নেপথ্যে জামায়াত- নতুন নামে হিযবুত, মাঠে শতাধিক কমান্ডো by শংকর কুমার দে

 জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করার পর নাম পরিবর্তন করে দু'টি শব্দ যোগ করে 'হিযবুত তাহরীর উলাই'য়াহ্্ বাংলাদেশ' নাম দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বাধাগ্রসত্ম করতে জামায়াতে ইসলামীর সহায়তায় এই সংগঠনের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সারাদেশে। হিযবুত তাহরীর সংগঠকরা ধর্মীয় উন্মাদনায় মগজ ধোলাই করে কর্মী সংগ্রহের দুর্গ হিসেবে বেছে নিয়েছে সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ উচ্চ শিৰা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রদের। শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় ৩ ও সিলেটে ২ হিযবুতের কর্মীকে প্রচারপত্রসহ গ্রেফতার করার পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা এই ধরনের গুরম্নত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। একটি বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা ও আনত্মর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদার ছত্রছায়ায় মাঠে নেমেছে হিযবুত তাহরীর।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, ১৩ শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে হিযবুত তাহরীর উলাই'য়াহ্ বাংলাদেশ নামে সংগঠিত করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের গহীন অরণ্যে কমান্ডো বাহিনীর শতাধিক সদস্যকে ট্রেনিং দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ৫ হাজার হিযবুত কর্মী প্রকাশ্যে সরকারের বিরম্নদ্ধে বিষোদগার সংবলিত গণঅভু্যত্থান ঘটানোর ডাক দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিষপাষ্প ছড়ানোর প্রচারপত্র বিলি করছে। 'ভারত-মার্কিনের দালাল, পিলখানা হত্যাকা-ের সহযোগী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে অপসারণ করে খিলাফত রাষ্ট্র গঠনের ডাক দিয়ে পিলখানা হত্যাকা-, সামরিক বাহিনীর বিরম্নদ্ধে বিষোদগারসহ সরকার সম্পর্কে নানা মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাম্প্রাদায়িক উস্কানি দেয়া হয়েছে প্রচারপত্রে।
শুক্রবার রাজধানীর বনানীতে প্রচারপত্র বিলি করার সময়ে প্রায় ৫শ' লিফলেটসহ হাতেনাতে ধরা পড়েছে হিযবুত তাহরির কর্মী নাওয়াত আশেকিন (২২)। সে বনানী নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএ'র শেষ সেমিস্টারের ছাত্র। একই দিনে জুমার নামাজের শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে হিযবুতের লিফলেট বিলি করার সময় গ্রেফতার করা হয়েছে রাশেদ জামিল চৌধুরীকে। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। মোহাম্মদপুর সাত মসজিদের সামনে লিফলেট বিতরণের সময় গ্রেফতার করা হয়েছে ছাত্র রিয়াজকে। সে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সিএতে অধ্যয়নরত।
ঢাকার বাইরে সিলেট থেকে একই দিনে গ্রেফতার করা হয়েছে হিযবুত তাহরির দুই সদস্যকে। গ্রেফতারকৃতদের দু'জনের মধ্যে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ফরহাদ সুফি চৌধুরী। অপরজন হচ্ছে মাহফুজুর রহমান। সেও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। একই দিন কুমিলস্নায় হিযবুত তাহরির লিফলেট বিলি করার সময়ে ব্যাপক লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, জেএমবি, হুজিসহ উগ্র মৌলবাদী যেসব সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং নিষিদ্ধ করা হয়নি এমন উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের ক্যাডারদের হিযবুত তাহরীর সংগঠনের ব্যানারে একত্রিত করা হচ্ছে। হিযবুত তাহরির প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমেদকে গৃহবন্দী ও ১৩ শীর্ষ নেতা পলাতক থাকলেও তারা তৎপরতা চালাচ্ছে। সারাদেশে সংগঠনের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। পলাতক ১৩ শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গৃহবন্দী মহিউদ্দিনের জায়গায় যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে কাজী মোরশেদুল হক সক্রিয় আছেন। সংগঠনের সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিৰক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শেখ তৌফিক, গণসংযোগ সচিব হচ্ছেন প্রিন্সিপাল মাওলানা মামুনুর রশীদ, মিডিয়া ও প্রচার সচিব হচ্ছেন অধ্যাপক মুসত্মফা মিনহাজ, কার্যকরী সচিব সদস্য সাখাওয়াত হোসেন, মামুনুর রশীদ আনছারী, আহাম্মদ জামান, মনির হোসেন, সদস্য ডা. গোলাম মোসত্মফা, ডা. সাঈদ, মো. শাহাজালাল মিয়া ও মহিলা শাখার সমন্বয়ক স্থপতি ফারহানা খানম। পুলিশের চোখে তারা সবাই পলাতক। কার্যত পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে তারা হিযবুত তাহরীর সংগঠনকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলাতে হিযবুত তাহরীর কর্মীদের তৎপরতা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শুক্রবার জুমার নামাজের দিন বিভিন্ন মসজিদের সামনে হিযবুত তাহরীর নামের সঙ্গে উলাই'য়াহ্ বাংলাদেশ যোগ করে প্রকাশ্যে লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। এমনকি রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাসের যাত্রীদের কাছে ছুড়ে দেয়া হচ্ছে এই লিফলেট। অনেক সময় পুলিশের নাকের ডগায় ব্যসত্মতম সড়কে আপত্তিকর এসব লিফলেট বিলি করে চলেছে হিযবুত তাহরীর কর্মীরা।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, হিযবুত তাহরীর লিফলেট ও গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার সময়ে গ্রেফতারকৃত হিযবুত কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, তাদের অর্থের উৎস পাকিসত্মানের একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও আনত্মর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদা। হিযবুতের সঙ্গে তাদের গোপন যোগাযোগ আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরম্ন হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধীরা আইএস্আই ও আল কায়েদার সহায়তায় হিযবুতকে সংগঠিত করে চলেছে। জামায়াতে ইসলামীসহ সকল ইসলামী দল ও নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনগুলো হিযবুত তাহরীর ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। হিযবুত তাহরীর ব্যানারে উগ্র মৌলবাদী সকল জঙ্গী সংগঠন ও মদদদাতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে খিলাফত রাষ্ট্র গঠনের লৰ্যে গণঅভুু্যত্থানের উদ্দেশ্যে বড় ধরনের নাশকতা ঘটানোর নীল নকশা নিয়ে মাঠে নেমেছে।

No comments

Powered by Blogger.