস্ট্রি অফিসে জমি কেনা-বেচার দলিল সম্পাদন করা হতো। কিন্তু সেখানে দলিল রেজিস্ট্র্রি বন্ধ করার পর ছিটমহলে নিজের আইন চালু হয়। দালালদের মাধ্যমে ভারত থেকে পাচার হয়ে আসে ভারতীয় স্ট্যাম্প। আর এই দিয়েই সম্পাদন হতো দলিল। কখনও আবার সাদা কাগজে লেখা হতো দলিল। স্বাধীনতার পতাকা উড়লেও এখানকার মানুষ ভয়ে আছে তাদের জমি নিয়ে। ইতিমধ্যে জমি নিয়ে শুরু হয়েছে দলাদলি। হানাহানি। দাসিয়ার ছড়া কালিরহাট গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ২০ বছর আগে বালাটারী গ্রামের মতিয়ার রহমানের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকায় ১৫ শতক জমি কিনে নেন । কিন্তু জমি কেনা-বেচা হলেও ছিল না কোন দাগ নম্বর। তাছাড়া অন্যান্য ভাগিদারকে বাদ দিয়ে দলিল করে দেয়া হয়। আর এই জমির দখল নিয়েই রোববার সংঘর্ষ হয়। সেখানে পুলিশ অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হয়। তারপরও থমথমে অবস্থা দাসিয়ারছড়ায়।
৭০ বিঘা জমি চেয়ারম্যান আজগর আলীর। তার সন্তানদের মধ্যে জমি নিয়ে শুরু হয়েছে কলহ।
কারণ কাগজপত্র ছাড়া জমির কোন দাম নাই। দাসিয়ারছড়ার মতিয়ার খন্দকারের কাছ থেকে মুখের কথায় আবদুল লতিফ ২০১২ সালে ১৩ হাজার টাকায় জমি কিনে নেন। কিন্তু কোন কাগজ নেই। মতিয়ার খন্দকার লতিফ মিয়াকে জানিয়ে দিয়েছে অনেক দিনতো জমির ফসল ভোগ করেছেন এখন ছেড়ে দেন। লতিফ মিয়া বলেন, আমার কি হবে। আমার তো দলিল নাই। তবে জান দেবো তবু জমি ছাড়বো না । গোটা বালাটারী গ্রাম জুড়ে মানুষের আতঙ্ক । কারণ এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষের জমির কোন দলিল নাই। দখল করে খাচ্ছেন যুগযুগ ধরে। ৮০ বিঘা জমি নিয়ে বিপাকে আছেন আলহাজ হাসমত আলী ও তার বড় ছেলে আজিজুল হক মণ্ডল । কারণ তাদের বেশির ভাগ জমির কোন দলিল নাই। ভাগ-বাটোয়ারা হয়নি। তবে বটলা গ্রামের একাব্বর হোসেন বলেন, অনেক দলিল ডাকাতি হয়েছে। এতোদিন জমি নিয়ে কোন দ্বন্দ্ব হয়নি। সরকারিভাবে শিগগিরই জমি নিয়ে ফয়সালা না করলে বড় ধরনের গোলমাল হবে। যা সহিংসতার পর্যায়ে চলে যেতে পারে। এলাকাবাসী জানান, সরকারিভাবে বলা হয়েছে আপাতত যে যেখানে দখল করে আছেন থাকবেন। তারপর সিন্ধান্ত হবে। কুড়িগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদ আলম মানবজমিনকে বলেন, আতঙ্ক কাটাতে এবং সংঘর্ষ এড়াতে সেখানে পুলিশি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি ছিটমহলের মধ্যে ১২টি ছিটমহল রয়েছে শুধু ভুমি বাকিটা জনবসতি। ৫৯টি ছিটমহলে ১৭ হাজার ৮শত ৩ একর জমি। লোক সংখ্যা ৯ হাজার ৭শ‘ ৫৩ জন। তার মধ্যে ভারতে যাচ্ছেন ১৯৫ জন। জেলায় ৫৯টি ছিটমহালের মধ্যে পাটগ্রাম উপজেলায় রয়েছে ৫৫টি। এ উপজেলার বাঁশকাটা ১১৯ নং ছিটের বাসিন্দা বলরাম চন্দ্র জানান, তার জমি ছিটমহলে ১৫৫ একর জমি দখল করেছে এক প্রভাবশালী। ছিটমহল মুক্ত হয়েছে। বলরাম এখন সরকারের কাছে চায় তার জমি ফেরত। বাঁশকাটার ছিটমহলের জমি দখল করে রেখেছে অনেকে। জমি উদ্ধারের অচিরে আন্দোলন যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ছিটমহলবাসী। জমি কিভাবে ছিটমহলে জরিপ হবে এ নিয়ে চলছে আলোচনার ঝড়। ছিটমহলবাসীরা জানান, জমি জরিপ দখল সূত্রে না কাগজ সূত্রে হবে তা তারা জানে না। ৬৮ বছর ধরে ছিটমহলের জমি দলিলে বিক্রি হতো না। বিক্রি বা বন্দক হতো সাদা কাগজে বা বাংলাদেশী ৫০ থেকে ১শ’ টাকার স্ট্যাম্পে। জমিগুলোর নেই দলিল। অনেকের দলিল রয়েছে ভারতের কুচবিহার ও মেকলীগঞ্জ ভূমি অফিসে। জমির দলিল না পাওয়া গেলে জমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে বড় ধরনের সমস্যা সব বলে ধারণা করছে ছিটমহলবাসীও। তবে ছিটমহলের জমি ইতিপূর্বে অনেকে ক্রয় করে তারা পড়েছে সমস্যায়। অনেকে জমি ক্রয় করেছে সাদা কাগজে সই নিয়ে। তাদের নেই দলিল। যার কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছে সে ব্যক্তি মারা যাওয়ায় তার অংশীদাররা মানছে না ওই কাগজ। সাদা কাগজে সই দেয়ার সময় যারা সাক্ষী ছিল তারাও গেছে মারা এখন বিপাকে পড়েছে জমি ক্রেতা। এ সমস্য ৫৯টি ছিটমহলের সবখানেই। হাতীবান্ধা,পাটগ্রাম ও লালমনিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকতারা জানিয়েছেন সেই দিক গুলো বিবেচনা করেই জমি বণ্টন করা হবে। এ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। বাঘডা, বাঁশকাটা ১১৯, বাঁশকাটা ১১২, ভোটবাড়ী, উত্তরগোতামারী, বাঁশপচাই, ভিতরকুঠি, তেঁতুলতলা, ইসলামপুর, খড়খড়ি, পানিশালা, বড়খাদীরসহ বিভিন্ন ছিটমহলে নিজ ভূখণ্ড জমি টুকু আঁকড়ে ধরে রয়েছে। রাত জেগে জমি পাহারা দিচ্ছে ছিটমহলবাসী। যাতে করে কেউ জমি দখল করে আকস্মিক বাড়ি তৈরি করতে না পারে। কখনও স্ত্রী ঘুমালে স্বামী পাহারা দেয় আবার কখনও স্বামী ঘুমালে স্ত্রী পাহারা দিচ্ছে তাদের শেষ সম্বলটুকু। বাঁশকাটা ছিটমহলের রঞ্জিত জানান, ছিটের জমি বলে দখল করে নিবে হাট-বাজারে সবাই আলোচনা করছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ভূমি জরিপ কাজ দ্রুত শুরু হবে। এজন্য কাজ-কর্ম করছে ভূমি অফিসগুলো। তবে আলোচনা চলছে বর্তমানে যে যে জমি দখলে রেখেছে সে সূত্র বা কারও জমির ভারতীয় দলিল ও জমি ক্রয়-বিক্রয় স্ট্যাম্প বা কাগজপত্র থাকলে তা যাচাই-বাছাই করে ভূমির মালিকানা দেয়া হবে।
প্রশাসনের দফায় দফায় বৈঠক
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদ্য বিলুপ্ত দাশিয়ারছড়া ছিটমহলে সোমবার ছিল পুলিশ ও বিজিবির কড়া প্রহরা। এছাড়া, পুলিশের বিশেষ মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক গোটা ছিটমহলে টহল দিচ্ছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দাশিয়ারছড়ার কালিরহাট বাজারে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে দফায় দফায় শান্তি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গত রোববার জমি নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় ছিটমহলে ছিল থমথমে অবস্থা। পরিস্থিতির উন্নয়নে এসব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদ, সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদ আলম, ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ বদরুদ্দোজা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী সরকার, বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা খান, দাশিয়ারছড়ার সভাপতি আলতাফ হোসেন, দাশিয়ারছড়া ছিটমহলের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। তারা এ বৈঠকে দাশিয়ারছড়ার সকল অধিবাসীকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। এছাড়া যে কোন সমস্যার উদ্ভব হলে তা প্রশাসনকে আগে জানানোর পরামর্শ দেয়া হয়।
বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি দাশিয়ারছড়ার সভাপতি আলতাফ হোসেন বলেন, জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনাটি আমরা ২/৪ দিনের মধ্যে সমাধান করতে পারবো বলে আশা করছি। সোমবারে সমঝোতা বৈঠক থাকলেও সিরাজ মিয়া অসুস্থ থাকায় উপস্থিত হতে পারেননি। তবে উভয়পক্ষ মীমাংসায় সম্মতি জ্ঞাপন করেছে।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ বদরুদ্দোজা জানান, আমরা বিবদমান দু’টি গ্রুপের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা যেন আবার নতুন করে সহিংসতায় না জড়ায়। তারা নিজেরা নিজেদের সমস্যার সমাধান না করলে প্রশাসন বাধ্য হয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে রোববারের ঘটনায় বলার পরও এখন পর্যন্ত কোন পক্ষই অভিযোগ দাখিল করেনি। তারপরও পুলিশ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোর জন্য দাশিয়ারছড়ায় সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী সরকার বলেন, বর্তমান সরকারের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। যখন ছিটমহলবাসী আনন্দে আত্মহারা ঠিক সেই মুহূর্তে একটি অপশক্তির ইন্ধনে গোলযোগ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। আমরা সজাগ আছি কোন ভাবে বিশৃঙ্খলা করতে দেয়া হবে না।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদ জানান, আমি নিজে সারাদিন ছিটমহলে উপস্থিত থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করেছি। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হয়নি। রোববারের ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এখন সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। তারপরও আমরা প্রশাসন এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করে সাধারণ মানুষকে বোঝানো হচ্ছে। যেন কেউ আইন হাতে তুলে না নেয়।
দাসিয়ার ছড়া কালিহাটের বাসিন্দা আবদুল হাকিম ও হাফিজুর রহমান জানান, ২০০৫ সাল থেকে ছিটমহলের জমি দলিল করা বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। এর আগে ভারতের দিনহাটা রেজিস্ট্রি অফিসে জমি কেনা-বেচার দলিল সম্পাদন করা হতো। কিন্তু সেখানে দলিল রেজিস্ট্র্রি বন্ধ করার পর ছিটমহলে নিজের আইন চালু হয়। দালালদের মাধ্যমে ভারত থেকে পাচার হয়ে আসে ভারতীয় স্ট্যাম্প। আর এই দিয়েই সম্পাদন হতো দলিল। কখনও আবার সাদা কাগজে লেখা হতো দলিল। স্বাধীনতার পতাকা উড়লেও এখানকার মানুষ ভয়ে আছে তাদের জমি নিয়ে। ইতিমধ্যে জমি নিয়ে শুরু হয়েছে দলাদলি। হানাহানি। দাসিয়ার ছড়া কালিরহাট গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ২০ বছর আগে বালাটারী গ্রামের মতিয়ার রহমানের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকায় ১৫ শতক জমি কিনে নেন । কিন্তু জমি কেনা-বেচা হলেও ছিল না কোন দাগ নম্বর। তাছাড়া অন্যান্য ভাগিদারকে বাদ দিয়ে দলিল করে দেয়া হয়। আর এই জমির দখল নিয়েই রোববার সংঘর্ষ হয়। সেখানে পুলিশ অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হয়। তারপরও থমথমে অবস্থা দাসিয়ারছড়ায়।
৭০ বিঘা জমি চেয়ারম্যান আজগর আলীর। তার সন্তানদের মধ্যে জমি নিয়ে শুরু হয়েছে কলহ।
কারণ কাগজপত্র ছাড়া জমির কোন দাম নাই। দাসিয়ারছড়ার মতিয়ার খন্দকারের কাছ থেকে মুখের কথায় আবদুল লতিফ ২০১২ সালে ১৩ হাজার টাকায় জমি কিনে নেন। কিন্তু কোন কাগজ নেই। মতিয়ার খন্দকার লতিফ মিয়াকে জানিয়ে দিয়েছে অনেক দিনতো জমির ফসল ভোগ করেছেন এখন ছেড়ে দেন। লতিফ মিয়া বলেন, আমার কি হবে। আমার তো দলিল নাই। তবে জান দেবো তবু জমি ছাড়বো না । গোটা বালাটারী গ্রাম জুড়ে মানুষের আতঙ্ক । কারণ এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষের জমির কোন দলিল নাই। দখল করে খাচ্ছেন যুগযুগ ধরে। ৮০ বিঘা জমি নিয়ে বিপাকে আছেন আলহাজ হাসমত আলী ও তার বড় ছেলে আজিজুল হক মণ্ডল । কারণ তাদের বেশির ভাগ জমির কোন দলিল নাই। ভাগ-বাটোয়ারা হয়নি। তবে বটলা গ্রামের একাব্বর হোসেন বলেন, অনেক দলিল ডাকাতি হয়েছে। এতোদিন জমি নিয়ে কোন দ্বন্দ্ব হয়নি। সরকারিভাবে শিগগিরই জমি নিয়ে ফয়সালা না করলে বড় ধরনের গোলমাল হবে। যা সহিংসতার পর্যায়ে চলে যেতে পারে। এলাকাবাসী জানান, সরকারিভাবে বলা হয়েছে আপাতত যে যেখানে দখল করে আছেন থাকবেন। তারপর সিন্ধান্ত হবে। কুড়িগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদ আলম মানবজমিনকে বলেন, আতঙ্ক কাটাতে এবং সংঘর্ষ এড়াতে সেখানে পুলিশি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি ছিটমহলের মধ্যে ১২টি ছিটমহল রয়েছে শুধু ভুমি বাকিটা জনবসতি। ৫৯টি ছিটমহলে ১৭ হাজার ৮শত ৩ একর জমি। লোক সংখ্যা ৯ হাজার ৭শ‘ ৫৩ জন। তার মধ্যে ভারতে যাচ্ছেন ১৯৫ জন। জেলায় ৫৯টি ছিটমহালের মধ্যে পাটগ্রাম উপজেলায় রয়েছে ৫৫টি। এ উপজেলার বাঁশকাটা ১১৯ নং ছিটের বাসিন্দা বলরাম চন্দ্র জানান, তার জমি ছিটমহলে ১৫৫ একর জমি দখল করেছে এক প্রভাবশালী। ছিটমহল মুক্ত হয়েছে। বলরাম এখন সরকারের কাছে চায় তার জমি ফেরত। বাঁশকাটার ছিটমহলের জমি দখল করে রেখেছে অনেকে। জমি উদ্ধারের অচিরে আন্দোলন যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ছিটমহলবাসী। জমি কিভাবে ছিটমহলে জরিপ হবে এ নিয়ে চলছে আলোচনার ঝড়। ছিটমহলবাসীরা জানান, জমি জরিপ দখল সূত্রে না কাগজ সূত্রে হবে তা তারা জানে না। ৬৮ বছর ধরে ছিটমহলের জমি দলিলে বিক্রি হতো না। বিক্রি বা বন্দক হতো সাদা কাগজে বা বাংলাদেশী ৫০ থেকে ১শ’ টাকার স্ট্যাম্পে। জমিগুলোর নেই দলিল। অনেকের দলিল রয়েছে ভারতের কুচবিহার ও মেকলীগঞ্জ ভূমি অফিসে। জমির দলিল না পাওয়া গেলে জমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে বড় ধরনের সমস্যা সব বলে ধারণা করছে ছিটমহলবাসীও। তবে ছিটমহলের জমি ইতিপূর্বে অনেকে ক্রয় করে তারা পড়েছে সমস্যায়। অনেকে জমি ক্রয় করেছে সাদা কাগজে সই নিয়ে। তাদের নেই দলিল। যার কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছে সে ব্যক্তি মারা যাওয়ায় তার অংশীদাররা মানছে না ওই কাগজ। সাদা কাগজে সই দেয়ার সময় যারা সাক্ষী ছিল তারাও গেছে মারা এখন বিপাকে পড়েছে জমি ক্রেতা। এ সমস্য ৫৯টি ছিটমহলের সবখানেই। হাতীবান্ধা,পাটগ্রাম ও লালমনিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকতারা জানিয়েছেন সেই দিক গুলো বিবেচনা করেই জমি বণ্টন করা হবে। এ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। বাঘডা, বাঁশকাটা ১১৯, বাঁশকাটা ১১২, ভোটবাড়ী, উত্তরগোতামারী, বাঁশপচাই, ভিতরকুঠি, তেঁতুলতলা, ইসলামপুর, খড়খড়ি, পানিশালা, বড়খাদীরসহ বিভিন্ন ছিটমহলে নিজ ভূখণ্ড জমি টুকু আঁকড়ে ধরে রয়েছে। রাত জেগে জমি পাহারা দিচ্ছে ছিটমহলবাসী। যাতে করে কেউ জমি দখল করে আকস্মিক বাড়ি তৈরি করতে না পারে। কখনও স্ত্রী ঘুমালে স্বামী পাহারা দেয় আবার কখনও স্বামী ঘুমালে স্ত্রী পাহারা দিচ্ছে তাদের শেষ সম্বলটুকু। বাঁশকাটা ছিটমহলের রঞ্জিত জানান, ছিটের জমি বলে দখল করে নিবে হাট-বাজারে সবাই আলোচনা করছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ভূমি জরিপ কাজ দ্রুত শুরু হবে। এজন্য কাজ-কর্ম করছে ভূমি অফিসগুলো। তবে আলোচনা চলছে বর্তমানে যে যে জমি দখলে রেখেছে সে সূত্র বা কারও জমির ভারতীয় দলিল ও জমি ক্রয়-বিক্রয় স্ট্যাম্প বা কাগজপত্র থাকলে তা যাচাই-বাছাই করে ভূমির মালিকানা দেয়া হবে।
প্রশাসনের দফায় দফায় বৈঠক
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদ্য বিলুপ্ত দাশিয়ারছড়া ছিটমহলে সোমবার ছিল পুলিশ ও বিজিবির কড়া প্রহরা। এছাড়া, পুলিশের বিশেষ মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক গোটা ছিটমহলে টহল দিচ্ছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দাশিয়ারছড়ার কালিরহাট বাজারে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে দফায় দফায় শান্তি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গত রোববার জমি নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় ছিটমহলে ছিল থমথমে অবস্থা। পরিস্থিতির উন্নয়নে এসব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদ, সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদ আলম, ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ বদরুদ্দোজা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী সরকার, বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা খান, দাশিয়ারছড়ার সভাপতি আলতাফ হোসেন, দাশিয়ারছড়া ছিটমহলের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। তারা এ বৈঠকে দাশিয়ারছড়ার সকল অধিবাসীকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। এছাড়া যে কোন সমস্যার উদ্ভব হলে তা প্রশাসনকে আগে জানানোর পরামর্শ দেয়া হয়।
বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি দাশিয়ারছড়ার সভাপতি আলতাফ হোসেন বলেন, জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনাটি আমরা ২/৪ দিনের মধ্যে সমাধান করতে পারবো বলে আশা করছি। সোমবারে সমঝোতা বৈঠক থাকলেও সিরাজ মিয়া অসুস্থ থাকায় উপস্থিত হতে পারেননি। তবে উভয়পক্ষ মীমাংসায় সম্মতি জ্ঞাপন করেছে।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ বদরুদ্দোজা জানান, আমরা বিবদমান দু’টি গ্রুপের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা যেন আবার নতুন করে সহিংসতায় না জড়ায়। তারা নিজেরা নিজেদের সমস্যার সমাধান না করলে প্রশাসন বাধ্য হয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে রোববারের ঘটনায় বলার পরও এখন পর্যন্ত কোন পক্ষই অভিযোগ দাখিল করেনি। তারপরও পুলিশ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোর জন্য দাশিয়ারছড়ায় সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী সরকার বলেন, বর্তমান সরকারের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। যখন ছিটমহলবাসী আনন্দে আত্মহারা ঠিক সেই মুহূর্তে একটি অপশক্তির ইন্ধনে গোলযোগ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। আমরা সজাগ আছি কোন ভাবে বিশৃঙ্খলা করতে দেয়া হবে না।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদ জানান, আমি নিজে সারাদিন ছিটমহলে উপস্থিত থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করেছি। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হয়নি। রোববারের ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এখন সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। তারপরও আমরা প্রশাসন এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করে সাধারণ মানুষকে বোঝানো হচ্ছে। যেন কেউ আইন হাতে তুলে না নেয়।
No comments