পিনাক–৬ লঞ্চ দুর্ঘটনার এক বছরেও সন্ধান মেলেনি ৬৪ জনের, এখনো চোখের জলে অপেক্ষা
জান্নাতুল নাইম লাকী পড়তেন সুদূর চীনের এক মেডিকেল কলেজে। পরিবারের স্বপ্ন ছিল, তিনি চিকিৎসক হয়ে দেশে ফিরে এলাকায় হাসপাতাল গড়বেন, গরিব মানুষের সেবা করবেন। এ জন্য কেনা হয় জমিও। কিন্তু এত যত্নে গড়া সেই স্বপ্ন মুহূর্তের মধ্যে ডুবে গেল পদ্মার পানিতে।
গত বছর পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনায় মেধাবী ছাত্রী লাকী নিখোঁজ হন। তাঁর কোনো সন্ধান এক বছরেও পাননি স্বজনেরা। তাঁর সঙ্গে লঞ্চে যাত্রী ছিলেন খালাতো বোন ফাতেমা তুজ জোহরা ও ঢাকা জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান হীরা। হীরার লাশ উদ্ধার করা হলেও ফাতেমার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
শুধু লাকী বা ফাতেমাই নন, স্বজনদের দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে তাঁদের চোখের জলে জনমের মতো অপেক্ষায় রেখে গেছেন দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটির ৬৪ জন আরোহী। আজ ৪ আগস্ট বেদনাভরা ওই দুর্ঘটনার এক বছর পূর্তি। কিন্তু তাঁদের কী পরিণতি হয়েছে, কারও কাছে নেই সে জবাব।
নিখোঁজ লাকীর বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ছাব্বিশপাড়া গ্রামে। আর বোন ফাতেমার বাড়ি শিবচর উপজেলার কাদিরপুর গ্রামে। লঞ্চ দুর্ঘটনার এক বছর পূর্তির ঠিক আগে লাকীর বাবা আবদুল জব্বার স্মৃতিচারণা করে বলছিলেন তাঁর স্বপ্নভাঙা বেদনার কথা। ‘ছুটিতে বাড়ি এসে মেয়েটি হারিয়ে গেল। অনেক স্বপ্ন ছিল সে চিকিৎসক হয়ে গ্রামের মানুষকে সেবা দেবে। হাসপাতাল নির্মাণ করার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। মেয়েটির কোনো সন্ধান পেলাম না। সব সময় মনে হয়, এই বুঝি লাকীর খবর পাব। অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। কিন্তু এ অপেক্ষার পালা আর ফুরায় না।’
গত বছর ৪ আগস্ট সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মাদারীপুরের শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল লঞ্চ পিনাক-৬। পথে কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে আরও ৩০-৩৫ জন যাত্রী ওঠানো হয়। বেলা পৌনে ১১টার দিকে পদ্মায় স্রোত ও ঢেউয়ে যাত্রীঠাসা লঞ্চটিতে পানি উঠতে থাকে। আতঙ্কিত যাত্রীদের জটলায় লঞ্চটি একদিকে কাত হয়ে যায়। মাওয়া ঘাটের কাছাকাছি এসেও শেষ পর্যন্ত ডুবে যায় লঞ্চটি।
দুর্ঘটনার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় জেলা প্রশাসন চেষ্টা করেও পিনাক-৬-এর কোনো সন্ধান করতে পারেনি। তখন ৪৯ জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ৬৪ জন যাত্রী নিখোঁজ ছিলেন। দীর্ঘ এক বছরেও তাঁদের কোনো সন্ধান মেলেনি। আবার নিখোঁজ স্বজনের জন্য দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকা হতভাগ্য পরিবারগুলোরও কোনো খোঁজ নেয়নি সরকার। দুর্ঘটনায় নিহত ও নিখোঁজ এত মানুষের স্মরণে কোনো কর্মসূচি পালন করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অনেক পরিবারের সদস্যই এখন কাটাচ্ছেন দুর্বিষহ এক মানবেতর জীবন।
এ রকমই একজন শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীরচর গ্রামের সুরাতন নেছা (৬৫)। তাঁর চারজন স্বজন নিখোঁজ। তাঁদের অপেক্ষায় শুধু চোখের জলই ফেলে যাচ্ছেন তিনি। দুর্ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন তাঁর ছেলে বিল্লাল মুন্সি (৩০), মেয়ে শিল্পী আক্তার (২২), জামাতা ফরহাদ শেখ (২৮) ও দেড় বছর বয়সী নাতি ফাহিম। ছেলের আয়ে তাঁদের সংসার চলত। এখন অর্থসংকটে ধুঁকে ধুঁকে মরার অবস্থা পরিবারটির।
সুরাতন নেছা বলেন, ‘ওদের লাশগুলোও পেলাম না। এক বছর যাবৎ অপেক্ষা করছি আর চোখের পানি ফেলছি। আমি কোনো সাহায্য চাই না। শুধু ওদের সন্ধান চাই। বিল্লালের আয় করা টাকা দিয়ে সংসার চলত। এখন অনেক কষ্টে পরিবারের চার সদস্য নিয়ে বেঁচে আছি।’
মৃত উদ্ধার হওয়া ৪৯ জনের মধ্যে ২৭ জনের পরিবারকে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ লাখ ৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। একজনের পক্ষে কেউ ক্ষতিপূরণের টাকা দাবি করেননি। আর শনাক্ত না হওয়ায় বাকি ২১ জনকে শিবচর উপজেলা পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
নিখোঁজ ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারগুলোর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর তথ্যকেন্দ্রে অনেকে তাঁদের স্বজন নিখোঁজ থাকার কথা বলেছেন। তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে নিখোঁজ থাকার বিষয়ে কেউ আমাদের কাছে আবেদন করেননি। কেউ মানবেতর জীবন যাপন করলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁদের সহায়তা করা হবে।’
এদিকে অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ভয়াবহ ওই লঞ্চ দুর্ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেই তাদের দায়িত্ব সেরেছে।
গত বছর পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনায় মেধাবী ছাত্রী লাকী নিখোঁজ হন। তাঁর কোনো সন্ধান এক বছরেও পাননি স্বজনেরা। তাঁর সঙ্গে লঞ্চে যাত্রী ছিলেন খালাতো বোন ফাতেমা তুজ জোহরা ও ঢাকা জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান হীরা। হীরার লাশ উদ্ধার করা হলেও ফাতেমার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
শুধু লাকী বা ফাতেমাই নন, স্বজনদের দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে তাঁদের চোখের জলে জনমের মতো অপেক্ষায় রেখে গেছেন দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটির ৬৪ জন আরোহী। আজ ৪ আগস্ট বেদনাভরা ওই দুর্ঘটনার এক বছর পূর্তি। কিন্তু তাঁদের কী পরিণতি হয়েছে, কারও কাছে নেই সে জবাব।
নিখোঁজ লাকীর বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ছাব্বিশপাড়া গ্রামে। আর বোন ফাতেমার বাড়ি শিবচর উপজেলার কাদিরপুর গ্রামে। লঞ্চ দুর্ঘটনার এক বছর পূর্তির ঠিক আগে লাকীর বাবা আবদুল জব্বার স্মৃতিচারণা করে বলছিলেন তাঁর স্বপ্নভাঙা বেদনার কথা। ‘ছুটিতে বাড়ি এসে মেয়েটি হারিয়ে গেল। অনেক স্বপ্ন ছিল সে চিকিৎসক হয়ে গ্রামের মানুষকে সেবা দেবে। হাসপাতাল নির্মাণ করার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। মেয়েটির কোনো সন্ধান পেলাম না। সব সময় মনে হয়, এই বুঝি লাকীর খবর পাব। অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। কিন্তু এ অপেক্ষার পালা আর ফুরায় না।’
গত বছর ৪ আগস্ট সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মাদারীপুরের শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল লঞ্চ পিনাক-৬। পথে কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে আরও ৩০-৩৫ জন যাত্রী ওঠানো হয়। বেলা পৌনে ১১টার দিকে পদ্মায় স্রোত ও ঢেউয়ে যাত্রীঠাসা লঞ্চটিতে পানি উঠতে থাকে। আতঙ্কিত যাত্রীদের জটলায় লঞ্চটি একদিকে কাত হয়ে যায়। মাওয়া ঘাটের কাছাকাছি এসেও শেষ পর্যন্ত ডুবে যায় লঞ্চটি।
দুর্ঘটনার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় জেলা প্রশাসন চেষ্টা করেও পিনাক-৬-এর কোনো সন্ধান করতে পারেনি। তখন ৪৯ জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ৬৪ জন যাত্রী নিখোঁজ ছিলেন। দীর্ঘ এক বছরেও তাঁদের কোনো সন্ধান মেলেনি। আবার নিখোঁজ স্বজনের জন্য দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকা হতভাগ্য পরিবারগুলোরও কোনো খোঁজ নেয়নি সরকার। দুর্ঘটনায় নিহত ও নিখোঁজ এত মানুষের স্মরণে কোনো কর্মসূচি পালন করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অনেক পরিবারের সদস্যই এখন কাটাচ্ছেন দুর্বিষহ এক মানবেতর জীবন।
এ রকমই একজন শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীরচর গ্রামের সুরাতন নেছা (৬৫)। তাঁর চারজন স্বজন নিখোঁজ। তাঁদের অপেক্ষায় শুধু চোখের জলই ফেলে যাচ্ছেন তিনি। দুর্ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন তাঁর ছেলে বিল্লাল মুন্সি (৩০), মেয়ে শিল্পী আক্তার (২২), জামাতা ফরহাদ শেখ (২৮) ও দেড় বছর বয়সী নাতি ফাহিম। ছেলের আয়ে তাঁদের সংসার চলত। এখন অর্থসংকটে ধুঁকে ধুঁকে মরার অবস্থা পরিবারটির।
সুরাতন নেছা বলেন, ‘ওদের লাশগুলোও পেলাম না। এক বছর যাবৎ অপেক্ষা করছি আর চোখের পানি ফেলছি। আমি কোনো সাহায্য চাই না। শুধু ওদের সন্ধান চাই। বিল্লালের আয় করা টাকা দিয়ে সংসার চলত। এখন অনেক কষ্টে পরিবারের চার সদস্য নিয়ে বেঁচে আছি।’
মৃত উদ্ধার হওয়া ৪৯ জনের মধ্যে ২৭ জনের পরিবারকে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ লাখ ৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। একজনের পক্ষে কেউ ক্ষতিপূরণের টাকা দাবি করেননি। আর শনাক্ত না হওয়ায় বাকি ২১ জনকে শিবচর উপজেলা পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
নিখোঁজ ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারগুলোর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর তথ্যকেন্দ্রে অনেকে তাঁদের স্বজন নিখোঁজ থাকার কথা বলেছেন। তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে নিখোঁজ থাকার বিষয়ে কেউ আমাদের কাছে আবেদন করেননি। কেউ মানবেতর জীবন যাপন করলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁদের সহায়তা করা হবে।’
এদিকে অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ভয়াবহ ওই লঞ্চ দুর্ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেই তাদের দায়িত্ব সেরেছে।
No comments