সিঁদুরে-লাল মৌটুসি by আ ন ম আমিনুর রহমান
বহুপুষ্পিকা ফুলের ডালে পুরুষ সিঁদুরে মৌটুসি। গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে ছবিটি তোলা। ছবি: লেখক |
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ভেটেরিনারি এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের বার্ষিক সম্মেলনের একটি অধিবেশনে কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। যেহেতু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া ও শিক্ষকতা করেছি, তাই এর প্রতি সব সময়ই একটা টান অনুভব করি। যখনই যাই, সুযোগ করে স্মৃতির স্থানগুলো দেখে আসি।
তেমনিভাবে ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে এক সহকর্মীকে নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঢুকলাম। আগের তুলনায় সেটি বেশ সুন্দর। ফুলে ফুলে শোভিত বাগানে হাঁটতে হাঁটতে একসময় শেষ প্রান্তে চলে এলাম। এখানে চার-পাঁচটা Woodfordia fruticosa গাছ (ইংরেজি নাম—Fire Flame Bush বা Red Bell Bush এবং সংস্কৃত নাম—পার্বতী বা বহুপুষ্পিকা; বাংলা নাম জানা নেই) একসঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। পুরো গাছ আগুনে লাল ফুলে ছেয়ে গেছে।
গাছের কাছাকাছি আসতেই থমকে দাঁড়ালাম। পুরো গাছে ছোট পাখির মেলা বসেছে। সবাই ফুলের নির্যাস পানে ব্যস্ত। নীলটুনি, মৌটুসি, শ্বেতাঙ্গ ও ফুলের রঙে রাঙানো এক প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে লালরঙা পাখির সংখ্যাই বেশি। কোনো কোনোটা মাঝেমধ্যে পাশের বড় গাছটায় খানিকটা জিরিয়ে নিচ্ছে। অন্যরা উড়ে দূরে চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আবার আসছে। দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। পুরো দেড় ঘণ্টা ওদের কার্যকলাপ দেখলাম। ক্যামেরায় ক্লিকের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। তারপরেও মন ভরছে না। পরদিন একই সময় আবার এলাম। ঘণ্টা খানেক কাটালাম। অসংখ্য ছবি তুললাম। সারাক্ষণ ওদের সঙ্গেই থাকতে ইচ্ছে করছিল।
এতক্ষণ লালরঙা যে পাখির কথা বললাম, সে এ দেশের অন্যতম সুন্দর পাখি ‘সিঁদুরে-লাল মৌটুসি’ (Crimson Sunbird, Yellow-backed Sunbird, Scarlet-throated Sunbird or Scarlet-breasted Sunbird)। ‘সিঁদুরে মৌটুসি’ নামেও পরিচিত। নেকটারিনিডি পরিবারভুক্ত এ পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Aethopyga siparaja। এটি সিঙ্গাপুরের জাতীয় পাখির মর্যাদা পেয়েছে।
পুরুষ সিঁদুরে-লাল মৌটুসি বাংলাদেশের সুন্দর পাখিগুলোর অন্যতম। লম্বায় পুরুষ প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার ও স্ত্রী ১০ সেন্টিমিটার ওজনে পুরুষ প্রায় আট গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষের পালকের রঙে বেশ পার্থক্য থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের গলা, বুক ও বুকের দুই পাশ উজ্জ্বল লাল। ঠোঁটের গোড়া থেকে গলার দুই পাশে গোঁফের মতো ধাতব নীলচে-সবুজ ডোরা রয়েছে। মাথার চাঁদি ধাতব সবুজ। রোদের আলোয় মাথার চাঁদি ও গোঁফ চকচক করতে থাকে। পিঠ কালচে গাঢ় লাল বা মেরুন লাল। কোমরের পালক হলুদ। লেজের লম্বা পালক সবুজ, যার আগার বাইরের দিকটা সাদা। পেট ও পায়ুর পালক হলদে-জলপাই। ডানার গোড়া লালচে-জলপাই ও বাকি অংশ গাঢ় জলপাই। স্ত্রীর দেহের ওপরটা জলপাই-সবুজ ও নিচটা হলদে-জলপাই। লেজ গোলাকার ও অগ্রভাগ সাদা। গলা ও বুকের উজ্জ্বল লাল আভা ছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ দেখতে স্ত্রী পাখির মতোই। স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে পা, আঙুল, নখ ও বাঁকানো ঠোঁটটি কালচে-বাদামি।
সিঁদুরে-লাল মৌটুসি মূলত বনের পাখি। এ দেশের চিরসবুজ বন, পাতাঝরা বন, ক্ষুদ্র ঝোপ ও গরান বনে বিচরণ করে। তবে অনেক সময় গ্রাম ও শহরতলির সুমিষ্ট মধুসম্পন্ন ফুল বাগানেও ঘুরঘুর করতে দেখা যায়। এদের জিব নলাকার, যা নলাকার ফুলের নির্যাস পান করার উপযোগী। এরা পোকামাকড়ও খেতে পারে। বাচ্চাদের মাকড়সার ছোট ছোট বাচ্চা খাওয়ায়। সাধারণত একাকী বা জোড়ায় বিচরণ করে। অনেক সময় অন্যান্য প্রজাতির নীলটুনি-মৌটুসির সঙ্গেও দলে দেখা যায়। তীব্র স্বরে ‘চি—-চিই—-চিই’ শব্দে ডাকে।
এপ্রিল-জুলাই প্রজননকাল। এ সময় স্ত্রী-পুরুষ মিলে ছোট গাছ বা ঝোপঝাড়ের ঝুলন্ত সরু ডালে শিকড় বা চিকন আঁশ দিয়ে ঝুলন্ত বাসা বানায়। এদের বাসা নীলটুনির থেকে লম্বা ও চাপানো এবং দেখতে খোসা ছাড়ানো পাকা ধুন্দলের মতো। এরপর স্ত্রী শৈবাল ও মাকড়সার জাল দিয়ে বাসার ওপরে আবরণ বা লাইনিং দেয়। বাসা বানানো হলে স্ত্রী দু-তিনটি সাদা ডিম পাড়ে, যাদের চওড়া প্রান্তে গোলাপি বা লালচে ছিট থাকে। স্ত্রী একাই তা দিয়ে ১৪-১৫ দিনে বাচ্চা তোলে। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই বাচ্চাদের খাওয়ায়। বাচ্চারা ২২-২৩ দিনে বড় হয়ে যায় ও নীল আকাশে স্বপ্নের ডানা মেলে।
তেমনিভাবে ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে এক সহকর্মীকে নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঢুকলাম। আগের তুলনায় সেটি বেশ সুন্দর। ফুলে ফুলে শোভিত বাগানে হাঁটতে হাঁটতে একসময় শেষ প্রান্তে চলে এলাম। এখানে চার-পাঁচটা Woodfordia fruticosa গাছ (ইংরেজি নাম—Fire Flame Bush বা Red Bell Bush এবং সংস্কৃত নাম—পার্বতী বা বহুপুষ্পিকা; বাংলা নাম জানা নেই) একসঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। পুরো গাছ আগুনে লাল ফুলে ছেয়ে গেছে।
গাছের কাছাকাছি আসতেই থমকে দাঁড়ালাম। পুরো গাছে ছোট পাখির মেলা বসেছে। সবাই ফুলের নির্যাস পানে ব্যস্ত। নীলটুনি, মৌটুসি, শ্বেতাঙ্গ ও ফুলের রঙে রাঙানো এক প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে লালরঙা পাখির সংখ্যাই বেশি। কোনো কোনোটা মাঝেমধ্যে পাশের বড় গাছটায় খানিকটা জিরিয়ে নিচ্ছে। অন্যরা উড়ে দূরে চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আবার আসছে। দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। পুরো দেড় ঘণ্টা ওদের কার্যকলাপ দেখলাম। ক্যামেরায় ক্লিকের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। তারপরেও মন ভরছে না। পরদিন একই সময় আবার এলাম। ঘণ্টা খানেক কাটালাম। অসংখ্য ছবি তুললাম। সারাক্ষণ ওদের সঙ্গেই থাকতে ইচ্ছে করছিল।
এতক্ষণ লালরঙা যে পাখির কথা বললাম, সে এ দেশের অন্যতম সুন্দর পাখি ‘সিঁদুরে-লাল মৌটুসি’ (Crimson Sunbird, Yellow-backed Sunbird, Scarlet-throated Sunbird or Scarlet-breasted Sunbird)। ‘সিঁদুরে মৌটুসি’ নামেও পরিচিত। নেকটারিনিডি পরিবারভুক্ত এ পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Aethopyga siparaja। এটি সিঙ্গাপুরের জাতীয় পাখির মর্যাদা পেয়েছে।
পুরুষ সিঁদুরে-লাল মৌটুসি বাংলাদেশের সুন্দর পাখিগুলোর অন্যতম। লম্বায় পুরুষ প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার ও স্ত্রী ১০ সেন্টিমিটার ওজনে পুরুষ প্রায় আট গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষের পালকের রঙে বেশ পার্থক্য থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের গলা, বুক ও বুকের দুই পাশ উজ্জ্বল লাল। ঠোঁটের গোড়া থেকে গলার দুই পাশে গোঁফের মতো ধাতব নীলচে-সবুজ ডোরা রয়েছে। মাথার চাঁদি ধাতব সবুজ। রোদের আলোয় মাথার চাঁদি ও গোঁফ চকচক করতে থাকে। পিঠ কালচে গাঢ় লাল বা মেরুন লাল। কোমরের পালক হলুদ। লেজের লম্বা পালক সবুজ, যার আগার বাইরের দিকটা সাদা। পেট ও পায়ুর পালক হলদে-জলপাই। ডানার গোড়া লালচে-জলপাই ও বাকি অংশ গাঢ় জলপাই। স্ত্রীর দেহের ওপরটা জলপাই-সবুজ ও নিচটা হলদে-জলপাই। লেজ গোলাকার ও অগ্রভাগ সাদা। গলা ও বুকের উজ্জ্বল লাল আভা ছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ দেখতে স্ত্রী পাখির মতোই। স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে পা, আঙুল, নখ ও বাঁকানো ঠোঁটটি কালচে-বাদামি।
সিঁদুরে-লাল মৌটুসি মূলত বনের পাখি। এ দেশের চিরসবুজ বন, পাতাঝরা বন, ক্ষুদ্র ঝোপ ও গরান বনে বিচরণ করে। তবে অনেক সময় গ্রাম ও শহরতলির সুমিষ্ট মধুসম্পন্ন ফুল বাগানেও ঘুরঘুর করতে দেখা যায়। এদের জিব নলাকার, যা নলাকার ফুলের নির্যাস পান করার উপযোগী। এরা পোকামাকড়ও খেতে পারে। বাচ্চাদের মাকড়সার ছোট ছোট বাচ্চা খাওয়ায়। সাধারণত একাকী বা জোড়ায় বিচরণ করে। অনেক সময় অন্যান্য প্রজাতির নীলটুনি-মৌটুসির সঙ্গেও দলে দেখা যায়। তীব্র স্বরে ‘চি—-চিই—-চিই’ শব্দে ডাকে।
এপ্রিল-জুলাই প্রজননকাল। এ সময় স্ত্রী-পুরুষ মিলে ছোট গাছ বা ঝোপঝাড়ের ঝুলন্ত সরু ডালে শিকড় বা চিকন আঁশ দিয়ে ঝুলন্ত বাসা বানায়। এদের বাসা নীলটুনির থেকে লম্বা ও চাপানো এবং দেখতে খোসা ছাড়ানো পাকা ধুন্দলের মতো। এরপর স্ত্রী শৈবাল ও মাকড়সার জাল দিয়ে বাসার ওপরে আবরণ বা লাইনিং দেয়। বাসা বানানো হলে স্ত্রী দু-তিনটি সাদা ডিম পাড়ে, যাদের চওড়া প্রান্তে গোলাপি বা লালচে ছিট থাকে। স্ত্রী একাই তা দিয়ে ১৪-১৫ দিনে বাচ্চা তোলে। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই বাচ্চাদের খাওয়ায়। বাচ্চারা ২২-২৩ দিনে বড় হয়ে যায় ও নীল আকাশে স্বপ্নের ডানা মেলে।
No comments