মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুখবরে যেন ভাটার টান না পড়ে- সংবাদ ভাষ্য

চারদলীয় জোট সরকারের পাঁচ বছর ও তাদের ধারাবাহিকতার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর দেশ একটি অন্ধকার যুগ পার করছে। এ সময়ে দেশে কেউ কোন সুখবর আশা করত না।
বরং সকলেরই শেষ অবধি এমন একটি আকাঙ্খা দেখা দিয়েছিল যে, এই অন্ধকার রাতের শেষ কবে হবে! ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮-এ দেশের সেই অন্ধকার যুগের শেষ হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বরের সকাল থেকে দেশের মানুষ সুখবরের আশা করতে শুরু করে। এর পর থেকে মানুষ একের পর এক সুখবর পেতে থাকে। যে জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছিল তা নেমে আসে। মাঝে মাঝে গত দুই বছরে কোন কোন জিনিসের দাম সামান্য বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু সরকার সেটা স্বীকার করেছে। কমানোর চেষ্টা করেছে। কমিয়েছেও। মানুষ এ সব সুখবর পেয়েছে। দেশের মানুষ এক বছরের বেশি সময় পার করে দিয়েছে একটি দুর্নীতিবিহীন মন্ত্রিসভা নিয়ে। শুধু সরকারপ্রধান নয়, দেশের মানুষও স্বীকার করে এখনও কোন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সত্যি অর্থে কেউ কোন দুর্নীতির খবর প্রকাশ করতে পারেনি। হয়ত কিছু ব্যর্থতার খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে সঙ্গে সঙ্গে সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা দেখা গেছে। বেশি ক্ষেত্রে কাটিয়ে উঠেছে। যেমন কয়েকদিন আগে চালের দাম বেড়েছিল। সরকার প্রশাসন ও দল নিয়ে এ দাম কমানোর জন্যে নেমে পড়ে। দেশের দরিদ্রজনের কাছে কম দামের চাল নিয়ে যায় খাদ্য মন্ত্রণালয়। দরিদ্রের কাছে চাল পৌঁছানোর ফলে বাজারের ওপর চাপ কমে। অন্যদিকে মজুদদাররা যাতে চাল দ্রুত বাজারে ছাড়ে এ জন্য সরকার কিছু অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়। তার ফলে বাজারে চাল চলে আসে। সব মিলিয়ে আবার চালের দাম কমতে শুরু করেছে। এ সরকারের আমলে এ অবধি দুটো ধানের ফসল উঠেছে। দুটো ফসলই ভাল হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগেই মতিয়া চৌধুরী বলেছিলেন, তাদের সরকার ক্ষমতায় এলে, সারই কৃষককে খুঁজবে। বাস্তবে সেটাই এখন ঘটছে। দীঘ ত্রিশ বছরের বেশি সময় পরে পাট মন্ত্রণালয় এবার পাটজাত দ্রব্য ও পাট বিক্রি করে লাভ করতে সমর্থ হয়েছে। এমনিভাবে এই এক বছরে সুখবরের সংখ্যা কম নয়। পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে প্রথম রাজনৈতিক সাফল্য হলো, বর্তমান সরকার দেশকে সন্ত্রাসী তালিকার দেশ থেকে মুক্ত করতে সমর্থ হয়েছে। বিশ্ববুকে বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবিরোধী, শান্তির সপক্ষ একটি দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ছিল শীতল সম্পর্ক। সেখানে শেখ হাসিনার ভারত সফর এ এলাকার কূটনৈতিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে আজ স্বীকৃত। শুধু ভারত-বাংলাদেশের জন্য নয়, এটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য সুফল বয়ে আনবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিকসহ অনেক সুফল যে এই সফর বয়ে আনবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। যেমন সম্প্রতি বিরোধীরা বলছে, তিস্তা চুক্তি হতে যাচ্ছে গঙ্গা পানি চুক্তির আদলে। অর্থাৎ বিরোধীরাও বুঝতে পেরেছে তিস্তা পানি চুক্তি খুব শীঘ্র হচ্ছে। সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের চূড়ান্ত বিচার ও সাজা কার্যকর করা হয়েছে। দীর্ঘ আটত্রিশ বছর পরে '৭১-এর নরঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য করার কাজও চূড়ান্ত করেছে সরকার। বর্তমান সরকার এত কাজ দ্রুত ও সফলভাবে করতে পারছে কেবল এজন্য যে, দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সকল মানুষ বর্তমান সরকারের পক্ষে। বলা যেতে পারে ১৯৭১-এর পরে দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে দেশের এতবেশি মানুষ আর কখনও এক হয়নি। নতুন একটি প্রজন্মের বড় অংশই আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে। তারা বর্তমান সরকারের হাত ধরে দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম চায় না, কোন মি. টেন পার্সেন্ট, কোন টাকা পাচারকারী তাদের নেতা হোক। তারা চায় না, দেশের শিক্ষাঙ্গনে থাকুক রগকাটা বাহিনী। যে কারণে সরকার যে ছাত্রশিবিরবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে, তাতে সব থেকে বেশি খুশি নতুন প্রজন্ম। তারা চায় শিক্ষাঙ্গন থেকে, সমাজ থেকে, রাজনীতি থেকে এদের উচ্ছেদ করা হোক। চিরতরে এদের নির্মূল করা হোক। তাই শত্রু বা বন্ধু বেশে যেই এ অভিযান বন্ধের কথা বলেছে, তরুণ প্রজন্ম তাদের দিকে প্রশ্নবোধক আঙ্গুল উঁচিয়েছে। বরং তারা সরকারের এই শিবিরবিরোধী অভিযানকে জাতির জন্য সুখবর হিসেবেই মনে করেছে।
বর্তমান সরকারকে এই সুখবরের নদীতে জোয়ার তুলেই এগিয়ে যেতে হবে। এখানে তাদের এ নদীতে কোন মতেই ভাটার টান আসুক সেটা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কেউই চায় না। কারণ এবার যদি কোনক্রমে সুখবরে ভাটার টান আসে তাহলে খ্তগ নেমে আসবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর। কারণ বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করার পর বিএনপি নিশ্চুপ থেকে প্রমাণ করে দিয়েছে তারা '৭৫-এর বঙ্গবন্ধু খুনীদের সপৰ শক্তি। অন্যদিকে '৭৫-এর খুনী শক্তি আছেই। এর সঙ্গে আছে '৭১-এর খুনী শক্তি। তাদের উত্তরাধিকাররা ইতোমধ্যে হুমকি দিয়েছে তারা আবার '৭১-এর মতো নরহত্যা ঘটাবে। এবার তারা প্রকাশ্যে বলেছে এক লাখ নরহত্যা ঘটাবে। এরা নরহত্যাকারীদের উত্তরাধিকার। তাই তারা এ নরহত্যা ঘটানোর চেষ্টা করবে। এদের সঙ্গে '৭৫-এর হত্যাকারী ও তাদের সহযোগীরা এসে যোগ দেবে। এদের মোকাবেলা করেই সরকারকে সুখবরের নদীতে জোয়ার রাখতে হবে। এই কাজ কোন মতেই সরকারী প্রশাসন দিয়ে এককভাবে সম্ভব নয়। এখানে সরকারের রাজনৈতিক দলকে নিতে হবে অগ্রণী ভূমিকা। বাংলাদেশের বাস্ততায় সব সময়ই দেখা গেছে প্রগতিশীল রাজনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে রাজনীতির তরুণ অংশই। বর্তমানেও সেটাই করার কথা। কারণ নতুন প্রজন্ম এই সরকারের সঙ্গে। তারপরেও দেখা যাচ্ছে, সরকারী ছাত্র সংগঠন সেখানে যথাভূমিকা পালন করতে পারছে না। বরং তারা এ অবধি এমন কিছু কাজ করেছে যাতে সুখবরের নদীতে ভাটার টান আসতে সাহায্য করে। এজন্য নতুন প্রজন্মকে দোষ দিলে ভুল হবে। ভুল হবে মাথাব্যথার নামে মাথা কেটে ফেললে। অর্থাৎ ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করলে। বরং ইতোমধ্যে যে দিকগুলো সামনে এসেছে সেগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারি বলেছেন, ছাত্রলীগের ভেতর শিবির ঢুকেছে। ছাত্রলীগে যে শিবির ঢুকেছে এ অভিযোগ বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। এখন আওয়ামী লীগকে অতি সাবধানতার সঙ্গে অথচ দ্রুত ছাত্রলীগকে জঞ্জালমুক্ত করতে হবে। অন্যদিকে ১৫ তারিখের জনকণ্ঠের নিউজে অভিযোগ আছে, সেগুনবাগিচায় বাসা এমন এক বড় নেতা ছাত্রলীগকে দূষিত করছেন। যদি সেটা সত্য হয়ে থাকে তার বিরুদ্ধে দলের সভানেত্রীর ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ এ কথা তো ঠিক, দেশের মানুষ এবার যেমন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ভোট দিয়েছে তেমনি এই শক্তির নেতা হিসেবে শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়েছে। শেখ হাসিনার সাহসের, বীরত্বের পুরস্কার হিসেবে মানুষ তাঁর হাতে ৰমতা দিয়েছে। তাই কোন নেতাই শেখ হাসিনার থেকে সাধারণ মানুষের কাছে অপরিহার্য নয়। যত বড় যেই হোন না কেন, শেখ হাসিনার সুখবরের বিরুদ্ধের কারণ যদি তিনি হন, তিনি কোন মতেই অপরিহার্য নন।
ছাত্রলীগের এই খবরের পাশাপাশি জনকণ্ঠে খবর প্রকাশিত হয়েছে বগুড়ায় মুক্তিযোদ্ধার খামার লুট করাতে সহায়তা করছে বগুড়ার আওয়ামী লীগ নেতারা। বগুড়ার জেলা আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক। যেমন অভিযোগ আছে তারা বিএনপির সঙ্গে যোগসাজশ করে, সেখানে এবার মহা ধুমধামে তারেক রহমানের জন্মদিন পালনে সহায়তা করেছে। বগুড়ার সাধারণ মানুষ ফোন করে বলেছে, তারা চায় না বগুড়াতে এভাবে তারেক রহমানের জন্মদিন পালিত হোক। তাদের অভিযোগ, এক দুর্নীতিবাজের জন্মদিন তারা এভাবে পালন হতে দিতে চায় না। অথচ সাধারণ মানুষের এই সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে বগুড়াতে এটা সম্ভব হয়েছে শুধু বগুড়া জেলার কয়েক সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতার সহায়তায়। তারা বিএনপিকে সহায়তা করেছে। প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে বলেছে। আজ যে মুক্তিযোদ্ধার খামারের ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে বিক্রি করছে_ এটাও কিন্তু ওই সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতার সহযোগিতায়। শুধু এই মুক্তিযোদ্ধা বা নরেশ কানু নয়, সেখানে এদের ইঙ্গিতে আরও অনেক জমি দখল হচ্ছে। তাদের এ কাজে সহযোগিতা করছে বিগত জোট আমলের সন্ত্রাসীরা। যশোরে যে ছাত্রলীগ নেতা খুন হয়েছে সেখানেও অভিযোগ কয়েক আওয়ামী লীগ নেতার হাত নিয়ে।
এর থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, কয়েকজনের কৃতকর্মের ফল বহন করতে হবে নতুন প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সন্তানদেরসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে। তাই এখনই সময় সজাগ হবার। কয়েক ব্যক্তির কারণে যেন সুখবরে ভাটার টান না আসে।

No comments

Powered by Blogger.