যানজট বাড়াচ্ছে নিয়ন্ত্রণহীন রিকশা by মোছাব্বের হোসেন
রাজধানীজুড়ে রিকশাজট। রিকশার অনিয়ন্ত্রিত চলাচল যানজট বাড়াচ্ছে। ছবি-সাজিদ হোসেন |
রিকশার শহর হিসেবে ঢাকায় রিকশার পরিচিতি বেশ পুরোনো। কিন্তু দিনে দিনে আমজনতার এই বাহন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। ব্যস্ত সড়কগুলোতে রিকশা ঢুকে পড়ায় যানজট বাড়ছে। এতে ভুগছে নগরবাসী। নগর বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণহীন ও অপরিকল্পিতভাবে চলাচল করার কারণে রাজধানীর যানজটের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে রিকশা।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের সূত্র বলছে, ডিসিসির উত্তর-দক্ষিণে তালিকাভুক্ত রিকশার সংখ্যা সাড়ে ৭৯ হাজার। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুসারে ঢাকায় রিকশার সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। এ সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এ রিকশার সংখ্যাও অর্ধ লক্ষাধিক বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন। আবার ঈদের মৌসুমে এই সংখ্যা বেড়ে যায়। বেশি আয়ের আশায় অনেক মৌসুমি রিকশাচালক বিভিন্ন স্থান থেকে রিকশা এনে চালান।
রাজধানীর পাড়া-মহল্লার মানুষ এখানে-সেখানে যেতে মূলত রিকশাই ব্যবহার করে থাকেন। তবে অনেকেই মনে করেন, ঢাকায় সড়কে চলার পথে এই রিকশা ভোগান্তির কারণ হয়ে ওঠে। পথে রিকশার বিশৃঙ্খলভাবে চলাচল বাস বা ব্যক্তিগত গাড়িসহ অন্যান্য যান্ত্রিক যানবাহনের চলার গতি কমিয়ে দেয়। নগরে যানজট দিনে দিনে তীব্রতর হওয়ার অন্যতম একটি কারণ অপরিকল্পিতভাবে রিকশা চলাচল। চলার পথেও এ দৃশ্য হরহামেশা চোখে পড়ে।
সম্প্রতি এলিফ্যান্ট রোডে দেখা গেল দুই রিকশা একটি অপরটিকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় পরস্পরের সঙ্গে আটকে যায়। রিকশা দুটির চালকেরা এ নিয়ে তর্ক শুরু করেন। ওদিকে ততক্ষণে ছোটখাটো যানজট লেগে গেছে।
মতিঝিল-মোহাম্মদপুর রুটের সিটি বাসের চালক মো. ফারুক বলেন, ‘রিকশার লাইগ্যা আমাদের অনেক সমস্যা হয়। কথাই হোনে না। হ্যারা মেইন রোডে উইঠ্যা আহে। গাড়ির সামনে পইড়্যা যায়, কইসা ব্রেক করতে হয়। এমনে কইরা অনেক সময় লাইগ্যাও যায়। তখন মানুষ তো হেগোরে কিছু কয় না, গাড়ি ভাঙচুর করে। দোষটা কিন্তু কইলাম হেরই।’
মোহাম্মদপুরের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক আলমগীর মিয়ার কাছে রিকশার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাড়ি টানার সময় কথা নাই বার্তা নাই সামনে রিকশা আইসা পড়ে। ব্রেক করতে গিয়া ঝাঁকুনি খাইতে হয়। ডাইনেও যাইতে পারি না বামেও যাইতে পারি না। হেই সময় যারা গাড়ি চালায়, তারাই কইতে পারব রিকশা কি ডিসটার্ব করে।’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাজেদুল হক নিজেই নিজের গাড়ি চালন। তিনি বলেন, প্রধান সড়কে রিকশা চলার কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে আর যানজটের সৃষ্টি হয়।
রিকশা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক পরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর ভালো-খারাপ দুই দিকই আছে। রিকশা পরিবেশবান্ধব যান। ঘর পর্যন্ত যেতে রিকশার বিকল্প নেই। যাঁরা গণপরিবহনে যাতায়াত করেন, তাঁদের বড় একটা অংশ প্রধান সড়কে আসতে রিকশা ব্যবহার করেন। এটি খুবই দরকারিও। আবার অনেক গন্তব্যে কোনো গণপরিবহন না থাকলে সেখানেও যেতে মানুষ রিকশা ব্যবহার করেন। তবে ঢাকায় যানজটের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রধান প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ওপর দিয়ে রিকশা চলাচল।’ তিনি মনে করেন, রিকশার সমস্যা একদিনে তৈরি হয়নি। আবার সমস্যা একদিনে সমাধানও করা যাবে না। রিকশা কোন পর্যন্ত চললে সমস্যা হবে না, এই বিষয়কে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেই সমস্যার তৈরি হচ্ছে। রিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ দিনের পর দিন উদাসীন থেকেছে। তিনি বলেন, রিকশা রাতারাতি তুলেও দেওয়া যাবে না। কেননা, এর সঙ্গে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। রাজধানীতে গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত হলে মানুষের রিকশার প্রতি নির্ভরশীলতা কমত বলে মনে করেন এই নগর বিশেষজ্ঞ।
বসুন্ধরা সিটির সামনে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক সার্জেন্ট জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সড়কে যানজটের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে রিকশা। আমরা দিনের বেলা প্রধান সড়কে এটি চলতে দিই না। কেউ চালালে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।’ তিনি আরও জানালেন, ঈদ সামনে রেখে রাজধানীতে অনেক মৌসুমি রিকশা আসে। এটি নতুন করে যানজট তৈরি করে। ট্রাফিক বিভাগ থেকে এ ধরনের অবৈধ রিকশা ধরতে অভিযান চালানো হয় বলে জানান তিনি।
অবৈধ রিকশার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের করণীয় কী জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী আনসার আলী বলেন, ‘আমরা নতুন করে কোনো নিবন্ধন দিচ্ছি না। এ ছাড়া অবৈধ রিকশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের কোনো করণীয় নেই। এটি নিয়ন্ত্রণ করবে ট্রাফিক বিভাগ।’
রিকশার নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় অনেক রিকশা অবৈধ। কিন্তু কোনটি অবৈধ, তা সিটি করপোরেশন শনাক্ত করতে পারে। আমাদের জব্দ করা রিকশার জন্য আলাদা জায়গা না থাকায় আমরা অবৈধ রিকশা কম ধরছি। নিয়ম ভঙ্গ করলে অনেক সময় আমরা রিকশার চাকা ফুটো করে দিই বা গদি নিয়ে তাঁদের শাস্তি দিই। সিটি করপোরেশন আমাদের আলাদা জায়গা করে দিলে অবৈধ রিকশা ধরার অভিযান চালিয়ে জব্দ করে রাখতে পারব।’ এ জন্য তিনি সিটি করপোরেশনের সহায়তা চান।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের সূত্র বলছে, ডিসিসির উত্তর-দক্ষিণে তালিকাভুক্ত রিকশার সংখ্যা সাড়ে ৭৯ হাজার। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুসারে ঢাকায় রিকশার সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। এ সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এ রিকশার সংখ্যাও অর্ধ লক্ষাধিক বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন। আবার ঈদের মৌসুমে এই সংখ্যা বেড়ে যায়। বেশি আয়ের আশায় অনেক মৌসুমি রিকশাচালক বিভিন্ন স্থান থেকে রিকশা এনে চালান।
রাজধানীর পাড়া-মহল্লার মানুষ এখানে-সেখানে যেতে মূলত রিকশাই ব্যবহার করে থাকেন। তবে অনেকেই মনে করেন, ঢাকায় সড়কে চলার পথে এই রিকশা ভোগান্তির কারণ হয়ে ওঠে। পথে রিকশার বিশৃঙ্খলভাবে চলাচল বাস বা ব্যক্তিগত গাড়িসহ অন্যান্য যান্ত্রিক যানবাহনের চলার গতি কমিয়ে দেয়। নগরে যানজট দিনে দিনে তীব্রতর হওয়ার অন্যতম একটি কারণ অপরিকল্পিতভাবে রিকশা চলাচল। চলার পথেও এ দৃশ্য হরহামেশা চোখে পড়ে।
সম্প্রতি এলিফ্যান্ট রোডে দেখা গেল দুই রিকশা একটি অপরটিকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় পরস্পরের সঙ্গে আটকে যায়। রিকশা দুটির চালকেরা এ নিয়ে তর্ক শুরু করেন। ওদিকে ততক্ষণে ছোটখাটো যানজট লেগে গেছে।
মতিঝিল-মোহাম্মদপুর রুটের সিটি বাসের চালক মো. ফারুক বলেন, ‘রিকশার লাইগ্যা আমাদের অনেক সমস্যা হয়। কথাই হোনে না। হ্যারা মেইন রোডে উইঠ্যা আহে। গাড়ির সামনে পইড়্যা যায়, কইসা ব্রেক করতে হয়। এমনে কইরা অনেক সময় লাইগ্যাও যায়। তখন মানুষ তো হেগোরে কিছু কয় না, গাড়ি ভাঙচুর করে। দোষটা কিন্তু কইলাম হেরই।’
মোহাম্মদপুরের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক আলমগীর মিয়ার কাছে রিকশার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাড়ি টানার সময় কথা নাই বার্তা নাই সামনে রিকশা আইসা পড়ে। ব্রেক করতে গিয়া ঝাঁকুনি খাইতে হয়। ডাইনেও যাইতে পারি না বামেও যাইতে পারি না। হেই সময় যারা গাড়ি চালায়, তারাই কইতে পারব রিকশা কি ডিসটার্ব করে।’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাজেদুল হক নিজেই নিজের গাড়ি চালন। তিনি বলেন, প্রধান সড়কে রিকশা চলার কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে আর যানজটের সৃষ্টি হয়।
রিকশা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক পরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর ভালো-খারাপ দুই দিকই আছে। রিকশা পরিবেশবান্ধব যান। ঘর পর্যন্ত যেতে রিকশার বিকল্প নেই। যাঁরা গণপরিবহনে যাতায়াত করেন, তাঁদের বড় একটা অংশ প্রধান সড়কে আসতে রিকশা ব্যবহার করেন। এটি খুবই দরকারিও। আবার অনেক গন্তব্যে কোনো গণপরিবহন না থাকলে সেখানেও যেতে মানুষ রিকশা ব্যবহার করেন। তবে ঢাকায় যানজটের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রধান প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ওপর দিয়ে রিকশা চলাচল।’ তিনি মনে করেন, রিকশার সমস্যা একদিনে তৈরি হয়নি। আবার সমস্যা একদিনে সমাধানও করা যাবে না। রিকশা কোন পর্যন্ত চললে সমস্যা হবে না, এই বিষয়কে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেই সমস্যার তৈরি হচ্ছে। রিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ দিনের পর দিন উদাসীন থেকেছে। তিনি বলেন, রিকশা রাতারাতি তুলেও দেওয়া যাবে না। কেননা, এর সঙ্গে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। রাজধানীতে গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত হলে মানুষের রিকশার প্রতি নির্ভরশীলতা কমত বলে মনে করেন এই নগর বিশেষজ্ঞ।
বসুন্ধরা সিটির সামনে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক সার্জেন্ট জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সড়কে যানজটের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে রিকশা। আমরা দিনের বেলা প্রধান সড়কে এটি চলতে দিই না। কেউ চালালে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।’ তিনি আরও জানালেন, ঈদ সামনে রেখে রাজধানীতে অনেক মৌসুমি রিকশা আসে। এটি নতুন করে যানজট তৈরি করে। ট্রাফিক বিভাগ থেকে এ ধরনের অবৈধ রিকশা ধরতে অভিযান চালানো হয় বলে জানান তিনি।
অবৈধ রিকশার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের করণীয় কী জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী আনসার আলী বলেন, ‘আমরা নতুন করে কোনো নিবন্ধন দিচ্ছি না। এ ছাড়া অবৈধ রিকশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের কোনো করণীয় নেই। এটি নিয়ন্ত্রণ করবে ট্রাফিক বিভাগ।’
রিকশার নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় অনেক রিকশা অবৈধ। কিন্তু কোনটি অবৈধ, তা সিটি করপোরেশন শনাক্ত করতে পারে। আমাদের জব্দ করা রিকশার জন্য আলাদা জায়গা না থাকায় আমরা অবৈধ রিকশা কম ধরছি। নিয়ম ভঙ্গ করলে অনেক সময় আমরা রিকশার চাকা ফুটো করে দিই বা গদি নিয়ে তাঁদের শাস্তি দিই। সিটি করপোরেশন আমাদের আলাদা জায়গা করে দিলে অবৈধ রিকশা ধরার অভিযান চালিয়ে জব্দ করে রাখতে পারব।’ এ জন্য তিনি সিটি করপোরেশনের সহায়তা চান।
No comments