কবরে লাশ আছে, নেই স্বজনেরা by সত্যজিৎ ঘোষ
পদ্মায় লঞ্চডুবির এক বছর |
পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করা ২১ ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা এখনো হয়নি। ৪ আগস্ট, এ দুর্ঘটনার এক বছর পূর্তি। এই ব্যক্তিদের কোথায় কবরস্থ করা হয়েছে ও ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে স্বজনদের হাতে দেহাবশেষগুলো যে তুলে দেওয়া সম্ভব, সে বিষয়েও দীর্ঘ এ সময়ে কোনো প্রচার চালানো হয়নি। এতে কবরে লাশ আছে ঠিকই, নেই শুধু তাঁদের স্বজনেরা।
গত বছর মাদারীপুরের শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে যাত্রী বোঝাই করে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটে যাওয়ার পথে পদ্মায় পিনাক-৬ লঞ্চটি ডুবে যায়। দুর্ঘটনায় ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ২৮ জনের লাশ পরিবারের সদস্যরা নিয়ে যান। ২১ জনের লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ লাশগুলো শিবচর পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘শিবচর পৌর কবরস্থানে দাফন করা অজ্ঞাত পরিচয়ের এই লাশগুলো যাতে স্বজনেরা শনাক্ত করতে পারেন, সে জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এ বিষয়ে প্রচারণা চালানো হবে। প্রতিবেদন হাতে না পাওয়ায় এখনো প্রচারণা চালানো হয়নি।’
এ বিষয়ে গতকাল রাতে ঢাকায় ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবের প্রধান শরীফ আক্তারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরীক্ষা এখনো হয়নি। শিগগিরই হবে।’
সরেজমিন: কবরস্থানে বাঁশের খুঁটিতে ছোট ছোট সাইনবোর্ড ঝোলানো। কালো সাইনবোর্ডে সাদা হরফে তাতে লেখা। যেমন একটিতে লেখা ‘৪-৮-২০১৪ তারিখে পদ্মা নদীতে লঞ্চডুবিতে নিহত, কবর নম্বর-২৪’। এই ক্রমিক নম্বরে শিবচর উপজেলা প্রশাসনের লাশের তথ্য নিবন্ধন খাতায় লেখা রয়েছে, ৩০ বছর বয়সী মহিলা, ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতা। হলুদ নেভি ব্লু ছাপার কামিজ ও নেভি ব্লু সালোয়ার পরিহিত। এভাবেই পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত অজ্ঞাতনামা হতভাগ্য ২১ যাত্রীর বিবরণ রয়েছে এ কবরস্থান ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে।
মাদারীপুর স্বাস্থ্য বিভাগ দাফনের আগে প্রতিটি লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছে। এখন পর্যন্ত ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন মাদারীপুর স্বাস্থ্য বিভাগে পৌঁছায়নি। গতকাল রাতে ঢাকায় ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবে মুঠোফোনে খোঁজ নিয়ে জানা গেল ডিএনএর পরীক্ষাই এখনো হয়নি, প্রতিবেদন তো পরের কথা। অজ্ঞাতনামা হিসেবে কবর দেওয়া এই ২১ জনের স্বজন যাতে পরবর্তী সময়ে তাঁদের শনাক্ত করতে পারেন, সে জন্য ওই ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় প্রশাসন ঘোষণা করেছিল, এসব লাশের দাবিদারদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরে উভয় নমুনা মেলানো হবে। মিল পেলে লাশ সংশ্লিষ্ট স্বজনের হাতে হস্তান্তর করা হবে। এই ঘোষণা ও পৌর কবরস্থানে লাশগুলো দাফন করার বিষয়েও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে বলে তখন জানানো হয়েছিল। কিন্তু এক বছরে এই ঘোষণার কোনোটিই করা হয়নি। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এই ২১ জনের ব্যাপারে কেউ খোঁজ নিতে আসেননি।
শিবচরের সন্ন্যাসীরচর গ্রামের হুমায়ুন মুন্সি বলেন, ‘আমার পরিবারের চার স্বজন এখনো নিখোঁজ। আমার মতো এ রকম অনেকেই তাঁদের স্বজনের সন্ধান পাননি। শনাক্ত করার জন্য অজ্ঞাতপরিচয়ের লাশগুলোর ডিএনএ নমুনা রাখা হয়েছে, বিষয়টি আমরা জানি না। কেউ কখনো আমাদের এ বিষয়ে বলেননি। মানুষ যদি জানতে না পারে, তাহলে কীভাবে ডিএনএ নমুনা দিয়ে স্বজনকে শনাক্ত করবে।’
মাদারীপুরের সিভিল সার্জন দিলীপ কুমার দাসও জানালেন, ওই লাশগুলোর কোনো স্বজন ডিএনএ নমুনা মেলানোর জন্য তাঁদের কাছে আসেননি।
শিবচর উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে নলগোড়া গ্রামে কবরস্থানটি অবস্থিত। এখানে যে ওই ২১ জনকে দাফন করা হয়েছে, সে সম্পর্কে কবরস্থানের ফটক ও সড়কে কোনো তথ্য টানানো নেই। কবরস্থানের উত্তর-পূর্ব কোণে পাশাপাশি লাশগুলো দাফন করা হয়েছিল। কবরগুলোকে বাঁশের তৈরি বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল।
গতকাল দুপুরে কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, কবরস্থানের ওই ২১টি কবর লতাগুল্মে ঢেকে রয়েছে। দাফন করার পর মনে হয় আর কবরগুলো পরিষ্কার করা হয়নি। লাশের তথ্যসংবলিত সাইনবোর্ডগুলোও রয়েছে ঢাকা পড়ে।
জানা গেল, নতুন কাউকে দাফন করতে এলে স্বজনেরা কবরস্থানটি পরিষ্কার করে নেন। কবরস্থানের পরিচ্ছন্নতাকর্মী নুরুল ইসলাম বললেন, ‘২১ জনের কবরগুলোকে আলাদা করে পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয় না। বর্ষা মৌসুমের পরে সব কবর পরিষ্কার করা হবে।’
গত বছর মাদারীপুরের শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে যাত্রী বোঝাই করে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটে যাওয়ার পথে পদ্মায় পিনাক-৬ লঞ্চটি ডুবে যায়। দুর্ঘটনায় ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ২৮ জনের লাশ পরিবারের সদস্যরা নিয়ে যান। ২১ জনের লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ লাশগুলো শিবচর পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘শিবচর পৌর কবরস্থানে দাফন করা অজ্ঞাত পরিচয়ের এই লাশগুলো যাতে স্বজনেরা শনাক্ত করতে পারেন, সে জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এ বিষয়ে প্রচারণা চালানো হবে। প্রতিবেদন হাতে না পাওয়ায় এখনো প্রচারণা চালানো হয়নি।’
এ বিষয়ে গতকাল রাতে ঢাকায় ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবের প্রধান শরীফ আক্তারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরীক্ষা এখনো হয়নি। শিগগিরই হবে।’
সরেজমিন: কবরস্থানে বাঁশের খুঁটিতে ছোট ছোট সাইনবোর্ড ঝোলানো। কালো সাইনবোর্ডে সাদা হরফে তাতে লেখা। যেমন একটিতে লেখা ‘৪-৮-২০১৪ তারিখে পদ্মা নদীতে লঞ্চডুবিতে নিহত, কবর নম্বর-২৪’। এই ক্রমিক নম্বরে শিবচর উপজেলা প্রশাসনের লাশের তথ্য নিবন্ধন খাতায় লেখা রয়েছে, ৩০ বছর বয়সী মহিলা, ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতা। হলুদ নেভি ব্লু ছাপার কামিজ ও নেভি ব্লু সালোয়ার পরিহিত। এভাবেই পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত অজ্ঞাতনামা হতভাগ্য ২১ যাত্রীর বিবরণ রয়েছে এ কবরস্থান ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে।
মাদারীপুর স্বাস্থ্য বিভাগ দাফনের আগে প্রতিটি লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছে। এখন পর্যন্ত ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন মাদারীপুর স্বাস্থ্য বিভাগে পৌঁছায়নি। গতকাল রাতে ঢাকায় ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবে মুঠোফোনে খোঁজ নিয়ে জানা গেল ডিএনএর পরীক্ষাই এখনো হয়নি, প্রতিবেদন তো পরের কথা। অজ্ঞাতনামা হিসেবে কবর দেওয়া এই ২১ জনের স্বজন যাতে পরবর্তী সময়ে তাঁদের শনাক্ত করতে পারেন, সে জন্য ওই ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় প্রশাসন ঘোষণা করেছিল, এসব লাশের দাবিদারদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরে উভয় নমুনা মেলানো হবে। মিল পেলে লাশ সংশ্লিষ্ট স্বজনের হাতে হস্তান্তর করা হবে। এই ঘোষণা ও পৌর কবরস্থানে লাশগুলো দাফন করার বিষয়েও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে বলে তখন জানানো হয়েছিল। কিন্তু এক বছরে এই ঘোষণার কোনোটিই করা হয়নি। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এই ২১ জনের ব্যাপারে কেউ খোঁজ নিতে আসেননি।
শিবচরের সন্ন্যাসীরচর গ্রামের হুমায়ুন মুন্সি বলেন, ‘আমার পরিবারের চার স্বজন এখনো নিখোঁজ। আমার মতো এ রকম অনেকেই তাঁদের স্বজনের সন্ধান পাননি। শনাক্ত করার জন্য অজ্ঞাতপরিচয়ের লাশগুলোর ডিএনএ নমুনা রাখা হয়েছে, বিষয়টি আমরা জানি না। কেউ কখনো আমাদের এ বিষয়ে বলেননি। মানুষ যদি জানতে না পারে, তাহলে কীভাবে ডিএনএ নমুনা দিয়ে স্বজনকে শনাক্ত করবে।’
মাদারীপুরের সিভিল সার্জন দিলীপ কুমার দাসও জানালেন, ওই লাশগুলোর কোনো স্বজন ডিএনএ নমুনা মেলানোর জন্য তাঁদের কাছে আসেননি।
শিবচর উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে নলগোড়া গ্রামে কবরস্থানটি অবস্থিত। এখানে যে ওই ২১ জনকে দাফন করা হয়েছে, সে সম্পর্কে কবরস্থানের ফটক ও সড়কে কোনো তথ্য টানানো নেই। কবরস্থানের উত্তর-পূর্ব কোণে পাশাপাশি লাশগুলো দাফন করা হয়েছিল। কবরগুলোকে বাঁশের তৈরি বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল।
গতকাল দুপুরে কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, কবরস্থানের ওই ২১টি কবর লতাগুল্মে ঢেকে রয়েছে। দাফন করার পর মনে হয় আর কবরগুলো পরিষ্কার করা হয়নি। লাশের তথ্যসংবলিত সাইনবোর্ডগুলোও রয়েছে ঢাকা পড়ে।
জানা গেল, নতুন কাউকে দাফন করতে এলে স্বজনেরা কবরস্থানটি পরিষ্কার করে নেন। কবরস্থানের পরিচ্ছন্নতাকর্মী নুরুল ইসলাম বললেন, ‘২১ জনের কবরগুলোকে আলাদা করে পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয় না। বর্ষা মৌসুমের পরে সব কবর পরিষ্কার করা হবে।’
No comments