আরও একটি মৃতদেহ কর্তার সিং ডুগাল অনুবাদ : by আন্দালিব রাশদী

মালকানি সাহেব শরণার্থী হিসেবে যখন সিন্ধু থেকে পালিয়ে এলেন, রাওয়াল ভবনে একটি ফ্ল্যাটের জন্য তখন থেকেই হা করে বসে আছেন। বছরের পর বছর চলে গেছে, কিন্তু তার সাফল্য আসেনি।
যে সরকারী অফিসে তিনি কাজ করছেন সেখান থেকে রাওয়াল ভবন বাসে পনেরো মিনিট। সাইকেল হলে তিন মিনিটেই এই দূরত্ব অতিক্রম করা যেত। তিনি তার আবেদনে অনেক সুপারিশ নিয়েছেন, কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছেন এবং এমনকি ঠোঁটে তাজা লিপস্টিক পরিয়ে স্ত্রীকেও তাদের আছে পাঠিয়েছেন। কারণ তিনি শুনেছেন মহিলারা কাজ দ্রুত করিয়ে আনতে পারে। কিন্তু তার বেলায় কাজ হয়নি।
মালকানি সাহেবের বসবাস দশ মাইল দূরে। সরকারী মালিকানাধীন যে অফিসে তার কাজ সেখানে ডিউটি কখনও দিনের বেলা, কখনও রাতে। বাসে চাপাচাপি করে বাজে রকম একটা সময়ে যখন তিনি বাসায় পৌঁছেন, তার অবস্থা তখন কাহিল। নিজের খাবার কিংবা নিজের স্ত্রীকে ভোগ করার মতো শক্তি আর অবশিষ্ট থাকে না। আগের দিনে ক্লান্তি ঘুচাতে না ঘুচাতেই তাকে পরের দিনের কাজে ছুটতে হয়। কখনও কখনও তার মনে হয়, পাকিস্তানে নিজের বাড়ি ছেড়ে আসার পর থেকে তার বিরামহীন ক্লান্তির যেন শেষ নেই সব সময়ই তিনি ছুটে চলেছেন।
তিনি স্বপ্ন দেখেন যদি রাওয়াল ভবনে সরকার তাকে একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয় তাহলে তার সব সমস্যা একেবারে ঘুচে যায়। এমনকি দিনের বেলায় কাজের মধ্যেও একটুখানি ফাঁকি দিয়ে ঘরে স্ত্রীর কাছে আসতে পারবেন। বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। যদি তিনি সময়মতো বাসায় পৌঁছতে পারেন তাহলে ঘরের ভেতরে যে লক্ষ আনন্দ তা তো উপভোগ করতে পারেন। এখনকার যে কাজের চাপ, তাতে তো তার স্ত্রীর চেহারা ভুলে যাবার অবস্থা। এদিকে মা যে হামেশা চিঠি লিখেই যাচ্ছেন-তিনি একটি নাতির জন্মের প্রতীক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু নরকের মতো এই শহরে, জারজীয় এ চাকরিতে থেকে তার সন্তান পয়দা করার সময় কোথায়?
শেষ পর্যন্ত ঈশ্বর তার প্রার্থনা শুনেছেন বলে মনে হলো। মালকানি সাহেব রাওয়াল ভবনে দুই রুমের একটি ফ্ল্যাটের বরাদ্দ পেলেন। তিনি আনন্দে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছেনÑ যেন তাকে একটি রাজত্ব দিয়ে দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ আদেশ পাবার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ফ্ল্যাটের দখলও নিয়ে নিলেন। মিসেস মালকানি বললেন, এখন কিন্তু তোমাকে আরও অনেক আগে বাসায় ফিরতে হবে। আবার ওভারটাইম কাজ করতে শুরু করও না।
মালকানি সাহেব স্ত্রীর কাছে প্রতিজ্ঞা করলেন। কিন্তু স্ত্রীর কথা তার মাথায় নতুন চিন্তা ঢুকিয়ে দিল। তিনি ভাবলেন : বাসে যে দীর্ঘ সময় আমি ব্যয় করি, সে সময়টা অফিসে ওভারটাইমের জন্য দিলে আমি যথেষ্ট টাকা কামাই করতে পারি। যে শরণার্থী নিজে কিছু টাকা জমাতে পারে, নামমাত্র সুদে সরকারী ঋণ নিয়ে একখ- জমি কিনে তাতে নিজের বাড়ি তৈরি করতে পারে। শহরের চারদিকে শরণার্থীরা জমি কিনে নিজেদের কলোনি স্থাপন করতে শুরু করেছে।
সেদিন থেকেই তিনি ওভারটাইম কাজ শুরু করে দিলেন। কাজের স্বাদ তাকে এতই আকৃষ্ট করে ফেলল যে, তিনি এখন আগের চেয়েও দেরিতে বাড়ি পৌঁছেন। খাওয়া বা ঘুমোনো নিয়ে তার কোন উদ্বেগ নেই।
তার ফ্ল্যাট তার অফিস, বাজার ও বাচ্চাদের স্কুলের খুব কাছে। তিনি খুব নিরাপদ বোধ করলেন। এখন যদি বাচ্চার জন্ম হয় তার স্কুল নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। বাসে করে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো তিনি পছন্দ করে নাÑ বিশেষ করে তরুণীদের। যে কোনভাবেই হোক তার মনে নিশ্চিত ধারণা হয়েছে তাদের প্রথম সন্তানটি মেয়েই হতে যাচ্ছে। কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গে একটু আয়েশ করার সময় যে তার নেই। সকাল-সন্ধ্যা সব সময় তো অফিসেই।
রাওয়াল ভবনে একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া মানে একটা বড় কিছু অধিকার করা। যারা একবার বরাদ্দ পেয়েছে, তারা কখনও ছেড়ে যায় না। সেখানে তাদের ছেলেমেয়ের জন্ম হয়, বাচ্চারা সেখান বড় হয়, তাদের বিয়ে হয়, তারাও আবার বাচ্চা পয়দা করতে শুরু করে। এমনকি কারও যখন পদোন্নতি হয়, যখন আরও বড় বাসার অধিকার জন্মে, তখনও তারা যায় না। কেরানি, আন্ডার-সেক্রেটারি, ডেপুটি সেক্রেটারি সকলেই তাদের ফ্ল্যাট ধরে রেখেছে। সকলেই ঘোষণা দিয়েছেন : ‘কেবল আমার লাশ এই বাড়ি ছেড়ে যাবে।’
কয়েক মাস ধরে একটি দুর্ভাগ্যজনক দুর্দৈবের কবলে পড়ে আছে এই রাওয়াল ভবনÑ প্রতি সপ্তাহেই কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে। কখনও এই তলায় কখনও অন্য তলায় বিলাপ লেগেই আছে। রাওয়াল কোন সাধারণ ভবন নয়; আট তলা এ দুর্গে ২০০ পরিবারের বসবাসÑ একটি পরিপূর্ণ পাড়াই বলা যায়।
তাপরও প্রতিটি পরিবার পরস্পরের কাছে আগন্তুকের মতই। পাশের দরজার পেছনে কে বাস করে কেউ জানে না। প্রত্যেকেই যার যার কাজ আর নিজের ছোট্ট পৃথিবী নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু যখন কোন পরিবারের দুর্যোগ এসে পড়ে, অধিবাসীদের সকলেই যার যার খোলস থেকে বেরিয়ে এসে সহানুভূতি জানিয়ে আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। তাদের ছেলেমেয়েরা সারাদিনই খেলাধুলা নিয়ে আছে কিন্তু তাদের বাবা-মাদের নিজেদের মধ্যে দেখা-সাক্ষাত নেই।
গত সপ্তাহে নিচের দিকের একটি তলা থেকে একটি মৃতদেহ সরানো হয় তার আগের সপ্তাহে উপরের দিকে একটি তলা থেকে। মালকানি সাহেব ভেবেছেন দু’টো ফ্ল্যাটে গিয়ে সমবেদনা জানিয়ে আসবেন, কিন্তু সময়ে কুলোয়নি। তিন দিন কাজ করেছেন নাইট শিফটে। সারারাত কাজ করে নাশতার জন্য বাসায় এসেছেন, সারা দিনভর ঘুমিয়েছেন। সন্ধ্যায় জেগে উঠেন, তাড়াহুড়ো করে মুখে খাবার পুরে দেন। দ্রুত অফিসে ছোটেন।
তারপর এক রাতে ...।
রাতে কাজ করার সময় তিনি হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলেন। মাথা ব্যথা শুরু হলো, রেগে গেলে উত্তাপও বেড়ে যায়। অনিচ্ছাতেই তিনি কাজ রেখে বাড়ি ফিরে গেলেন। তাকে এ রকম ছুটি নিতে দেখে তার সহকর্মীরা অবাক হয়। বছরের পর বছর গেলÑ তিনি এমন তো কখনও করেননি।
তিনি একটি স্কুটার ভাড়া করে মধ্যরাতে বাড়ি পৌঁছলেন। গোটা ভবনটি অন্ধকার, ঘুমে ভেঙ্গে পড়েছে। লিফটম্যান সামনের খোলা আঙ্গিনায় ঘুমিয়ে। পাহারাদারও দেয়ালে শরীর ঠেকিয়ে ঝিমুচ্ছে। মালকানি সাহেবের পায়ের আওয়াজ শুনে একটি ইঁদুর কোন এক ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে ভোঁ দৌড় দিয়ে অন্য ফ্ল্যাটে ঢুকে যায়। মালকানি সাহেব কাউকে বিরক্ত করতে চাননি। তিনি লিফটে উঠে বোতাম টেপেন এবং পাঁচ তলায় পৌঁছে যান।
লিফট তার ফ্ল্যাটের সামনেই থামে। এতক্ষণ তিনি যে কোন ধরনের শব্দ করা এড়িয়ে যেতে পেরেছেন, কিন্তু এখন তো দরজায় টোকা দিতে হবে। প্রতিবেশীরা বিরক্ত হতেও পারেন কিন্তু তার তো টোকা না দিয়ে কোন উপায় নেই। তার স্ত্রী নিশ্চয়ই এখন গভীর ঘুমে, দরজায় টোকা দিয়েই তো তাকে জাগাতে হবে।
কিন্তু তিনি দরজায় হাত দিতেই তা খুলে গেল। এটা কী করে সম্ভব? তিনি আবার ঘর থেকে বাইরে এসে ফ্ল্যাটের নম্বর পরীক্ষা করলেন। ঠিকই আছে, এটা তারই। তিনি বেডরুমে ঢুকলেন। মশারি সরিয়ে দেখলেন তার স্ত্রী সত্যি ঘুমোচ্ছেনÑঅন্য একজন পুরুষ মানুষের সঙ্গে!
তিনি একী দেখলেন? তার মাথা ঘুরে গেল এবং অন্ধকার তাকে ঘিরে ধরল। তিনি হঠাৎ তার পায়ের জুতো খুলে ঘুমন্ত আগন্তুকের মাথায় সজোরে আঘাত করলেন। ঘুমন্ত প্রেমিক হতবুদ্ধি অবস্থায় লাফিয়ে ওঠে দ্রুত তার কাপড় জড়ো করে বাথরুমের ভেতরে দিয়ে পেছনের সিঁড়ি ভেঙ্গে ধুপধাপ শব্দ করতে করতে নেমে যায়। একই জুতো দিয়ে মালকানি সাহেব এবার তার স্ত্রীকে পেটাতে শুরু করেন। শুরু হয় চিৎকার ও হৈ চৈ। প্রতিবেশীরা তাদের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। পাহারাদার ও লিফটম্যানও ওপরে উঠে। কেউ একজন ‘চোর! চোর!’ বলে চিৎকার দেয়, অন্য একজন এমনই কিছু একটা বলে।
ক্রোধান্ধ মালকানি সাহেব তার স্ত্রীকে অবিরাম মেরেই চলে। জনতা তার ঘরের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং নিরীহ বেচারিকে স্বামীর হাত থেকে রক্ষা করে।
মালকানি সাহেব দাঁত ঘষটান এবং জুতো দিয়ে আবার তার স্ত্রীকে আঘাত করতে থাকেন। প্রতিবেশীরা তাকে পেছনে টেনে রাখতে চেষ্টা করে। তারপর সবারই জানা হয়ে যায় বেডরুমে এতক্ষণ কী হচ্ছিল। তাদের ফিসফিসানি, মাথা ঝুকানি এবং ঘুরঘুর করা অব্যাহত থাকে।
মালকানি সাহেব বজ্রকণ্ঠে চেঁচিয়ে ওঠেন : ‘আমি এই বেশ্যাকে খুন করবই!’ লোকজন ভাবল তারা চলে গেলে মেয়েলোকটিকে সত্যিই মেরে ফেলবে। মিসেস মালকানি কাপড় দিয়ে মুখম-ল ঢেকে ফেললেন, তার মনে হলো পৃথিবী দু’ভাগে হয়ে তাকে গিলে ফেলুক।
এই হৈচৈয়ের মধ্যে সকাল হলো
একী উত্তেজনা! প্রতিবেশীরা বাকি রাত আর ঘুমোতে পারেনি। ক’দিন আগে উপরের তলায় যখন একজন তরুণ পাঞ্জাবির মৃত্যু হয় একই রকম বিলাপ ও চিৎকারে তারা সমবেত হয়। একেবারে নিচের তলায় একজন মারোয়াড়ি মহিলার মৃত্যু হলে সারা রাতের চিৎকার প্রতিবেশীদের জাগিয়েই রাখে। আর আজ রাতে এই সিন্ধি পরিবার অদ্ভুত ও বাজে একটা নাটক করে ফেলল। প্রতিবেশীরা সিদ্ধান্ত নিতে পারল না তাদের সহানুভূতি কার দিকে যাবেÑ মালকানি সাহেবের দিকে, যিনি তার স্ত্রীকে ভিন্ন এক পুরুষের সাথে হাতেনাতে ধরে ফেলেছেন নাকি মিসেস মালকানির দিকে যিনি উন্মত্ত স্বামীর হাতের মার খেয়েছেন এবং লজ্জায় মরে যাচ্ছেন।
কিছুক্ষণের মধ্যে ভবনের কেয়ারটেকার এসে হাজির হলো। এই লোকটি মোটাসোটা উপজাতীয় পাঠান, চামড়া মোড়ানো লাঠি ঘোরাতে ঘোরাতে এসেছে। তাকে অনুসরণ করেছে একটি ভয়াবহ এ্যালসিশিয়ান। কেয়ারটেকার চিৎকার করে উঠল : ‘এটা কি বেশ্যখানা? এটা সরকারী ভবন পতিতালয় নয়। আল্লাহই জানেন কোত্থেকে এই বেশ্যার দালাল আর বদমাস এসে এখানে ওঠেছে? মালকানি সাহেব আপনার জিনিপত্র যা কিছু আছে নিয়ে এখনই এই ভবন ছেড়ে যান। আমি টেলিফোনে আদেশ নিয়ে নিয়েছি। এক ঘণ্টার মধ্যে এ ফ্ল্যাট ছাড়তে হবে, নতুবা পুলিশ এসে ঘাড় ধরে নামাবে। এ কী শয়তানের রাজত্ব! সারারাত কেউ এক ফোঁটা ঘুমোতে পারেনি। সরকারী ভবনে তো এ ধরনের দুশ্চরিত্র মানুষকে থাকতে দেয়া যায় না।’
কথা বলতে বলতে তার মুখ দিয়ে ফেনা বেরিয়ে আসে। নারী-পুরুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কেয়ারটেকার তার বক্তৃতা চালিয়ে যায় মালকানি সাহেব, আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? এটা তো ভালো মানুষের পাড়া, বেশ্যাপাড়া নয়।
খোঁচা খোঁচা গোঁফেন এই কেয়ারটেকার মালমানি সাহেবকে বের করে দেবার প্রতীক হিসেবে ভেতর থেকে একটি চেয়ার টেনে আনে।
সাহস সঞ্চয় করে মালকানি সাহেব বিস্ময় ভরা কণ্ঠে বললেন, ‘থামুন থামুন খান সাহেব। এমন ফেটে পড়ছেন কেন? ভেতরের কাহিনীটা কি?’
‘ভেতরের কাহিনী? আপনার স্ত্রী বেগানা এক পুরুষের সাথে ঘুমোচ্ছিল। আপনি হাতেনাতে ধরে পাড়া জাগিয়ে তুলেছেন। গোটা ভবনে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে?’
‘মিথ্যে, সব মিথ্যে। আমি আর আমার স্ত্রী একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া করছিলাম। বিবাহিত এমন কোন দম্পতি আছে ঝগড়া করে না? আলমারিতে দুটো পাতিল রাখলেও তো একটার সাথে অন্যটার ধাক্কা লাগে। শব্দ হয়। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমার প্রতিবেশীরা তো ঈষায় জ্বলছে। আমাদের ফ্ল্যাট থেকে বের করে দিতে চায় যাতে তাদের কারোর আত্মীয়ের নামে বরাদ্দ নিতে পারে। এখানে কিছুই হয়নি। আমার স্ত্রী মতো এমন চমৎকার একজন ভদ্রমহিলার নামে কুৎসা রটানো তো রীতিমতো পাগলের কা-। এসব লোকের নিজেদের স্ত্রী ও মেয়ে নেই?’
এতগুলো কথা মালকানি সাহেব এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন, ক্রোধে তার চোখ লাল হয়ে আছে। জনতার ভিড় ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাগড়া কেয়ারটেকার এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখেÑ সে ছাড়া আর সবাই চলে গেছে।
মালকানি সাহেব যখন তার গরম বক্তৃতা শেষ করেন কেয়ারটেকার একাই তার সামনে দাঁড়িয়ে। আশপাশে প্রতিবেশী মহলে মর্গের নীরবতা। সবাই যেন মৃত নিথর। কেয়ারটেকার তার মাথা ঝুলিয়ে বিস্মত হয়ে চলে গেল। কেয়ারটেকার একেবারে ওপর তলায় নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে যাচ্ছে। যাবার সময় শুনল রাওয়াল ভবনের নিবাসীরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে :
‘এই ভবনে আমাদের জীবনটা ভালোই। কিন্তু যখন কেউ মারা যায় রাতে আর কেউ ঘুমোতে পারে না।
‘গত রাতে পাঁচ তলায় কেউ মারা গেছে। আজ আরও একটি মৃতদেহ ...।’
[বলবন্ত গার্গির ইংরেজী অনুবাদ থেকে গল্পটি বাংলায় ভাষান্তরিত। কর্তার সিং ডুগাল (১ মার্চ ১৯১৭-২৬ জানুয়ারি ২০১২) খ্যাতিমান ভারতীয় কথাসাহিত্যেক। পাঞ্জাবি, হিন্দি, উর্দু ও ইংরেজীতে লিখতেন। একাডেমী পুরস্কার ও পদ্মাভূষণ খেতাব প্রাপ্ত। তাঁর উপন্যাস ২টি, গল্পগ্রš' ৭টি। নাটক ও কবিতাও লিখেছেন।]

No comments

Powered by Blogger.