মহাসড়কে ৩ চাকার যান ১৩ লাখ by আনোয়ার হোসেন
কিছু স্ববিরোধিতা এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারের শৈথিল্যের কারণে মহাসড়কে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। সরকার মহাসড়কে ধীরগতির ইজিবাইক বন্ধের কথা বললেও আমদানি বন্ধ করেনি। ‘মহাসড়কে চলতে পারবে না’ সিল মেরে সিএনজিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে অবাধে। আর নছিমন-করিমন-ভটভটি নিবন্ধন ছাড়া মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়ালেও কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করেছে। এই তিন ধরনের যানের সংখ্যা ১৩ লাখেরও বেশি।
সড়ক খাতের বিশেষজ্ঞ ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, দু-তিন বছর আগেও জাতীয় মহাসড়কে এত ধীরগতির যান চলত না। ২০১০ সালে এগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মন্ত্রণালয় তৎপর হলে সাধারণ মানুষকে এখন এত ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। তবে সড়ক নিরাপত্তার স্বার্থে মহাসড়ক থেকে ধীরগতির যান উচ্ছেদের কোনো বিকল্প নেই।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক নিরাপত্তার স্বার্থে আরও আগেই ধীরগতির যান মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করা উচিত ছিল। তবে এখন যেভাবে আড়ম্বর করে বন্ধের অভিযান চলছে, তা যেন থমকে না যায়। অবশ্য বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকলে সেটাও করতে হবে।
মহাসড়ক থেকে ধীরগতির তিন চাকার অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি চলাচল বন্ধের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয় জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ২০১০ সালের এক বৈঠকে। এরপরও অপরিকল্পিতভাবে তিন চাকার অটোরিকশা ও টেম্পোর নিবন্ধন দিয়ে চলেছে সরকার।
ধীরগতির যান না চলা ও আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত পাঁচ বছরেও কার্যকর হয়নি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুসারে, সারা দেশে নিবন্ধিত অটোরিকশা ও টেম্পোর সংখ্যা ২ লাখ ৩১ হাজারের কিছু বেশি। আরও প্রায় এক লাখ নিবন্ধন ছাড়াই চলছে। বিআরটিএ ও মালিক-শ্রমিক সমিতিগুলোর ধারণা, নিবন্ধনহীন নছিমন-করিমন-ভটভটি ও ইজিবাইকের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, শুধু চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলাতেই প্রায় ১৫ হাজার অটোরিকশা চলে নিবন্ধন ছাড়া। সিলেট অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের একটি সূত্র জানায়, সেখানে নিবন্ধনহীন অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার।
বিআরটিএ ২০১০ সাল থেকে গত জুন পর্যন্ত ৮৬ হাজার ৩৮৮টি অটোরিকশা এবং প্রায় আড়াই হাজার টেম্পোর নিবন্ধন দিয়েছে। অথচ সড়কে-মহাসড়কে পর্যাপ্ত বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা নেই। ফিটনেসবিহীন ও ‘লক্কড়ঝক্কড়’ বাস মহাসড়কে চললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অভিযোগ আছে, মালিক সমিতিগুলোর অশুভ তৎপরতার কারণে নতুন করে বাস নামছে না। কারণ, নতুন বাস নামাতে মালিক সমিতির সদস্য হতে হয় এবং এ জন্য ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়।
২০১০ সালে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মহাসড়কে চলাচল বন্ধ এবং এগুলোর কোনো নিবন্ধন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। একই সঙ্গে এগুলোর আমদানি বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়।
কাউন্সিলের সদস্যসংখ্যা ৪৪। স্বরাষ্ট্র, সড়ক পরিবহন, নৌ, রেল ও তথ্য—এই পাঁচ মন্ত্রণালয়ও কাউন্সিলর সদস্য। এর বাইরে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিরা রয়েছেন। সব বিভাগ একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কখনোই সমন্বয় রক্ষা করা হয়নি।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তবে এরপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
সোমবার কমলাপুর স্টেডিয়াম মার্কেট এবং এর আশপাশে গড়ে ওঠা শোরুমে অসংখ্য ইজিবাইক বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখতে দেখা যায়। বিক্রেতারা জানান, চীন থেকে যন্ত্রাংশ এনে ঢাকায় সেগুলো সংযোজন করে বিক্রি করা হয়।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই অভিযান থেকে সরে আসা হবে না। মাত্র ৩ হাজার ৫৭০ কিলোমিটারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের প্রায় আড়াই লাখ কিলোমিটার রাস্তায় ধীরগতির যান চলতে পারবে।
আগেই এগুলোর চলাচল বন্ধের উদ্যোগ কেন নেওয়া হয়নি জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আমরা তৎপর ছিলাম। নানা কারণে সম্ভব হয়নি। এখন আর ছাড় দেওয়া হবে না।’ ইজিবাইকের আমদানি বন্ধ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আন্তমন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তের বিষয়। কাজ চলছে। অবাধে অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি মহাসড়কের বাইরে চালিয়ে আয় করতে পারে, সেটা করুক।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ যানবাহন উচ্ছেদের পাশাপাশি সরকারকে বাস্তববাদী হতে হবে। বিকল্প বাস নামাতে হবে, না হলে অটোরিকশার জন্য আলাদা লেন করতে হবে।
সড়ক খাতের বিশেষজ্ঞ ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, দু-তিন বছর আগেও জাতীয় মহাসড়কে এত ধীরগতির যান চলত না। ২০১০ সালে এগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মন্ত্রণালয় তৎপর হলে সাধারণ মানুষকে এখন এত ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। তবে সড়ক নিরাপত্তার স্বার্থে মহাসড়ক থেকে ধীরগতির যান উচ্ছেদের কোনো বিকল্প নেই।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক নিরাপত্তার স্বার্থে আরও আগেই ধীরগতির যান মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করা উচিত ছিল। তবে এখন যেভাবে আড়ম্বর করে বন্ধের অভিযান চলছে, তা যেন থমকে না যায়। অবশ্য বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকলে সেটাও করতে হবে।
মহাসড়ক থেকে ধীরগতির তিন চাকার অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি চলাচল বন্ধের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয় জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ২০১০ সালের এক বৈঠকে। এরপরও অপরিকল্পিতভাবে তিন চাকার অটোরিকশা ও টেম্পোর নিবন্ধন দিয়ে চলেছে সরকার।
ধীরগতির যান না চলা ও আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত পাঁচ বছরেও কার্যকর হয়নি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুসারে, সারা দেশে নিবন্ধিত অটোরিকশা ও টেম্পোর সংখ্যা ২ লাখ ৩১ হাজারের কিছু বেশি। আরও প্রায় এক লাখ নিবন্ধন ছাড়াই চলছে। বিআরটিএ ও মালিক-শ্রমিক সমিতিগুলোর ধারণা, নিবন্ধনহীন নছিমন-করিমন-ভটভটি ও ইজিবাইকের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, শুধু চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলাতেই প্রায় ১৫ হাজার অটোরিকশা চলে নিবন্ধন ছাড়া। সিলেট অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের একটি সূত্র জানায়, সেখানে নিবন্ধনহীন অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার।
বিআরটিএ ২০১০ সাল থেকে গত জুন পর্যন্ত ৮৬ হাজার ৩৮৮টি অটোরিকশা এবং প্রায় আড়াই হাজার টেম্পোর নিবন্ধন দিয়েছে। অথচ সড়কে-মহাসড়কে পর্যাপ্ত বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা নেই। ফিটনেসবিহীন ও ‘লক্কড়ঝক্কড়’ বাস মহাসড়কে চললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অভিযোগ আছে, মালিক সমিতিগুলোর অশুভ তৎপরতার কারণে নতুন করে বাস নামছে না। কারণ, নতুন বাস নামাতে মালিক সমিতির সদস্য হতে হয় এবং এ জন্য ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়।
২০১০ সালে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মহাসড়কে চলাচল বন্ধ এবং এগুলোর কোনো নিবন্ধন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। একই সঙ্গে এগুলোর আমদানি বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়।
কাউন্সিলের সদস্যসংখ্যা ৪৪। স্বরাষ্ট্র, সড়ক পরিবহন, নৌ, রেল ও তথ্য—এই পাঁচ মন্ত্রণালয়ও কাউন্সিলর সদস্য। এর বাইরে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিরা রয়েছেন। সব বিভাগ একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কখনোই সমন্বয় রক্ষা করা হয়নি।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তবে এরপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
সোমবার কমলাপুর স্টেডিয়াম মার্কেট এবং এর আশপাশে গড়ে ওঠা শোরুমে অসংখ্য ইজিবাইক বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখতে দেখা যায়। বিক্রেতারা জানান, চীন থেকে যন্ত্রাংশ এনে ঢাকায় সেগুলো সংযোজন করে বিক্রি করা হয়।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই অভিযান থেকে সরে আসা হবে না। মাত্র ৩ হাজার ৫৭০ কিলোমিটারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের প্রায় আড়াই লাখ কিলোমিটার রাস্তায় ধীরগতির যান চলতে পারবে।
আগেই এগুলোর চলাচল বন্ধের উদ্যোগ কেন নেওয়া হয়নি জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আমরা তৎপর ছিলাম। নানা কারণে সম্ভব হয়নি। এখন আর ছাড় দেওয়া হবে না।’ ইজিবাইকের আমদানি বন্ধ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আন্তমন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তের বিষয়। কাজ চলছে। অবাধে অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি মহাসড়কের বাইরে চালিয়ে আয় করতে পারে, সেটা করুক।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ যানবাহন উচ্ছেদের পাশাপাশি সরকারকে বাস্তববাদী হতে হবে। বিকল্প বাস নামাতে হবে, না হলে অটোরিকশার জন্য আলাদা লেন করতে হবে।
No comments