দেশের মান বাঁচাল মেয়েরাই- স্বর্ণ শিকারে অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ, মোট ১৪ by মজিবর রহমান
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেন ফুঁসে উঠছেন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা। তবে সব ইভেন্টে নয়। কারাতে ও তায়কোয়ান্ডোতেই চমকটা বেশি গত দু'দিনে। এর বাইরে সাফল্য বলতে শূটিং ও গলফে। যদিও স্বর্ণপদকের সূচনা করেন ভারোত্তোলক হামিদুল ইসলাম।
বাংলাদেশের নাম লেখান পদক তালিকায়। রবিবার সবচেয়ে বেশি ছয়টি স্বর্ণপদক জয় করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে চারটি কারাতের, একটি তায়কোয়ান্ডোতে এবং অপরটি ক্রিকেটে। গতকাল রবিবার গেমসে প্রথমবারের মতো সংযোজিত টি২০ ক্রিকেটের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ৬ রানে হারায় বাংলাদেশ। এদিন, ব্যক্তিগত দু'টি স্বর্ণপদক জিতে স্বর্ণকন্যা হিসেবে সবুজ জমিনে লালসূর্য আঁকা পতাকা উড়িয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের সুরে মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন বান্দরবানের লামা এলাকার মেয়ে কারাতেকা জা উ প্রম্ন। ফলে প্রতিযোগিতার দশম দিন শেষে বাংলাদেশের স্বর্ণ পদক সংখ্যা দাঁড়াল ১৪। অর্থাৎ টার্গেট স্পর্শ করতে প্রয়োজন আর মাত্র ৩টি স্বর্ণ। যে বিভাগ থেকেই আসুক গেমস শুরম্নর আগে আয়োজক কমিটির পৰে ১৭ স্বর্ণ জয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, টার্গেটের মধ্যে থাকা অন্যতম বিষয়ের মধ্যে হতাশ করে চলেছে সাঁতার ও এ্যাথলেটিক্স। তা না হলে স্বর্ণ শিকারে অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার দিনে আনন্দটা আরেকটু বেশি হতে পারত বাংলাদেশের। প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে ঢাকা সাফ গেমসে সর্বাধিক ১১টি স্বর্ণপদক জয় করেছিল বাংলাদেশ। অবশ্য আজকের দিনটিসহ হাতে আরও দুই দিন সময় রয়েছে স্বর্ণপদকের রেকর্ডটাকে আরেকটু সমৃদ্ধ করার।মেয়েদের নিয়েই এবার প্রত্যাশা ছিল বেশি। প্রত্যাশা আর বাসত্মবতার মাঝে দাঁড়িয়ে অবশেষে রবিবার পুরম্নষদের ছাড়িয়ে গেলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। স্বর্ণ শিকারে মেয়েদের সাফল্য এবার ঈর্ষণীয়। এসএ গেমসের দশম দিনে বাংলাদেশের ঝুলিতে জমা পড়া মোট ১৪ স্বর্ণপদকের বেশিরভাগই গলায় ঝুলিয়েছেন মেয়েরা। এককে মেয়েদের স্বর্ণসংখ্যা দশটি। আগের দিন পাওয়া তিনটি স্বর্ণপদকের দু'টিই জয় করেন মেয়েরা। সেই ধারাবাহিকতায় গতকাল বাংলাদেশ আরও যে ৬টি স্বর্ণপদক লাভ করে তার মধ্যে চারটি মেয়েদের। এর মধ্যে ৪টি স্বর্ণপদকই কারাতের দলগত ও ব্যক্তিগত বিভাগে। অপর দু'টি তায়কোয়ান্ডো ও ক্রিকেটে। তায়কোয়ান্ডোতে স্বর্ণ জয় করেন স্বর্ণকন্যা শাম্মি আকতার। মিরপুর সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে আলোকিত কারাতেকাদের দারম্নণ সাফল্য খবরের শিরোনাম হয়ে ওঠে দেশব্যাপী। এককে স্বর্ণপদক জয় করেন বাংলাদেশের জো উ প্রম্ন ও মরিয়ম খাতুন। মেয়েদের দলগত বিভাগের স্বর্ণও প্রম্নদের। অন্যদিকে এককে পুরম্নষরা ব্যর্থ হলেও দলগত স্বর্ণপদক ঠিকই পেয়েছেন। এসএ গেমস বা তৎকালীন সাফ গেমসে শূটিংয়ের বাইরে বাংলাদেশের মেয়েদের স্বর্ণ সাফল্য ছিল না। স্বর্ণপদক দূরের কথা, রৌপ্যের সংখ্যাও হাতে গোনা। কিন্তু দেশের মাটিতে এবার বাজিমাত করার পাশাপাশি খেলাধুলায় মেয়েদের যে অগ্রগতি হয়েছে সেই প্রমাণ রাখলেন শূটার শারমিন আকতার রত্নার পাশাপাশি তায়কান্ডোকা শারমিন ফারজানা রম্নমি, শাম্মি আকতার, ইতি ইসলাম (উশু), কারাতেকা জো উ প্রম্ন, মরিয়ম খাতুন এককভাবে দেশকে স্বর্ণপদক উপহার দিয়ে। এককে পুরম্নষদের চেয়ে মেয়েদের স্বর্ণপ্রাপ্তি প্রায় তিনগুণ বেশি। এককে পুরম্নষদের দুই স্বর্ণ জয়ী হলেন ভারোত্তোলক হামিদুল ইসলাম ও গলফার দুলাল হোসেন। ১৪ স্বর্ণপদকের আটটি এককে। আর দলগত স্বর্ণের মধ্যে রয়েছে শূটিং ও তায়কোয়ান্ডোতে দু'টি করে এবং ক্রিকেট, গলফে একটি। দলগত বিভাগের পাঁচ স্বর্ণপদকের দু'টি পেয়েছেন মেয়েরা শূটিং ও তাকোয়ান্ডোতে। মেয়েদের প্রাপ্তিটা আরও সমৃদ্ধ হতো গেমসের এ্যাথলেটিক্স ও সাঁতারে প্রত্যাশার সঙ্গে বাসত্মবতার মিল ঘটাতে পারলে। কিন্তু গেমসের অন্যতম আকর্ষণ সাঁতার ও এ্যাথলেটিক্সে পুরম্নষদের পাশাপাশি মেয়েদের পারফরমেন্স একেবারেই হতাশজনক। এর মধ্যে সাঁতারে সাফল্য বলতে দু'টি রৌপ্য মাহফুজা আকতারের। কিন্তু এ্যাথলেটিক্সের অবস্থা লজ্জাজনক, কোনক্রমে ব্রোঞ্জ। তাও নগণ্য। গতকালের প্রাপ্তির মধ্যে রয়েছে হকিতে ব্রোঞ্জ, শ্রীলঙ্কাকে ২-১ গোলে হারিয়ে।
স্বর্ণপদকের কোনটাকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। সব অর্জনই সমান মর্যাদার। কিন্তু তারপরও গেমসের সবচেয়ে দামী স্বর্ণ হিসবে চিহ্নিত ফুটবল। যার লড়াইয়ে আজ ভাগ্য পরীৰা বাংলাদেশের। প্রতিপৰ আফগানিসত্মানের বিরম্নদ্ধে ফুটবলের ফাইনালে বাংলাদেশ আজ মাঠে নামবে স্বর্ণ জয়ের প্রত্যাশায়। আত্মবিশ্বাসী দলের অধিনায়ক আমিনুল। উলেস্নখ্য, দীর্ঘ দশ বছর অপেৰার পর ফুটবলের ফাইনালে উঠেছে এবার বাংলাদেশ। সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে কাঠম-ুতে ফাইনালে ওঠে এবং স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে সাফ গেমসে প্রথমবারের মতো স্বর্ণপদক জয় করেছিলেন ফুটবলাররা। এরপর আর সুযোগ হয়নি বা যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি ফাইনালে খেলার। কাজেই নিজ মাটিতে এবার স্বর্ণ জিততে মরিয়া স্বাগতিক ফুটবলাররা। প্রতিপৰ হিসাবে আফগানিসত্মানকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। যোগ্যতর দল হিসাবে আফগানরাও ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশের মতোই অপরাজিত থেকে। কাজেই টাফ ম্যাচ হবে। প্রাপ্ত সুযোগের সদ্ব্যবহার ও চাপমুক্ত খেলা খেলতে পারলে আফগানদের হারানো সম্ভব_ এই অভিমত গোলরৰক, তথা অধিনায়ক আমিনুলের। ঢাকায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের তুলনায় গেমসের দল বেশ গোছাল, সুবিন্যসত্ম। টিম স্পিরিট চমৎকার, ম্যাচ বের করার মতো দৰতা দলটির রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের দলপতি। তবে আমিনুল তার অভিজ্ঞতার আলোকে যে হিসাব-নিকাশই দাঁড় করান প্রতিপৰ আফগান দলটিও বিগত সময়ের তুলনায় অনেক পরিণত। দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের বসবাস ইউরোপে। জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের জুনিয়র ডিভিশনে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের। দলটির খেলার ধরন অনেকটা ইউরোপীয় ধাঁচের। তার ওপর দৈহিক গড়ন, ফিটনেসে আফগানরাই এগিয়ে। এখন টেকনিক-ট্যাকটিস দিয়ে বাংলাদেশ কতটুকু সফল হতে পারে, সময়ই তা ভাল বলতে পারবে। তবে ধুন্ধুমার লড়াই হবে_ এতে কোন সন্দেহ নেই।
No comments